ঢাকা ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের হাওর অঞ্চলে ভরা গ্রীস্মেই বন্যা বোরো ধানের ৮৬ শতাংশই নষ্ট হয়েছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৪৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭
  • ৩০১ বার

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে ভরা গ্রীস্মেই বন্যা দেখা দেওয়ায় বোরো আবাদের ৮৬ শতাংশ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, ‘অকাল বন্যায় দেশের ছয়টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং নেত্রকোনা জেলার কৃষকরা। এই চার জেলার কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। যারা বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল। আর সেই ধানের ৮৬ শতাংশ নষ্ট হয়েছে।’

রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বন্যকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।’

হাওরে অসময়ে পানি এসে ডুবে গেছে ফসল

কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ জন্য দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর (পানিসম্পদ, খাদ্য, স্থানীয় সরকার, অর্থ, মৎস্য, তথ্য মন্ত্রণালয়) প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বন্যার কারণ নির্ধারণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। এ সময়ে বন্যকবলিত এলাকার মানুষকে খাদ্য এবং অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে। যতদিন পর্যন্ত পানি না সরবে, মানুষ ঘরে ফিরে না যাবে, যতদিন পর্যন্ত পরবর্তী ফসল না উঠবে ততদিন পর্যন্ত এ সহায়তা দেওয়া হবে।’

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যকবলিত এলাকার মানুষদের সহায়তায় সোমবার থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। পরবর্তী একশ’ দিনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে মাসে ত্রিশ কেজি চাল এবং নগদ ৫শ’ টাকা দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাবেন তিন লাখ ত্রিশ হাজার পরিবার। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ কর্মসূচিতে সরকারের ৩০/৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে যারা ত্রাণ নেবেন না তাদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে চাল ও ১০ টাকা কেজি দরে ন্যায্যমূল্যের চাল বিক্রি অব্যাহত থাকবে।’

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দেশে খাদ্যের অভাব নেই। একজন মানুষও না খেয়ে মরবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমরা এভাবেই বাস্তবায়ন করবো। এক্ষেত্রে আপনাদের সাহায্য চাই। মানুষ আতঙ্কিত হয় এমন সংবাদ প্রকাশ করবেন না। এ দুর্যোগ শুধু সরকার বা আওয়ামী লীগের একার নয়, এ দুর্যোগ সমগ্র জাতির। এক্ষেত্রে সবার দায়িত্ব রয়েছে।’

তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি অসুস্থ, তাই হয়তো হাওর এলাকায় যেতে পারবেন না। তবে আপনার দলের মোটাসোটা নেতাদের পাঠিয়ে এলাকার খোঁজ খবর নেন।’

প্লাবিত এলাকাগুলোকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মায়া বলেন, ‘দুর্গত এলাকা ঘোষণার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে মানুষ কষ্টে আছে। সেই কষ্ঠ লাঘবের চেষ্টা করছি আমরা।’

হাওরে অসময়ে পানি এসে ডুবে গেছে ফসল

বৈঠকে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মোট এক হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন মাছ নষ্ট হয়েছে এবং তিন হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে।’

কৃষি সচিব বলেন, ‘দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। যেখান থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যেতো। তবে এতে আমাদের খাদ্য ঘাটতি হবে না কারণ দেশের অন্য অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন বেশি হয়েছে। এছাড়া আউশ এবং আমন চাষে আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দেবো। ফলে দেশে খাদ্যে কোনও ঘাটতি থাকবে না।’

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘হাওর এলাকায় বিদ্যমান বাঁধগুলো ষাট দশকের পরিকল্পনায় করা। এবারের বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। এবারের ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নেবো বাঁধগুলো কী পরিমাণ উঁচু করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পগুলো উপজেলা পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন করা হবে। যা বাস্তবায়ন করবে উপজেলা প্রশাসন।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের হাওর অঞ্চলে ভরা গ্রীস্মেই বন্যা বোরো ধানের ৮৬ শতাংশই নষ্ট হয়েছে

আপডেট টাইম : ০৮:৪৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে ভরা গ্রীস্মেই বন্যা দেখা দেওয়ায় বোরো আবাদের ৮৬ শতাংশ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, ‘অকাল বন্যায় দেশের ছয়টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং নেত্রকোনা জেলার কৃষকরা। এই চার জেলার কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। যারা বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল। আর সেই ধানের ৮৬ শতাংশ নষ্ট হয়েছে।’

রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বন্যকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।’

হাওরে অসময়ে পানি এসে ডুবে গেছে ফসল

কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ জন্য দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর (পানিসম্পদ, খাদ্য, স্থানীয় সরকার, অর্থ, মৎস্য, তথ্য মন্ত্রণালয়) প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বন্যার কারণ নির্ধারণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। এ সময়ে বন্যকবলিত এলাকার মানুষকে খাদ্য এবং অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে। যতদিন পর্যন্ত পানি না সরবে, মানুষ ঘরে ফিরে না যাবে, যতদিন পর্যন্ত পরবর্তী ফসল না উঠবে ততদিন পর্যন্ত এ সহায়তা দেওয়া হবে।’

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যকবলিত এলাকার মানুষদের সহায়তায় সোমবার থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। পরবর্তী একশ’ দিনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে মাসে ত্রিশ কেজি চাল এবং নগদ ৫শ’ টাকা দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাবেন তিন লাখ ত্রিশ হাজার পরিবার। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ কর্মসূচিতে সরকারের ৩০/৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে যারা ত্রাণ নেবেন না তাদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে চাল ও ১০ টাকা কেজি দরে ন্যায্যমূল্যের চাল বিক্রি অব্যাহত থাকবে।’

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দেশে খাদ্যের অভাব নেই। একজন মানুষও না খেয়ে মরবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আমরা এভাবেই বাস্তবায়ন করবো। এক্ষেত্রে আপনাদের সাহায্য চাই। মানুষ আতঙ্কিত হয় এমন সংবাদ প্রকাশ করবেন না। এ দুর্যোগ শুধু সরকার বা আওয়ামী লীগের একার নয়, এ দুর্যোগ সমগ্র জাতির। এক্ষেত্রে সবার দায়িত্ব রয়েছে।’

তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি অসুস্থ, তাই হয়তো হাওর এলাকায় যেতে পারবেন না। তবে আপনার দলের মোটাসোটা নেতাদের পাঠিয়ে এলাকার খোঁজ খবর নেন।’

প্লাবিত এলাকাগুলোকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মায়া বলেন, ‘দুর্গত এলাকা ঘোষণার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে মানুষ কষ্টে আছে। সেই কষ্ঠ লাঘবের চেষ্টা করছি আমরা।’

হাওরে অসময়ে পানি এসে ডুবে গেছে ফসল

বৈঠকে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মোট এক হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন মাছ নষ্ট হয়েছে এবং তিন হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে।’

কৃষি সচিব বলেন, ‘দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। যেখান থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যেতো। তবে এতে আমাদের খাদ্য ঘাটতি হবে না কারণ দেশের অন্য অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন বেশি হয়েছে। এছাড়া আউশ এবং আমন চাষে আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দেবো। ফলে দেশে খাদ্যে কোনও ঘাটতি থাকবে না।’

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘হাওর এলাকায় বিদ্যমান বাঁধগুলো ষাট দশকের পরিকল্পনায় করা। এবারের বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হয়েছে। এবারের ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নেবো বাঁধগুলো কী পরিমাণ উঁচু করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পগুলো উপজেলা পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন করা হবে। যা বাস্তবায়ন করবে উপজেলা প্রশাসন।’