হাওর বার্তা নিউজঃ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ (বায়ার্স ক্রেডিট) নেওয়ার হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় মুদ্রার ঋণ চাহিদা কমার পেছনে বায়ার্স ক্রেডিট বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। আর ব্যবসায়ীদের অভিমত, ব্যবসার খরচ কমানোর জন্য শিল্পোদ্যোক্তারা বায়ার্স ক্রেডিটের দিকে ঝুঁকছেন।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের কাছ থেকে আগে বাকিতে পণ্য কিনতেন এ দেশের আমদানিকারকরা। এতে আমদানিকারকরা পণ্যের দর-দাম করার সুযোগ পেতেন না। গত ২০১২ সালের পর থেকে পণ্য আমদানিতে ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ (বায়ার্স ক্রেডিট) নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন আমদানিকারকরা। এরপর থেকে এই ঋণ গ্রহণের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। গত এপ্রিল মাস শেষে দেখা গেছে, বায়ার্স ক্রেডিটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮২ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৩৮৯ কোটি ডলার। অর্থাত্ গত এক বছরে এর পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার বা ৪৯ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগে কখনো এত বেশি বায়ার্স ক্রেডিট নেওয়া হয়নি।
বায়ার্স ক্রেডিট হচ্ছে দেশের আমদানিকারকের বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া ঋণ। দেশের কোনো আমদানিকারক মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে আমদানিকারক স্থানীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি সাপেক্ষে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ওই পণ্য আমদানি করতে পারেন। এক্ষেত্রে সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। কোনো ঋণের সুদহার কেবল ৬ শতাংশের বেশি হলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয় ব্যাংকগুলোর। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এসব ঋণের মেয়াদ এক বছর, আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে মেয়াদ ৬ মাস। এ কারণে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই ঋণ শোধ হতে থাকে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যবসায়ীদের এই ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। পরের মাস থেকেই শুরু হয় এই ঋণ গ্রহণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিদেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদহার অনেক কম। সেক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদের নিচেও বায়ার্স ক্রেডিট নিতে পারছেন আমদানিকারকরা। তবে বড়-বড় দেশি কয়েকটি ব্যাংক বায়ার্স ক্রেডিট দিচ্ছে। যদিও পরিমাণ তা খুব সামান্য। আমদানিকারদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ পাওয়ার সুযোগ পণ্যমূল্য নির্ধারণে নেগোশিয়েট করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে দেশি আমদানিকারকদের খরচ কমছে। আগে বিক্রেতাদের কাছ থেকে বাকি করে পণ্য কেনা হতো। এ জন্য বিক্রেতাদের নির্ধারিত দামেই পণ্য কিনতে বাধ্য ছিলেন আমদানিকারকরা। অনেকটা সাশ্রয়ী বলে বায়ার্স ক্রেডিট দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংক খাতে এক লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত আছে যা বিনিয়োগ করা যাচ্ছেনা। অবশ্য ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া অনুযায়ী ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে (১০ শতাংশ) নামলেও পারিপার্শ্তিক অন্যান্য কারণে ঋণের চাহিদা বাড়ছে না। সর্বশেষ হিসাবে মে মাসে ব্যাংকগুলো গড় ঋণের সুদহার ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তবে শিল্প খাতের এখনো সর্বোচ্চ ১৬-১৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করছে কোনো-কোনো ব্যাংক। বায়ার্স ক্রেডিটের মতো স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদহার ব্যাংকভেদে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত।
আমাদানিকারকরা বলছেন, পণ্য আমদানিতে দেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তার সুদ অনেক বেশি। কিন্তু বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদহার দেশভেদে ৩ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। এতে বায়ার্স ক্রেডিট ব্যবসার খরচ কমিয়ে দিচ্ছে। তবে এক ধরনের ঝুঁকিও রয়েছে। ঋণ পরিশোধের সময় যদি বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দামের অবমূল্যায়ন হয় তবে আমদানিকারকের খরচ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বায়ার্স ক্রেডিট আমদানিকারকদের জন্য সুবিধা দিলেও তা দেশের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। যে হারে এ ঋণ বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।