ঢাকা ০১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরাঞ্চলকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৪:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৭৯ বার

অসময়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের বিপর্যয়কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। হাওর এলাকায় সর্বস্বান্ত হওয়া লাখ লাখ কৃষক রক্ষায় দ্রুত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল ২৪ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার নিশ্চয়তা এবং হাওরের সবার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।

‘হাওরের মহাবিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা হাওরের দুর্যোগ মোকাবেলায় নেওয়া সরকারি-বেসরকারি প্রস্তুতিকে ‘অপ্রতুল’ বলে অভিযোগ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, তিন লাখ মানুষকে ৩০ কেজি করে চাল দেবে সরকার। কিন্তু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৪ লাখ থেকে কমে তিন লাখ হলো কীভাবে। এখানে কৃষি ব্যাংকও এগিয়ে আসতে পারে। আমাদের কৃষি ঋণ রয়েছে। কিন্তু সেটা পায় কৃষি সংশ্লিষ্ট বড় বড় উদ্যোক্তারা। কৃষকদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
হাওরে বাঁধ নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়ম এবং নকশাগত ত্রুটির কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এমনভাবে বাঁধ বানানো হয় যে, কৃষকরা তা কেটে দিতে বাধ্য হন। এই তথ্যগুলো ভালোভাবে নেওয়া উচিত। উন্নয়নে মানুষকে সম্পৃক্ত করা উচিত। এই ঘটনাগুলো আর যাতে না ঘটে।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণায় এত অনিচ্ছা কেন? সেখানে ২৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এরপরও এটা জাতীয় দুর্যোগ না হলে কখন হবে? হাওরের ঘটনায় এ পর্যন্ত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি করেন এ লেখক ও সাংবাদিক।

তিনি আরও বলেন, এই দুর্যোগে হাওরের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সেইভাবে আমরা দেখছি না। আক্রান্ত এলাকায় ২৫-৩০ জন সংসদ সদস্য আছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ১০ জনও এলাকায় গিয়েছেন কি না আমরা সে খবর পাইনি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই বিপর্যয় কেন জাতীয় দুর্যোগ হবে না? অর্বাচিন সচিব বলে- এত শতাংশ মানুষ মারা না গেলে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হবে না। এখন মানুষের খাদ্য দিতে হবে, গরুর খাদ্য দিতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম লিখিত বক্তব্যে বলেন, পরিবেশগত দিকসহ এত স্বল্প সময়ে এত বিশাল ক্ষয়ক্ষতির নজির সারা পৃথিবীতে আর একটাও নেই। কিন্তু আমাদের সরকার, বিরোধী দল, এনজিও, সিভিল সোসাইটি এবং মিডিয়া কোনো পক্ষই ঘটনার গভীরতা ও ব্যাপকতা বিবেচনায় নিয়ে এই বিপর্যয় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবছে না।

তিনি আরও বলেন, রবিবার পর্যন্ত হাওর অঞ্চলের ৮০ ভাগ জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।

মাছের প্রজনন মৌসুমে এ ধরনের দুর্ঘটনায় হাওর মাছ শূন্য হয়ে পড়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, মাছের প্রজনন মৌসুমের আগে আগাম বন্যা প্রজননকে সহায়তা করে। কিন্তু এবারের ঘটনা শুধু বিপরীতই নয়, নজিরবিহীনভাবে বিধ্বংসী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাওরাঞ্চলকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি

আপডেট টাইম : ০৯:১৪:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

অসময়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের বিপর্যয়কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। হাওর এলাকায় সর্বস্বান্ত হওয়া লাখ লাখ কৃষক রক্ষায় দ্রুত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল ২৪ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার নিশ্চয়তা এবং হাওরের সবার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।

‘হাওরের মহাবিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা হাওরের দুর্যোগ মোকাবেলায় নেওয়া সরকারি-বেসরকারি প্রস্তুতিকে ‘অপ্রতুল’ বলে অভিযোগ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, তিন লাখ মানুষকে ৩০ কেজি করে চাল দেবে সরকার। কিন্তু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৪ লাখ থেকে কমে তিন লাখ হলো কীভাবে। এখানে কৃষি ব্যাংকও এগিয়ে আসতে পারে। আমাদের কৃষি ঋণ রয়েছে। কিন্তু সেটা পায় কৃষি সংশ্লিষ্ট বড় বড় উদ্যোক্তারা। কৃষকদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
হাওরে বাঁধ নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়ম এবং নকশাগত ত্রুটির কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এমনভাবে বাঁধ বানানো হয় যে, কৃষকরা তা কেটে দিতে বাধ্য হন। এই তথ্যগুলো ভালোভাবে নেওয়া উচিত। উন্নয়নে মানুষকে সম্পৃক্ত করা উচিত। এই ঘটনাগুলো আর যাতে না ঘটে।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণায় এত অনিচ্ছা কেন? সেখানে ২৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এরপরও এটা জাতীয় দুর্যোগ না হলে কখন হবে? হাওরের ঘটনায় এ পর্যন্ত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি করেন এ লেখক ও সাংবাদিক।

তিনি আরও বলেন, এই দুর্যোগে হাওরের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সেইভাবে আমরা দেখছি না। আক্রান্ত এলাকায় ২৫-৩০ জন সংসদ সদস্য আছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ১০ জনও এলাকায় গিয়েছেন কি না আমরা সে খবর পাইনি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই বিপর্যয় কেন জাতীয় দুর্যোগ হবে না? অর্বাচিন সচিব বলে- এত শতাংশ মানুষ মারা না গেলে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হবে না। এখন মানুষের খাদ্য দিতে হবে, গরুর খাদ্য দিতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম লিখিত বক্তব্যে বলেন, পরিবেশগত দিকসহ এত স্বল্প সময়ে এত বিশাল ক্ষয়ক্ষতির নজির সারা পৃথিবীতে আর একটাও নেই। কিন্তু আমাদের সরকার, বিরোধী দল, এনজিও, সিভিল সোসাইটি এবং মিডিয়া কোনো পক্ষই ঘটনার গভীরতা ও ব্যাপকতা বিবেচনায় নিয়ে এই বিপর্যয় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবছে না।

তিনি আরও বলেন, রবিবার পর্যন্ত হাওর অঞ্চলের ৮০ ভাগ জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।

মাছের প্রজনন মৌসুমে এ ধরনের দুর্ঘটনায় হাওর মাছ শূন্য হয়ে পড়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, মাছের প্রজনন মৌসুমের আগে আগাম বন্যা প্রজননকে সহায়তা করে। কিন্তু এবারের ঘটনা শুধু বিপরীতই নয়, নজিরবিহীনভাবে বিধ্বংসী।