ঢাকা ০৩:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন বছরেও উদ্ধার হয়নি হলমার্কের টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০১৫
  • ৩৩৫ বার

তিন বছরেও কোনো সুরাহা হলো না সোনালী ব্যাংকের আলোচিত অর্থ জালিয়াতির ঘটনা হলমার্ক কেলেঙ্কারির। ২০১০ ও ২০১২ সালের মে পর্যন্ত আত্মসাৎ হওয়া সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আজও ফেরত পায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। অনেক দেনদরবার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে মাত্র ৪১০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ। এদিকে আত্মসাৎ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে হলমার্কের কর্ণধার তানভীর মাহমুদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়া থেমে থাকলেও থেমে নেই হলমার্কের ব্যবসা-বাণিজ্য। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে প্রায় এক ডজন কারখানা চালু রেখেছেন জামিনে ছাড়া পাওয়া হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন’র।

অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে বিভিন্ন সময় চিঠি চালাচালি হলেও টাকা উদ্ধারের জন্য বাস্তবধর্মী কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না এখনো। উল্টো ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য জনগণের করের টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থবিভাগ। আবার সোনালী ব্যাংকের হাতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় কোনো কার্যকর আইনি পদক্ষেপও নিতে পারছে না। ফলে প্রায় পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে টাকা উদ্ধার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হলমার্ক গ্রুপের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৪১০ কোটি টাকা পেয়েছে সোনালী ব্যাংক। বাকি ২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা আদায়ে কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না তারা। এর মধ্যে মাত্র ২২ কোটি টাকা আদায়ের জন্য হলমার্কের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে তিনটি মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চলছে আরও ২৩টি মামলার কার্যক্রম। দুদকের এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে। এসব মামলার সঙ্গে টাকা উদ্ধারের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থঋণ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া মানেই টাকা উদ্ধারকে দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন শীর্ষ ব্যাংকাররা। তারা বলেছেন, মামলার মাধ্যমে টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এগোচ্ছে তাতে টাকা উদ্ধার হবে বলে মনে হয় না। তবে এক্ষেত্রে হলমার্কের সব সম্পত্তি ক্রোক করা যেতে পারে কিন্তু সেখানেই আইনি বাধা হতে পারে। এ ছাড়া হলমার্কের অন্য ব্যবসায়িক পার্টনারদেরও ধরা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে টাকা আদায়ে আদালতে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ নেই সোনালী ব্যাংকের হাতে। জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার কারণে সোনালী ব্যাংকের কাছে দলিলাদি নেই। তবে এ মামলা নিষ্পত্তি হলে মাত্র ২২ কোটি টাকা পাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অথচ সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, বোর্ডের সিদ্ধান্তে মামলা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত গতকাল মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এটা এখন দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে চলে গেছে। টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনা খুব কম। তবে ৪১০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। আরও কিছু টাকা পাওয়া যেতে পারে। সমস্যা হলো আমরা মামলা করলে তারা স্টে অর্ডার নিয়ে আসে। প্রথমদিকে মনে করা হয়েছিল সমঝোতার মাধ্যমে টাকা আদায় করা যাবে। পরবর্তীতে হলমার্ক গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাতেও সাড়া মেলেনি। ফলে সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলার মাধ্যমে টাকা আদায়ের নিশ্চয়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ছাড়া আর কী করার আছে। তবে গ্রুপটির বিষয় সম্পত্তি যা আছে সেগুলো কীভাবে ক্রোক করা যায় সে বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা হলমার্ক গ্রুপ বেশ ভালোভাবেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রুপটির ১১টি তৈরি পোশাক কারখানা সচল আছে। ভাড়ায় অন্য গ্রুপের কাজ করছে কোম্পানিগুলো। বাড়ি, গাড়ি সবই সচল রয়েছে। অসুবিধা শুধু দুটি- ঋণপত্র খুলতে না পারা, আর মালিক তানভীর মাহমুদের কারাবাস। দৃশ্যমান এই অসুবিধার আড়ালে সুবিধাও কম নয়। ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে নেওয়া দুই হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করার কোনো তাগিদ নেই। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পাওয়ায় বন্ধক রাখা জমি ও কারখানা নিলামে ওঠারও ভয় নেই। নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন জামিনে মুক্ত হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তানভীরের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম। মুনাফার বড় অংশ ব্যয় করছেন নানা তদবিরে, স্বামীকে মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে। জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে সোনালী ব্যাংকের গত ও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি গত বছর ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো মামলাও করেনি। তানভীরসহ হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের যে গুটিকয়েক আসামি গ্রেফতার হয়েছে, তা মূলত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অর্থমন্ত্রী চিঠি লেখেন সোনালী ব্যাংককে। গত ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলে সোনালী ব্যাংক জানিয়েছে। কিন্তু অনিয়ম সংঘটনের দীর্ঘদিন পরও এখনো পর্যন্ত কেন মামলাগুলো দায়ের করা হয়নি এবং কবে দায়ের করা হবে তা জানানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। অর্থমন্ত্রীর এই চিঠির সন্তোষজনক কোনো জবাবও দিতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। এ নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দলীয় রাজনীতিবিদদের চাপে হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সোনালী ব্যাংকের দুই ডিএমডির একজন আতিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হলেও অন্য ডিএমডি মাইনুল হক ও এমডি হুমায়ূন কবির গ্রেফতার হননি। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন বছরেও উদ্ধার হয়নি হলমার্কের টাকা

