ঢাকা ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংসারের অভাব মুছে ঘুরে দাঁড়ানো কামরুন্নাহারের গল্প

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১৪:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
  • ৩০৮ বার

 হাওর বার্তা ডেস্কঃ  দরিদ্র পিতার সংসারে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত ছিলেন কামরুন্নাহার। বিয়ের প্রথম দিনেই তার দেখা স্বপ্ন ফানুস হয়ে উড়ে যায়। সংসার জীবনে প্রবেশ করে দেখেন তরিতরকারি ব্যবসায়ী স্বামী বিল্লাল হোসেনের সংসারের চারদিকে অভাব।

ঋণের বোঝা নিয়ে লোকজন থেকে নিজেকে সারাক্ষণ আড়াল করে রাখে বিল্লাল। অভাবের কারণে সংসারেও সারা দিন লেগে থাকে ঝগড়াঝাটি। বিয়ের মাত্র ৫ বছরের মাথায় যখন সে তিন সন্তানের মা তখন সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় মুষড়ে পড়ে কামরুন নাহার।

অভাব আর অপুষ্টিতে বেড়ে উঠা সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তায় পাগলপ্রায় মা কামরুন নাহারের ভিতরে জাগ্রত হয় ‘অভাব মুছে ফেলার’ দৃঢ় সংকল্প। এরপর থেকেই শ্রাবণ ধারার মতো তার সংসারে শুরু হয় সুখের বৃষ্টিপাত।

২০১২ সাল। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহার যখন অভাবের সাগরে হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন সাবিলা আফরোজ আর আতিক নামে দুজন এনজিও কর্মীর পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় ব্র্যাকের ইইপি প্রকল্পের অধীনে গবাদি পশু পালনের উপর প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ধারদেনা করে একটি গাভী কিনে আনেন। যত্ন

দিয়ে শুরু করেন গাভী পালন।

প্রত্যাশিত দুধ দেয়া শুরু করলো নিয়মিত। মাত্র এক বছর পরে ব্র্যাকের ইইপি প্রকল্পের অধীনে দরিদ্র নারী হিসেবে কমিউনিটি ইম্পাওয়ারমেন্ট গ্রুপের সদস্যও নির্বাচিত হয়ে গেল কামরুন্নাহার। ২০১৩ সালে এক বছরের দুধ বিক্রির সঞ্চিত টাকা, কিছু এনজিও ঋণ আর কিছু ধারদেনা করে গড়ে তুলেন একটি খামার। সেখানে দুটি অস্ট্রেলিয়ার প্রজাতির দুধেল গাভী লালনপালন শুরু করেন তিনি।

বছর গুরতেই দুটি গাভী বাছুরসমেত ৪টি হয়ে যায়। আর দৈনিক ৪০-৪৫ লিটার দুধ পাওয়া শুরু করেন। প্রতিদিন সকল খরচা গিয়েও তার দুধ বিক্রি থেকে ১৪০০-১৫০০ টাকা আয় হতে থাকে। এবার তিনি স্বামীকে প্রস্তাব দেন তার টুকটাক তরকারির ব্যবসা ছেড়ে তার সঙ্গে খামার দেখাশোনার জন্য। লাভবান থেকে স্বামী বিল্লালও অমত করলো না আর। এরপর স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে শুরু করেন খামারের দেখাশোনা।

বর্তমানে কামরুন্নাহারের খামারে ৫টি দুধেল গাভী ও ৩টি বাছুর রয়েছে। এর সবগুলোই অস্ট্রেলিয়ার প্রজাতির। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লিটার দুধ পাচ্ছেন কামরুন্নাহার। মাসে স্বামী-স্ত্রীর আয় লাখ টাকার উপরে। এরমাঝে ঘটেছে অনেক পরিবর্তন। ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন’ প্রবাদ সত্য করেছেন কামরুন্নাহার।

ঋণমুক্ত হওয়ার পর আয়ের টাকা দিয়ে পাকা বাড়ি তৈরিসহ কিনেছেন টেলিভিশন, সেলাই মেশিন, রেফ্রিজেটরসহ দামি সব আসবাবপত্র। তার তিন সন্তান লেখাপাড়া করে যাচ্ছেন ভালো স্কুলে। প্রাইভেট শিক্ষক বাড়ি এসে পড়াচ্ছেন সন্তান দেন। এখন তারা অপুষ্টিতে ভোগে না। অভাবের জন্য করতে হয় না ঝগড়া। সংসারে এখন তাই স্বামীর কাছে কামরুন্নাহারের মতামতের এখন বেশ গুরুত্ব।

এ ব্যাপারে কামরুন্নাহার বলেন, ৪ বছর আগে অনেক অভাব-অনটনের মধ্যে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে দিনযাপন করতে হতো। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। খুবই ভালোভাবে চলছে আমার এই সংসার ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়া। তিনি তার এই পরিবর্তনের জন্য ব্র্যাকের ইইপি প্রকল্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি পরিবারে স্বামীর পাশাপাশি যদি স্ত্রী কোনো না কোনো কাজ করে তাহলে আমাদের দেশে একসময় আর অভাব থাকবে না। কামরুন্নাহার বলেন, বলেই কেবল আত্মপ্রত্যয়ের অভাবেই সংসারের অভাব দূর করা যায় না। কিছু করার প্রত্যয় যদি কারো মনে মজবুতভাবে গড়ে উঠে তার সংসারে কোনো অভাব থাকতে পারে না বলে দাবি করেন কামরুন নাহার। এমজমিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সংসারের অভাব মুছে ঘুরে দাঁড়ানো কামরুন্নাহারের গল্প

