ঢাকা ০৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্ধুত্বের আড়ালে সু্ন্দরী মডেলদের সাপ্লাই করতো নাঈম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১০:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০১৭
  • ২৫৯ বার

দেশের নামিদামি অনেক মডেলের বন্ধু সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ। পেশাগতভাবে প্রোডাকশন হাউজ ইমেকার্স বাংলাদেশে কাজ করার সুবাধে নাঈম আশরাফের মডেল কানেকশন ছিল প্রবল। সুন্দরী হলেই কথা নেই। অল্প সময়ে মিশে যেতো নাঈম। কারণে-অকারণে ফোনে যোগাযোগ করতো। এভাবেই গড়ে তুলতো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের আড়ালে মূলত মডেলদের সাপ্লাই করতো নাঈম। মডেল কালেকশনের জন্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ধনীর দুলাল, রাজনৈতিক দলের নেতা ও কিছু কর্মকর্তার দরবারে ডাক পড়তো নাঈম আশরাফের। এই কারণেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদের সঙ্গে। তাছাড়াও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিল নাঈম আশরাফ। উচ্চবিত্ত একটি শ্রেণির কাছে ইয়াবা সরবরাহ ছাড়াও মডেল-অভিনেত্রীদের নিয়ে পার্টিতে মদ-ইয়াবা সেবন করতো তারা।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের মামলার দুই প্রধান আসামির বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। সাফাত ও নাঈমের কললিস্টে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই অনেক মডেলের সঙ্গে কথা হতো তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে নাঈম জানিয়েছে, এসব মডেল মূলত তার বন্ধু। বন্ধুতার কারণেই অনেকের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছে বলেও স্বীকার করেছে সে। মডেলদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের ছবি রয়েছে তার। অরিজিৎ সিং ও নেহা কাক্কারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মডেল, শিল্পী ও অভিনেত্রীদের নজের আসে নাঈম। অনেকের সঙ্গেই ভালো বন্ধুতা গড়ে উঠে তার। নাঈমের মাধম্যেই সাফাতের সঙ্গে যোগাযোগ হয় অনেক মডেল কন্যার। এমনকি নামকরা বেশ কয়েক মডেলকে আপন জুয়েলার্সের অ্যাম্বাসেডর হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আমন্ত্রণ করেছিল নাঈম।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এক মডেল জানান, ডিনারের ইনভাইট করা হয়েছিল তাকে। ঘটনাটি গত এপ্রিলের। গুলশান-২ এর একটি রেস্টুরেন্টে যান তিনি। সেখানে নাঈম ও সাফাত দুজনেই ছিল। রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর জুয়েলার্সের অ্যাম্বাসেডর হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে তারা নানা প্রসঙ্গে কথা বলছিল। সাফাত তখন জানিয়েছিল, সে নিঃসঙ্গ। তার কোনো কাছের বান্ধবী নেই। নাঈম তখন ওই মডেলকে সাফাতের সঙ্গে গুলশানের একটি হোটেলে রাতের পার্টিতে অংশগ্রহণের অনুরোধ করে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ওই মডেল আর সেই পার্টিতে অংশ নিতে পারেনি। তবে ফোনে প্রায়ই কথা বলতো নাঈম ও সাফাত। ফোনে সাফাতের হয়ে আপত্তিকর প্রস্তাবও দিয়েছিল ওই মডেলকে। ওই প্রস্তাবের পর পিছিয়ে যান ওই মডেল। তিনি বলেন, নাঈম তার বিত্তশালী বন্ধুর মনোরঞ্জনের জন্য আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।

নাঈম আশরাফের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু জানান, গত ১৬ই মার্চ চট্টগ্রামে গিয়েছিল নাঈম। সেখানে তার সঙ্গে দেশের এক পরিচিত মডেলকে দেখা গেছে। একই হোটেলে উঠেছিল নাঈমের আরেক বন্ধু। তার সঙ্গে ছিল তার গার্লফ্রেন্ড। তারা কয়েকদিন সেখানে ছিল। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ঘুরেছিল তারা।

