ঢাকা ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যা যদি কোরবানির আগে না হয়ে পরে হতো, তখন কোন পয়সা বাঁচিয়ে দান করতেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৫১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অগাস্ট ২০১৭
  • ৪১৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনো চোখ নেই, জ্ঞান-বুদ্ধি কিংবা বোধ নেই। আর তাই বাংলাদেশে যখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, তখন সেটা সবার উপর দিয়েই যায়। দেশ জুড়ে বর্তমানে ভয়াল বন্যা। আচ্ছা, এমনটা কি হয়েছে যে- এই বন্যায় হিন্দুর বাড়ি তলিয়েছে কিন্তু মুসলিমের বাড়ি তলায়নি? কিংবা দরিদ্রের কুঁড়েঘর তলিয়েছে কিন্তু বন্যার্ত এলাকায় ধনীর পাকা দালান তলায়নি? কালো চামড়ার মানুষের ফসলি জমি ভেসে গিয়েছে কিন্তু সাদা চামড়ার মানুষের সাধের গোলাপ বাগান তলায়নি? হয়েছে এমনটা? না, হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে না, জাতিকে ভাগ করে না। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই সুন্দর দেশটায় বসবাসরত সরল মানুষদের ভাগ করেনি কোনো বন্যা, বরং ভাগ করেছি আমি, আপনি ও আমরা। ‘কোরবানি না দিয়ে সেই টাকা বন্যার্তদের দান করুন’- এমন আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই। তাদের প্রতি একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া যায়- আচ্ছা, বন্যা যদি কোরবানির ঈদের পর দেশে হানা দিত, তাহলে আপনারা কী আহ্বান করতেন? তো সেই আহ্বান এখন করতে দোষ কোথায়? আমি বলছি না যে- এই প্রশ্নটি আমার মাথা থেকে এসেছে। আজ কাজের অবসরে ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে চোখ আটকে গেল জনপ্রিয় উপস্থাপক ও টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা আব্দুন নূর তুষারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। কোরবানি ও বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা যখন মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই বাহাসের অঙ্কুরকে বৃদ্ধি হতে দিলে হয়তো দেশের এই বন্যার্ত অবস্থার দিকে নজর না দিয়ে- মানুষ নিজেদের মধ্যে হানাহানি করেই অপচয় করে দিত বর্তমানের অতি প্রয়োজনীয় মানবতার সেবায় পাশে দাঁড়ানোর মূল্যবান সময়কে। আর তাই ‘কোরবানির না দিয়ে বন্যার্তদের সহায়তায় তারকাদের আহ্বান’- এর যুক্তিখণ্ডন করতে হাওর বার্তাকে নিয়েছিল মাওলানা মিরাজের মতামত। সেই সংবাদ আপনারা পড়েছেন এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসাও করেছেন। সে জন্য হাওর বার্তাকে তাদের পাঠকদের কাছে কৃতজ্ঞ।

যাহোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বন্যার্তদের সহায়তার প্রসঙ্গে আব্দুন নূর তুষার একটি পোস্ট লিখেছেন নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। পড়ে দেখুন তো আপনাদের মনঃপুত হয় কি না? ভালো না লাগলে সংবাদের নিচে তো কমেন্ট বক্স রয়েছেই। সেখানে জানাতে পারবেন নিজেদের মতামত। সবারই রয়েছে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাষায় নিজ নিজ মত প্রকাশের অধিকার। উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার লিখেছেন- ‘কোরবানি মুসলিমদের একটি ইবাদত বা উপাসনা। এটি যাদের কোরবানি দেওয়ার সংগতি আছে, তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। তাই এটির কোনো বদলি বা এটির পরিবর্তে আসুন টাকাটা অন্য কোথাও দিই এধরনের কথা বলা অযৌক্তিক এবং অবিমৃষ্যকারিতা। আপনি বন্যার্তদের টাকা দিতে চাইলে সেটা আলাদাভাবে দান করতে হবে। কোরবানি না দিয়ে টাকাটা বন্যার্তদের দিই, এটি বলার কোনো সুযোগ নেই। দান করতে চাইলে দান করতেই পারেন। সেটা করতে হবে চিকেন ফ্রাইয়ের টাকা বাঁচিয়ে, ফাইভ স্টারের ডিনারের টাকার বদলে অথবা আপনার উদ্বৃত্ত থেকে। মনে করুন, বন্যা যদি কোরবানির আগে না হয়ে পরে হতো। তখন কোন পয়সা বাঁচিয়ে দান করতেন? অন্যান্য বছর যখন বন্যা হয়েছে তখন আমরা কোন পয়সা থেকে দান করেছি? তখন যেখান থেকে করেছি, সেখান থেকেই দান করতে হবে। মুসলিমদের ইবাদত না করে সেটা দান করার কোন সুযোগ নাই। প্রকৃত মুসলিম দুটোই করবেন। ইবাদতও করবেন, দানও করবেন। এটি তাকে শেখাতে হয় না’।

পরিশেষে বলছি- প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে বিবেচনা বোধ। তাই- কে কীভাবে দান করবেন সেটি নিতান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে অনুরোধ একটাই- বন্যার্তদের কিন্তু প্রচুর সাহায্য সহযোগিতা দরকার। অনুগ্রহ করে সেই সহায়তা করতে পিছু পা হবেন না। মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ দিতে পারে না?

