কিশোরগঞ্জের হাওরে ফসলডুবি
৮০৫ কোটি টাকার ক্ষতি
আগাম বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে জেলার ৯টি উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, নিকলী, বাজিতপুর, ভৈরব, তাড়াইল ও হোসেনপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। রোববার পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে নগদ ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ৫৩৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫শ’ টাকা জুলাই মাস পর্যন্ত দেওয়া হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন ও সহায়তার জন্য মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩টি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, জরুরী ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া, বিশেষ ভিজিএফ/ভিজিডি কর্মসূচি চালু করা, ওএমএস চালু করা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রয় কার্যক্রমে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, গৃহপালিত প্রাণীর জন্য বিনামূল্যে গোখাদ্য এবং ঔষধ সরবরাহ করা, আগামী বোরো মৌসুমের আগে কৃষি উপকরণ, সার, বীজ ও নগদ অর্থ সহায়তা করা, বিশেষ কাবিটা/কাবিখা কর্মসূচী চালু করা, কৃষি ঋণের সুদ মওকুফসহ আপদকালীন ঋণ আদায় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, এনজিও ঋণ আদায় কার্যক্রম আপদকালীন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি। কিশোরগঞ্জে হাওর অঞ্চলের মোট ১ লাখ ২৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর আবাদী জমির মধ্যে ৫৭ হাজার ২৭ হেক্টর জমির বোরো ধান আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে ২ লাখ ১ হাজার ৩০৫ টন চাল উৎপাদিত হতো যার আর্থিক মূল্য ৮০৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৫ জন কৃষক। রোববার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, আগাম বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে জেলার ৯টি উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, নিকলী, বাজিতপুর, ভৈরব, তাড়াইল ও হোসেনপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। রোববার পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে নগদ ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ৫৩৫ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫শ’ টাকা জুলাই মাস পর্যন্ত দেয়া হবে। প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন ও সহায়তার জন্য মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩টি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, জরুরী ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া, বিশেষ ভিজিএফ/ভিজিডি কর্মসূচি চালু করা, ওএমএস চালু করা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রয় কার্যক্রমে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, গৃহপালিত প্রাণীর জন্য বিনামূল্যে গোখাদ্য এবং ওষুধ সরবরাহ করা, আগামী বোরো মৌসুমের আগে কৃষি উপকরণ, সার, বীজ ও নগদ অর্থ সহায়তা করা, বিশেষ কাবিটা/কাবিখা কর্মসূচি চালু করা, কৃষি ঋণের সুদ মওকুফসহ আপদকালীন ঋণ আদায় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, এনজিও ঋণ আদায় কার্যক্রম আপদকালীন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামিল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পিপি শাহ আজিজুল হক, সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি মোস্তফা কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আর ক’দিন পরেই কৃষকের ঘরে উঠতো সোনাফলা ফসল। কিন্তু তার আগেই ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে হাওরের আধা-কাঁচা ধান। পানির নিচের কাঁচা ধান পচে সৃষ্ট গ্যাসে মরে গেছে হাওরের মাছ। এরপর মারা গেছে হাঁস-পাখিসহ হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। ফের গত ক’দিনের টানা ভারি বর্ষণে ডুবছে নতুন নতুন এলাকার ফসল। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে হাওরপাড়ের কৃষকরা। হাওরজুড়ে এখন হাহাকার আর আর্তনাদ। জীবিকার সন্ধানে কৃষকরা ছুটছেন শহরে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিকে হাওরের দূষিত পানি পরীক্ষা করতে সুনামগঞ্জে যান বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। পরীক্ষায় হাওরের পানিতে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার কোনো আলামত পাননি বলে জানান তারা। ওদিকে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ফসলডুবিতে ৮০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
তলিয়ে গেল শনির হাওর
পানিতে মেলেনি তেজস্ক্রিয়তা
সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুর জানান, শেষ রক্ষা হলো না সর্ববৃহৎ বোরো ফসলের ভাণ্ডার শনি হাওরের। গত দুই সপ্তাহ ধরে নারী-পুরুষ মিলে শনির হাওরের বাঁধ রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম নিমিষেই ভেঙে তলিয়ে গেল। হাওরের কৃষক-কৃষাণির কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। শনির হাওরের তলিয়ে যাবার খবরে সারা জেলার মানুষের মধ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়। এরকম দুর্যোগ তাদের জীবনে আর দেখেন নি বলে জানান, তাহিরপুরের কাকনদি গ্রামের কৃষক আনিসুল ও কৃষাণি রহিমা বেগম। তারা জানান, রাতদিন শনির বিভিন্ন বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করেও ফসল রক্ষা করতে না পারার কষ্ট সারাজীবন মনে থাকবে।