সূত্রমতে, মডেলদের সঙ্গে সাফাতকে ফোনে কথা বলিয়ে দিতো নাঈম। সাফাতের সঙ্গে ডিনারের আমন্ত্রণ করা হতো। মডেলদের অনেকের সঙ্গে মনোরঞ্জনের পর নগদ টাকা, নানা গিফট দিতো সাফাত। কোনো কোনো তরুণীর ক্ষেত্রে ঘটেছে ভিন্নতা। প্রেমের অভিনয় করে তাদের বেডরুম পর্যন্ত নিতে হয়েছে সাফাতকে।
সাফাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এমন একজন মডেল সম্পর্কে জানা গেছে, তার বাসাতে নাঈম আশরাফকে নিয়ে প্রায় যাওয়া আসা করতো সাফাত আহমেদ। ওই মডেলকে সবচেয়ে বড় অঙ্কের টাকা দিতে হতো সাফাতের। ঢাকায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন পার্টিতে আসতে চাইতো না ওই মডেল। ওই মডেলকে আরো কয়েক জনের সঙ্গে মনোরঞ্জনে ব্যবহার করেছিল নাঈম। বেশির ভাগ সময় তাকে নিয়ে বিদেশে যেতে হতো।

গত বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর ‘নেহা কাক্কার লাইভ ইন ঢাকা’ ও গত বছরের ১০ই মার্চ ঢাকার ‘অরিজিৎ সিং সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা’ শিরোনামের কনসার্টের আয়োজনে সম্পৃক্ত ছিল নাঈম আশরাফ। অরিজিৎ সিংয়ের অনুষ্ঠানে সাফাতের সঙ্গে কয়েক মডেলকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল নাঈম আশরাফ। ওই রাতে নাঈম ও তার এক বন্ধু বনানীর হোটেল সেরিনার একটি কক্ষে ছিল। তাদের সঙ্গে উদীয়মান একজন মডেলও ছিল।

এসব বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নানা তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে মামলা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার গাড়ি চালক বিল্লাল, গানম্যান রহমত, সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ ও নির্যাতিতা দুই তরুণীর বন্ধু সাদমান সাকিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৮ই মে এ ঘটনায় সাফাত ও সাকিফ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তার আগে ১৭ই মে রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের চান্দেরবাজার থেকে পুলিশ নাঈম আশরাফকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন থেকে সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছে নাঈম আশরাফ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্ধুত্বের আড়ালে সু্ন্দরী মডেলদের সাপ্লাই করতো নাঈম

আপডেট টাইম : ১১:১০:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০১৭

দেশের নামিদামি অনেক মডেলের বন্ধু সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ। পেশাগতভাবে প্রোডাকশন হাউজ ইমেকার্স বাংলাদেশে কাজ করার সুবাধে নাঈম আশরাফের মডেল কানেকশন ছিল প্রবল। সুন্দরী হলেই কথা নেই। অল্প সময়ে মিশে যেতো নাঈম। কারণে-অকারণে ফোনে যোগাযোগ করতো। এভাবেই গড়ে তুলতো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের আড়ালে মূলত মডেলদের সাপ্লাই করতো নাঈম। মডেল কালেকশনের জন্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ধনীর দুলাল, রাজনৈতিক দলের নেতা ও কিছু কর্মকর্তার দরবারে ডাক পড়তো নাঈম আশরাফের। এই কারণেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদের সঙ্গে। তাছাড়াও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিল নাঈম আশরাফ। উচ্চবিত্ত একটি শ্রেণির কাছে ইয়াবা সরবরাহ ছাড়াও মডেল-অভিনেত্রীদের নিয়ে পার্টিতে মদ-ইয়াবা সেবন করতো তারা।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের মামলার দুই প্রধান আসামির বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। সাফাত ও নাঈমের কললিস্টে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই অনেক মডেলের সঙ্গে কথা হতো তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে নাঈম জানিয়েছে, এসব মডেল মূলত তার বন্ধু। বন্ধুতার কারণেই অনেকের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছে বলেও স্বীকার করেছে সে। মডেলদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের ছবি রয়েছে তার। অরিজিৎ সিং ও নেহা কাক্কারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মডেল, শিল্পী ও অভিনেত্রীদের নজের আসে নাঈম। অনেকের সঙ্গেই ভালো বন্ধুতা গড়ে উঠে তার। নাঈমের মাধম্যেই সাফাতের সঙ্গে যোগাযোগ হয় অনেক মডেল কন্যার। এমনকি নামকরা বেশ কয়েক মডেলকে আপন জুয়েলার্সের অ্যাম্বাসেডর হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আমন্ত্রণ করেছিল নাঈম।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এক মডেল জানান, ডিনারের ইনভাইট করা হয়েছিল তাকে। ঘটনাটি গত এপ্রিলের। গুলশান-২ এর একটি রেস্টুরেন্টে যান তিনি। সেখানে নাঈম ও সাফাত দুজনেই ছিল। রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর জুয়েলার্সের অ্যাম্বাসেডর হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে তারা নানা প্রসঙ্গে কথা বলছিল। সাফাত তখন জানিয়েছিল, সে নিঃসঙ্গ। তার কোনো কাছের বান্ধবী নেই। নাঈম তখন ওই মডেলকে সাফাতের সঙ্গে গুলশানের একটি হোটেলে রাতের পার্টিতে অংশগ্রহণের অনুরোধ করে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ওই মডেল আর সেই পার্টিতে অংশ নিতে পারেনি। তবে ফোনে প্রায়ই কথা বলতো নাঈম ও সাফাত। ফোনে সাফাতের হয়ে আপত্তিকর প্রস্তাবও দিয়েছিল ওই মডেলকে। ওই প্রস্তাবের পর পিছিয়ে যান ওই মডেল। তিনি বলেন, নাঈম তার বিত্তশালী বন্ধুর মনোরঞ্জনের জন্য আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।