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যা যদি কোরবানির আগে না হয়ে পরে হতো, তখন কোন পয়সা বাঁচিয়ে দান করতেন

আপডেট টাইম : ০৮:৫১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনো চোখ নেই, জ্ঞান-বুদ্ধি কিংবা বোধ নেই। আর তাই বাংলাদেশে যখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, তখন সেটা সবার উপর দিয়েই যায়। দেশ জুড়ে বর্তমানে ভয়াল বন্যা। আচ্ছা, এমনটা কি হয়েছে যে- এই বন্যায় হিন্দুর বাড়ি তলিয়েছে কিন্তু মুসলিমের বাড়ি তলায়নি? কিংবা দরিদ্রের কুঁড়েঘর তলিয়েছে কিন্তু বন্যার্ত এলাকায় ধনীর পাকা দালান তলায়নি? কালো চামড়ার মানুষের ফসলি জমি ভেসে গিয়েছে কিন্তু সাদা চামড়ার মানুষের সাধের গোলাপ বাগান তলায়নি? হয়েছে এমনটা? না, হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে না, জাতিকে ভাগ করে না। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই সুন্দর দেশটায় বসবাসরত সরল মানুষদের ভাগ করেনি কোনো বন্যা, বরং ভাগ করেছি আমি, আপনি ও আমরা। ‘কোরবানি না দিয়ে সেই টাকা বন্যার্তদের দান করুন’- এমন আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই। তাদের প্রতি একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া যায়- আচ্ছা, বন্যা যদি কোরবানির ঈদের পর দেশে হানা দিত, তাহলে আপনারা কী আহ্বান করতেন? তো সেই আহ্বান এখন করতে দোষ কোথায়? আমি বলছি না যে- এই প্রশ্নটি আমার মাথা থেকে এসেছে। আজ কাজের অবসরে ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে চোখ আটকে গেল জনপ্রিয় উপস্থাপক ও টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা আব্দুন নূর তুষারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। কোরবানি ও বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা যখন মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই বাহাসের অঙ্কুরকে বৃদ্ধি হতে দিলে হয়তো দেশের এই বন্যার্ত অবস্থার দিকে নজর না দিয়ে- মানুষ নিজেদের মধ্যে হানাহানি করেই অপচয় করে দিত বর্তমানের অতি প্রয়োজনীয় মানবতার সেবায় পাশে দাঁড়ানোর মূল্যবান সময়কে। আর তাই ‘কোরবানির না দিয়ে বন্যার্তদের সহায়তায় তারকাদের আহ্বান’- এর যুক্তিখণ্ডন করতে হাওর বার্তাকে নিয়েছিল মাওলানা মিরাজের মতামত। সেই সংবাদ আপনারা পড়েছেন এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসাও করেছেন। সে জন্য হাওর বার্তাকে তাদের পাঠকদের কাছে কৃতজ্ঞ।

যাহোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বন্যার্তদের সহায়তার প্রসঙ্গে আব্দুন নূর তুষার একটি পোস্ট লিখেছেন নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। পড়ে দেখুন তো আপনাদের মনঃপুত হয় কি না? ভালো না লাগলে সংবাদের নিচে তো কমেন্ট বক্স রয়েছেই। সেখানে জানাতে পারবেন নিজেদের মতামত। সবারই রয়েছে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাষায় নিজ নিজ মত প্রকাশের অধিকার। উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার লিখেছেন- ‘কোরবানি মুসলিমদের একটি ইবাদত বা উপাসনা। এটি যাদের কোরবানি দেওয়ার সংগতি আছে, তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। তাই এটির কোনো বদলি বা এটির পরিবর্তে আসুন টাকাটা অন্য কোথাও দিই এধরনের কথা বলা অযৌক্তিক এবং অবিমৃষ্যকারিতা। আপনি বন্যার্তদের টাকা দিতে চাইলে সেটা আলাদাভাবে দান করতে হবে। কোরবানি না দিয়ে টাকাটা বন্যার্তদের দিই, এটি বলার কোনো সুযোগ নেই। দান করতে চাইলে দান করতেই পারেন। সেটা করতে হবে চিকেন ফ্রাইয়ের টাকা বাঁচিয়ে, ফাইভ স্টারের ডিনারের টাকার বদলে অথবা আপনার উদ্বৃত্ত থেকে। মনে করুন, বন্যা যদি কোরবানির আগে না হয়ে পরে হতো। তখন কোন পয়সা বাঁচিয়ে দান করতেন? অন্যান্য বছর যখন বন্যা হয়েছে তখন আমরা কোন পয়সা থেকে দান করেছি? তখন যেখান থেকে করেছি, সেখান থেকেই দান করতে হবে। মুসলিমদের ইবাদত না করে সেটা দান করার কোন সুযোগ নাই। প্রকৃত মুসলিম দুটোই করবেন। ইবাদতও করবেন, দানও করবেন। এটি তাকে শেখাতে হয় না’।

পরিশেষে বলছি- প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে বিবেচনা বোধ। তাই- কে কীভাবে দান করবেন সেটি নিতান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে অনুরোধ একটাই- বন্যার্তদের কিন্তু প্রচুর সাহায্য সহযোগিতা দরকার। অনুগ্রহ করে সেই সহায়তা করতে পিছু পা হবেন না। মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ দিতে পারে না?