আপডেট টাইম : ০৮:১৪:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭

 হাওর বার্তা ডেস্কঃ  দরিদ্র পিতার সংসারে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত ছিলেন কামরুন্নাহার। বিয়ের প্রথম দিনেই তার দেখা স্বপ্ন ফানুস হয়ে উড়ে যায়। সংসার জীবনে প্রবেশ করে দেখেন তরিতরকারি ব্যবসায়ী স্বামী বিল্লাল হোসেনের সংসারের চারদিকে অভাব।

ঋণের বোঝা নিয়ে লোকজন থেকে নিজেকে সারাক্ষণ আড়াল করে রাখে বিল্লাল। অভাবের কারণে সংসারেও সারা দিন লেগে থাকে ঝগড়াঝাটি। বিয়ের মাত্র ৫ বছরের মাথায় যখন সে তিন সন্তানের মা তখন সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় মুষড়ে পড়ে কামরুন নাহার।

অভাব আর অপুষ্টিতে বেড়ে উঠা সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তায় পাগলপ্রায় মা কামরুন নাহারের ভিতরে জাগ্রত হয় ‘অভাব মুছে ফেলার’ দৃঢ় সংকল্প। এরপর থেকেই শ্রাবণ ধারার মতো তার সংসারে শুরু হয় সুখের বৃষ্টিপাত।

২০১২ সাল। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহার যখন অভাবের সাগরে হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন সাবিলা আফরোজ আর আতিক নামে দুজন এনজিও কর্মীর পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় ব্র্যাকের ইইপি প্রকল্পের অধীনে গবাদি পশু পালনের উপর প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ধারদেনা করে একটি গাভী কিনে আনেন। যত্ন

দিয়ে শুরু করেন গাভী পালন।

প্রত্যাশিত দুধ দেয়া শুরু করলো নিয়মিত। মাত্র এক বছর পরে ব্র্যাকের ইইপি প্রকল্পের অধীনে দরিদ্র নারী হিসেবে কমিউনিটি ইম্পাওয়ারমেন্ট গ্রুপের সদস্যও নির্বাচিত হয়ে গেল কামরুন্নাহার। ২০১৩ সালে এক বছরের দুধ বিক্রির সঞ্চিত টাকা, কিছু এনজিও ঋণ আর কিছু ধারদেনা করে গড়ে তুলেন একটি খামার। সেখানে দুটি অস্ট্রেলিয়ার প্রজাতির দুধেল গাভী লালনপালন শুরু করেন তিনি।

বছর গুরতেই দুটি গাভী বাছুরসমেত ৪টি হয়ে যায়। আর দৈনিক ৪০-৪৫ লিটার দুধ পাওয়া শুরু করেন। প্রতিদিন সকল খরচা গিয়েও তার দুধ বিক্রি থেকে ১৪০০-১৫০০ টাকা আয় হতে থাকে। এবার তিনি স্বামীকে প্রস্তাব দেন তার টুকটাক তরকারির ব্যবসা ছেড়ে তার সঙ্গে খামার দেখাশোনার জন্য। লাভবান থেকে স্বামী বিল্লালও অমত করলো না আর। এরপর স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে শুরু করেন খামারের দেখাশোনা।

বর্তমানে কামরুন্নাহারের খামারে ৫টি দুধেল গাভী ও ৩টি বাছুর রয়েছে। এর সবগুলোই অস্ট্রেলিয়ার প্রজাতির। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লিটার দুধ পাচ্ছেন কামরুন্নাহার। মাসে স্বামী-স্ত্রীর আয় লাখ টাকার উপরে। এরমাঝে ঘটেছে অনেক পরিবর্তন। ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন’ প্রবাদ সত্য করেছেন কামরুন্নাহার।

ঋণমুক্ত হওয়ার পর আয়ের টাকা দিয়ে পাকা বাড়ি তৈরিসহ কিনেছেন টেলিভিশন, সেলাই মেশিন, রেফ্রিজেটরসহ দামি সব আসবাবপত্র। তার তিন সন্তান লেখাপাড়া করে যাচ্ছেন ভালো স্কুলে। প্রাইভেট শিক্ষক বাড়ি এসে পড়াচ্ছেন সন্তান দেন। এখন তারা অপুষ্টিতে ভোগে না। অভাবের জন্য করতে হয় না ঝগড়া। সংসারে এখন তাই স্বামীর কাছে কামরুন্নাহারের মতামতের এখন বেশ গুরুত্ব।

এ ব্যাপারে কামরুন্নাহার বলেন, ৪ বছর আগে অনেক অভাব-অনটনের মধ্যে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে দিনযাপন করতে হতো। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। খুবই ভালোভাবে চলছে আমার এই সংসার ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়া। তিনি তার এই পরিবর্তনের জন্য ব্র্যাকের ইইপি প্রকল্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি পরিবারে স্বামীর পাশাপাশি যদি স্ত্রী কোনো না কোনো কাজ করে তাহলে আমাদের দেশে একসময় আর অভাব থাকবে না। কামরুন্নাহার বলেন, বলেই কেবল আত্মপ্রত্যয়ের অভাবেই সংসারের অভাব দূর করা যায় না। কিছু করার প্রত্যয় যদি কারো মনে মজবুতভাবে গড়ে উঠে তার সংসারে কোনো অভাব থাকতে পারে না বলে দাবি করেন কামরুন নাহার। এমজমিন