নাঈম আশরাফের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু জানান, গত ১৬ই মার্চ চট্টগ্রামে গিয়েছিল নাঈম। সেখানে তার সঙ্গে দেশের এক পরিচিত মডেলকে দেখা গেছে। একই হোটেলে উঠেছিল নাঈমের আরেক বন্ধু। তার সঙ্গে ছিল তার গার্লফ্রেন্ড। তারা কয়েকদিন সেখানে ছিল। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ঘুরেছিল তারা।

সূত্রমতে, মডেলদের সঙ্গে সাফাতকে ফোনে কথা বলিয়ে দিতো নাঈম। সাফাতের সঙ্গে ডিনারের আমন্ত্রণ করা হতো। মডেলদের অনেকের সঙ্গে মনোরঞ্জনের পর নগদ টাকা, নানা গিফট দিতো সাফাত। কোনো কোনো তরুণীর ক্ষেত্রে ঘটেছে ভিন্নতা। প্রেমের অভিনয় করে তাদের বেডরুম পর্যন্ত নিতে হয়েছে সাফাতকে।
সাফাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এমন একজন মডেল সম্পর্কে জানা গেছে, তার বাসাতে নাঈম আশরাফকে নিয়ে প্রায় যাওয়া আসা করতো সাফাত আহমেদ। ওই মডেলকে সবচেয়ে বড় অঙ্কের টাকা দিতে হতো সাফাতের। ঢাকায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন পার্টিতে আসতে চাইতো না ওই মডেল। ওই মডেলকে আরো কয়েক জনের সঙ্গে মনোরঞ্জনে ব্যবহার করেছিল নাঈম। বেশির ভাগ সময় তাকে নিয়ে বিদেশে যেতে হতো।

গত বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর ‘নেহা কাক্কার লাইভ ইন ঢাকা’ ও গত বছরের ১০ই মার্চ ঢাকার ‘অরিজিৎ সিং সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা’ শিরোনামের কনসার্টের আয়োজনে সম্পৃক্ত ছিল নাঈম আশরাফ। অরিজিৎ সিংয়ের অনুষ্ঠানে সাফাতের সঙ্গে কয়েক মডেলকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল নাঈম আশরাফ। ওই রাতে নাঈম ও তার এক বন্ধু বনানীর হোটেল সেরিনার একটি কক্ষে ছিল। তাদের সঙ্গে উদীয়মান একজন মডেলও ছিল।

এসব বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নানা তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে মামলা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার গাড়ি চালক বিল্লাল, গানম্যান রহমত, সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ ও নির্যাতিতা দুই তরুণীর বন্ধু সাদমান সাকিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৮ই মে এ ঘটনায় সাফাত ও সাকিফ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তার আগে ১৭ই মে রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের চান্দেরবাজার থেকে পুলিশ নাঈম আশরাফকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন থেকে সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছে নাঈম আশরাফ।