শনিবার গভীর রাতে শনি হাওরের লালুর গোয়ালা বাঁধ ভেঙে হাওরের ভেতরে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে শনি হাওরের প্রায় ৮ হাজার হেক্টর আধা পাকা বোরো ধান। অতিবৃষ্টিপাত আর উজান থেকে আসা পানিতে সবগুলো হাওর তলিয়ে গেলেও একমাত্র কৃষকের সম্বল ছিল শনি হাওরের বোরো ধান। বাঁধ রক্ষার্থে হাওর পাড়ের শত শত কৃষক গত ২৬ দিন ধরে শনি হাওরের প্রত্যেকটি বাঁধে দিন-রাত পরিশ্রম করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। কৃষক সোনা মিয়া জানান, কিছু ধান কাটার উপযুক্ত হলেও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকই হাওর পাড়ের ধানগুলো কাটতে পারছেন না। যার ফলে দিনের আলোতেই কৃষকের চোখের সামনে পানিতে ডুবছে সারা বছরের জীবিকার একমাত্র সোনালি বোরো ফসল। শনির হাওর পারের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক সামায়ুন কবির বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে ধান কাটতে হাওরে গিয়েছিলাম, কিন্তু দেখতে দেখতে জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুছ ছালাম বলেন, শনি হাওরের বাঁধ ভেঙে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর বোরো জমির আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। যেখানে ১৫ হাজার টন ধান উৎপাদন হতো। যার মূল্য প্রায় ১শ’ ২৩ কোটি টাকা।
পানিতে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়নি: বিভিন্ন হাওরে মাছ মরে ভেসে ওঠার ঘটনায় সুনামগঞ্জে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল সরজমিন হাওর সহ সীমান্তবর্তী নদী ও হাওর পরিদর্শন করে প্রাথমিক ভাবে পানি পরীক্ষা করে ইউরেনিয়ামের কোনো আলামত পান নি। এমনটি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ফিজিক্যাল সায়েন্স অ্যাটোনমিক কমিশনের সদস্য ড. দিলীপ কুমার সাহা। তিনি জানান ‘প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছেন হাওরের পানিতে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর থেকে বিভিন্ন প্রকার পানি, মরা মাছ ও মরা হাঁসের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের আরো একটি দল ঢাকায় নিয়ে গেছে। সেখানে ল্যাব টেস্টের পর নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে এই পানিতে আসলেই কোনো ইউরেনিয়াম আছে কি-না।
পরমাণু প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আরো ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাটোনমিক এনার্জি কমিশনের প্রধান সায়েন্টিফিক অফিসার ড. দেবাশীষ পাল ও বাংলাদেশ ক্যামিস্টি ডিভিশনের হেড ড. বিলকিস আরা বেগম।
খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমায় প্রবাহিত হচ্ছে
নবীগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জে প্রবল বৃষ্টিপাত ও অকাল বন্যায় পাকা বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিনষ্ট হয়েছে ৩৯ হাজার ২৬২ হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে, গুয়াংগা জুড়ির হাওর, মকার হাওর এবং বানিয়াচং, আজমেরীগঞ্জ, লাখাই ও বাহুবল উপজেলার হাওরের ফসল। ওদিকে, ফসল হারিয়ে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে। পানির দামে বিক্রি হচ্ছে গবাদিপশু। মহাজনের উৎপাত আর সব হারিয়ে দিশাহারা কৃষক পরিবার। বিলুপ্তির পথে রয়েছে জলজ প্রাণী। ভারত থেকে ধেয়ে আসা বিষাক্ত খনিজ পদার্থ হাওর এলাকার মৎস্য সম্পদকে বিনষ্ট করছে। বাজারে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় কোন ত্রাণ সামগ্রী না পেয়ে হতাশায় দিনাতিপাত করছে কৃষক পরিবার। এ ছাড়াও গতকাল থেকে ভারত থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩৯ হাজার ২৬২ হেক্টর জমির বোরো ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে বানিয়াচংয়ে ২০ হাজার ১৭০ হেক্টর, আজমিরীগঞ্জে ৬ হাজার ৪৮০ হেক্টর, লাখাইয়ে ৭ হাজার ৫০ হেক্টর, নবীগঞ্জে ২ হাজার ৭৮০ হেক্টর, হবিগঞ্জ সদরে ১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, বাহুবলে ১ হাজার ১৭ হেক্টর ও চুনারুঘাট উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমির বোরো ফসল নষ্ট হয়েছে। বেসরকারি হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভাটি এলাকায় নদ-নদীতে আশঙ্কাজনকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিনই ফসলী জমি প্লাবিত হচ্ছে। আতঙ্কিত কৃষকরা অবশিষ্ট ফসল রক্ষার জন্য আধাপাকা ধান কেটে নেয়ার চেষ্টা করছেন। ধান কাটা শ্রমিকের অভাবে অনেকেই পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে পানিতে নিমজ্জিত জমি থেকে আধাপাকা ধান কাটছেন। কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর জেলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও চাষাবাদ হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমি। কৃষকেরা যখন বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন। সেই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদেরকে দারুণভাবে আশাহত করেছে। ওদিকে, খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে গতকাল সকালে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১টা পর্যন্ত খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ৯.৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর হঠাৎ করেই পানি বাড়তে থাকে। রোববার সকাল ১০টায় বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা ২টায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, নিম্নচাপের কারণে বাংলাদেশের উজানে ভারতীয় অংশে বৃষ্টিপাত ও বাংলাদেশ অংশে টানা বর্ষণের কারণে খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। পাশাপাশি নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
