সুনামগঞ্জের হাওরে এবার আবাদকৃত ধানের ৯০ ভাগেরও বেশি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন তিন লাখেরও বেশি কৃষক পরিবার। তাদের সহায়তায় সরকার দেড়লাখ পরিবারকে তিন মাসের জন্য ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকার বিশেষ সহায়তার যে ঘোষণা দিয়েছে।
সরকারি সেই সহায়তা এলাকাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির ভিত্তিতে দেওয়া হবে না বরং পুরো জেলায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে উপকারভোগীর তালিকা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের ঘুরে দাঁড়াবার সরকারি এই উদ্যোগ খুব একটা ফলপ্রসু হবে না বলে ধারণা করছেন ফসলহারা মানুষ। জনসংখ্যার অনুপাতে তালিকা পাঠানোর খবরে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে আগাম বন্যায় ফসলহারা কৃষেকের মাঝে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ বোরো চাষীদের অনুকূলে সরকারি এই সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান তারা।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সুনামগঞ্জ সফর করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে সুনামগঞ্জের দেড় লাখ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে তিন মাসের জন্য এই সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেয় ত্রাণ মন্ত্রনালয়।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন কর্তৃক ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকায় দেখা যায়, জনসংখ্যা বেশি থাকায় সর্বনিম্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন উপজেলায় সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ছাতক উপজেলায় ৩৬১০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেলেও এই উপজেলায় সরকারি সহায়তা পাবেন ২২ হাজার পরিবার। অপরদিকে শতভাগ বোরা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শাল্লা উপজেলায় ১৫১১৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেলেও সরকারি সহায়তা পাবে মাত্র ৮ হাজার পরিবার। জনসংখ্যার অনুপাতে দেড় লাখ মানুষের এই তালিকা করা হয়েছে জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪ টি পৌরসভার জন্য। জেলার চার পৌরসভায় ১৪ হাজার পরিবার হাওরের জন্য বরাদ্দ সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের পাঠানো চিঠিতে দেড় লাখ পরিবারের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেখানে, ছাতকে ২২ হাজার, সুনামগঞ্জে সদরে ১৮ হাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ১৩ হাজার, জগন্নাথপুরে ১৭ হাজার, দিরাইয়ে ১৭ হাজার, শাল্লায় ৮ হাজার, দোয়ারাবাজারে ১৩ হাজার, জামালগঞ্জে ৯ হাজার, তাহিরপুরে ১২, বিশ্বম্ভরপুরে ৮ হাজার, ধর্মপাশায় ১৩ হাজার পরিবারকে সহায়তা প্রদানের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ছাতকে ৩৬১০, সুনামগঞ্জে সদরে ১১১৪৫, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ১১২০০, জগন্নাথপুরে ১১৫৬০, দিরাইয়ে ১৭৫৫০, শাল্লায় ১৫১০১৫, দোয়ারাবাজারে ৭৭৮৫, জামালগঞ্জে ১৫১০৫ (পকনার হাওর বাদে), তাহিরপুরে ১৫০৫৪, বিশ্বম্ভরপুরে ৬০০০ হাজার, ধর্মপাশায় ১১১৪৫ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জে অবস্থানরত ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফয়েজুর রহমান বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিলেও গতকাল সন্ধ্যায় তিনি জানান, কৃষি বিভাগ থেকে তথ্য নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় এনে ভিজিএফ’র নীতিমালা অনুযায়ী এই তালিকা করা হয়েছে। এটি আপাতত পরিবর্তন করা হচ্ছে না।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, ‘উপজেলার জনসংখ্যা অনুপাতে যদি সরকারি সহায়তা প্রদানের তালিকা হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্তরা কোন দিনই উপকৃত হবেন না। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাধান্য না দিয়ে যারা তালিকা করে উপরে পাঠিয়েছেন তারা দায়সাড়া কাজ করেছেন। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভুক্ত করে তালিকাটি পুনরায় করার জোর দাবি জানিচ্ছি।’
গতকাল দুপুরে সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি তথ্য সংগ্রহ করতে দুদক কর্তৃক গণশুনানির দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়ত হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন এই সংবাদ সম্মেলনে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণারও দাবি জানানো হয়।