আপডেট টাইম : ০৬:১৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০১৫

তিন বছরেও কোনো সুরাহা হলো না সোনালী ব্যাংকের আলোচিত অর্থ জালিয়াতির ঘটনা হলমার্ক কেলেঙ্কারির। ২০১০ ও ২০১২ সালের মে পর্যন্ত আত্মসাৎ হওয়া সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আজও ফেরত পায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। অনেক দেনদরবার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে মাত্র ৪১০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ। এদিকে আত্মসাৎ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে হলমার্কের কর্ণধার তানভীর মাহমুদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়া থেমে থাকলেও থেমে নেই হলমার্কের ব্যবসা-বাণিজ্য। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে প্রায় এক ডজন কারখানা চালু রেখেছেন জামিনে ছাড়া পাওয়া হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন’র।

অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে বিভিন্ন সময় চিঠি চালাচালি হলেও টাকা উদ্ধারের জন্য বাস্তবধর্মী কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না এখনো। উল্টো ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য জনগণের করের টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থবিভাগ। আবার সোনালী ব্যাংকের হাতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকায় কোনো কার্যকর আইনি পদক্ষেপও নিতে পারছে না। ফলে প্রায় পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে টাকা উদ্ধার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হলমার্ক গ্রুপের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৪১০ কোটি টাকা পেয়েছে সোনালী ব্যাংক। বাকি ২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা আদায়ে কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না তারা। এর মধ্যে মাত্র ২২ কোটি টাকা আদায়ের জন্য হলমার্কের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে তিনটি মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চলছে আরও ২৩টি মামলার কার্যক্রম। দুদকের এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে। এসব মামলার সঙ্গে টাকা উদ্ধারের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থঋণ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া মানেই টাকা উদ্ধারকে দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন শীর্ষ ব্যাংকাররা। তারা বলেছেন, মামলার মাধ্যমে টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এগোচ্ছে তাতে টাকা উদ্ধার হবে বলে মনে হয় না। তবে এক্ষেত্রে হলমার্কের সব সম্পত্তি ক্রোক করা যেতে পারে কিন্তু সেখানেই আইনি বাধা হতে পারে। এ ছাড়া হলমার্কের অন্য ব্যবসায়িক পার্টনারদেরও ধরা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে টাকা আদায়ে আদালতে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ নেই সোনালী ব্যাংকের হাতে। জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার কারণে সোনালী ব্যাংকের কাছে দলিলাদি নেই। তবে এ মামলা নিষ্পত্তি হলে মাত্র ২২ কোটি টাকা পাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অথচ সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, বোর্ডের সিদ্ধান্তে মামলা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত গতকাল মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এটা এখন দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে চলে গেছে। টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনা খুব কম। তবে ৪১০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। আরও কিছু টাকা পাওয়া যেতে পারে। সমস্যা হলো আমরা মামলা করলে তারা স্টে অর্ডার নিয়ে আসে। প্রথমদিকে মনে করা হয়েছিল সমঝোতার মাধ্যমে টাকা আদায় করা যাবে। পরবর্তীতে হলমার্ক গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাতেও সাড়া মেলেনি। ফলে সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলার মাধ্যমে টাকা আদায়ের নিশ্চয়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ছাড়া আর কী করার আছে। তবে গ্রুপটির বিষয় সম্পত্তি যা আছে সেগুলো কীভাবে ক্রোক করা যায় সে বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা হলমার্ক গ্রুপ বেশ ভালোভাবেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রুপটির ১১টি তৈরি পোশাক কারখানা সচল আছে। ভাড়ায় অন্য গ্রুপের কাজ করছে কোম্পানিগুলো। বাড়ি, গাড়ি সবই সচল রয়েছে। অসুবিধা শুধু দুটি- ঋণপত্র খুলতে না পারা, আর মালিক তানভীর মাহমুদের কারাবাস। দৃশ্যমান এই অসুবিধার আড়ালে সুবিধাও কম নয়। ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে নেওয়া দুই হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করার কোনো তাগিদ নেই। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পাওয়ায় বন্ধক রাখা জমি ও কারখানা নিলামে ওঠারও ভয় নেই। নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন জামিনে মুক্ত হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তানভীরের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম। মুনাফার বড় অংশ ব্যয় করছেন নানা তদবিরে, স্বামীকে মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে। জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে সোনালী ব্যাংকের গত ও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি গত বছর ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো মামলাও করেনি। তানভীরসহ হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের যে গুটিকয়েক আসামি গ্রেফতার হয়েছে, তা মূলত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অর্থমন্ত্রী চিঠি লেখেন সোনালী ব্যাংককে। গত ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলে সোনালী ব্যাংক জানিয়েছে। কিন্তু অনিয়ম সংঘটনের দীর্ঘদিন পরও এখনো পর্যন্ত কেন মামলাগুলো দায়ের করা হয়নি এবং কবে দায়ের করা হবে তা জানানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। অর্থমন্ত্রীর এই চিঠির সন্তোষজনক কোনো জবাবও দিতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। এ নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দলীয় রাজনীতিবিদদের চাপে হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সোনালী ব্যাংকের দুই ডিএমডির একজন আতিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হলেও অন্য ডিএমডি মাইনুল হক ও এমডি হুমায়ূন কবির গ্রেফতার হননি। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।