হাকালুকিতে মারা গেছে ২৫ টন মাছ
কুলাউড়া মৌলভীবাজার জানান, হাকালুকি হাওরে ধান পচে বিষক্রিয়ায় মৌলভীবাজারের তিনটি উপজেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় মারা গেছে ২৫ টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা। বর্তমানে মাছ মরা বন্ধ হয়ে গেছে। পানির গুণগত মান মাছের বসবাস উপযোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। হাওরে মাছের আবাসস্থল সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ অবস্থায় ফিরে এসেছে। কুলাউড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছেন।
২২শে এপ্রিল শনিবার বিকালে মৌলভীবাজারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ ক ম শফিকুজ্জামান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে হাকালুকি হাওর সংশ্লিষ্ট তিনটি উপজেলা বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়ায় এক লাখ করে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং পানির আগের রূপ ফিরিয়ে আনতে হাওরের বিভিন্ন বিলে ৫ টন চুন ছিটানো হয়েছে। এছাড়া গত ২-৩ দিনের প্রচুর বৃষ্টিপাতে হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানির গুণগত মান স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরো জানান, ইতিমধ্যে তিনটি উপজেলায় ৮টি বিলে নার্সারির মাধ্যমে ১৮ লাখ রুই জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা আগামী জুনের মধ্যে অবমুক্ত করা হবে। এ ছাড়াও হাকালুকি হাওরের জন্য আরও পোনা অবমুক্তির চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অবমুক্ত করা হবে।
ইতিমধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনধিদল হাকালুকি হাওর পরিদর্শন করেছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে পরিচয়পত্রধারী ৪ হাজার জেলেকে খাদ্য সাহায্যের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। অকাল বন্যায় হাকালুকি হাওরের ধান পচে বিষক্রিয়ায় স্থানীয় জাতসহ প্রায় ২৫ মেট্রিকটন মাছ মারা গেছে। হাওরে প্রতি বছর মোট মাছের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় মোট মাছের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার টন।
চকরিয়ায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে
গেছে কৃষকের পাকা ধান
চকরিয়া কক্সবাজার জানান, লাগাতার তিন দিনের বৃষ্টিতে চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নে উত্তর নলবিলায় পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকশ কৃষকের হাজার হাজার একর জমির পাকা ধান বৃষ্টির পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ধান কাটা মওসুমে যদি এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে কৃষকরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এমনই মন্তব্য করেছেন এলাকার কৃষিনির্ভর চাষিরা।
উত্তর নলবিলা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, তিন দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিতে কাকারা ইউনিয়নের ফসলি জমি ও বোরো ধানের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। উত্তর নলবিলা এলাকায় প্রায় এক হাজার একর জমিতে এবার বোরো চাষ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারে কৃষকের মুখে ছিল হাসির ঝিলিক। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উত্তর নলবিলা ও কাকারা ইউনিয়নের ফসলি জমিতে ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ওই এলাকায় মাটির বাঁধ থাকায় ধানক্ষেতে জমে থাকা পানি সহজে নিষ্কাশন হতেও পারছে না। বর্তমানে নলবিল ও কাকারা এলাকায় পানির নিচে রয়েছে শ’ শ’ একর পাকা ধান।
নান্দাইলে পানির নিচে ফসল
নান্দাইল ময়মনসিংহ জানান, ৪ দিনের প্রবল বর্ষণে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা পৌরসদরসহ ১২ ইউনিয়নে পানির নিচে কয়েক হাজার একর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এ বর্ষণে উপজেলার বোরো পাকা ধানক্ষেত সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে দারুণ উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবার মনে বিষণ্নতার ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। নান্দাইল ইউনিয়নের বলদা বিল, গজারিয়া, বাফাইল, টংগীর বিলসহ উপজেলার অনেক বিলের বোর পাকা ধানক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিকে নরসুন্দা নদীতেও পানি বৃদ্ধির ফলে রোপণ করা বোরো ধানক্ষেত শতকরা ৯০ ভাগ পানির নিচে। পানি আসার আগে যেসব কৃষক ধান কেটে নিয়েছে তারা ছাড়া বাকি সব বোরো ধান পানির নিচে থাকায় সেগুলো সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে হতাশা ও হাহাকার বিরাজ করছে। বছরের প্রধান ফসল বোরো ধান না পাওয়ায় তাদের পরিবারপরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে তাদের সামনের দিনগুলো পাড়ি দিতে হবে।