ঢাকা ০১:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিল্লির পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে সম্পর্ক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১১ বার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এক ধরনের টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে। সংখ্যালঘু ইস্যুসহ খুব স্পর্শকাতর বিভিন্ন বিষয় সামনে চলে আসায় সম্পর্ক অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগও হয়েছে সীমিত। একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই গত সোমবার ঢাকা সফর করে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের কোনো উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার এটিই ছিল প্রথম ঢাকা সফর। বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। ঢাকার তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়, শেখ হাসিনার ভারতে বসে উসকানিমূলক বক্তব্য ভালো চোখে দেখছে না অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় মিডিয়ায় কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যুকে হাতিয়ার করে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান

জানানো হয় বিক্রম মিশ্রির কাছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা নেই বলে স্পষ্ট করা হয়। আরও স্পষ্ট করা হয়- ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়, তাহলে মানুষে মানুষে সম্পর্ক রাখতে হবে। অতীতের মতো কোনো সরকারের সঙ্গে নয়। সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাইলে ৫ আগস্টপরবর্তী পরিস্থিতি মেনে নিয়েই করতে হবে।

পক্ষান্তরে ভারতের তরফ থেকে উত্তেজনা কমিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের কথা বলা হয়। ভারতের তরফ থেকেও বলা হয়, ভারত মানুষে মানুষে সম্পর্ক চায়। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু তুলতে ভুলেননি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টপরবর্তী সময়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ সীমিত হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর ভালো দিক। বৈঠকে দুপক্ষই নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে জানা গেছে।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যে উত্তেজনা চলছে, তার একটি সমাধান দরকার। সম্পর্ক স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে উভয় দেশের আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতির অবনতি হলে তা উভয় দেশের জন্যই ভয়াবহ হবে। সে জন্য আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করা উচিত। এসব বিষয়ে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে কথা বলতে হবে এবং যোগাযোগ বাড়াতে হবে। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতও বলেছে, তারা বাংলাদেশে মানুষে মানুষে সম্পর্ক রাখতে চায়। অতীতের মতো কোনো একটি বিশেষ সরকার বা দলের সঙ্গে নয়। বিশেষ সরকার বা দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে আখেরে লাভ হয় না। ভারতের মিডিয়া এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে বিষোদ্গার করছেন, তা বন্ধে সেই দেশের সরকারকেই আগে উদ্যোগ নিতে হবে। এখন দেখার বিষয়- পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর ভারত কী পদক্ষেপ নেয়। এর ওপরই নির্ভর করবে আগামী দিনে সম্পর্ক কোন দিকে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দিল্লির পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে সম্পর্ক

আপডেট টাইম : ১০:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এক ধরনের টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে। সংখ্যালঘু ইস্যুসহ খুব স্পর্শকাতর বিভিন্ন বিষয় সামনে চলে আসায় সম্পর্ক অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগও হয়েছে সীমিত। একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই গত সোমবার ঢাকা সফর করে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের কোনো উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার এটিই ছিল প্রথম ঢাকা সফর। বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। ঢাকার তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়, শেখ হাসিনার ভারতে বসে উসকানিমূলক বক্তব্য ভালো চোখে দেখছে না অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় মিডিয়ায় কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যুকে হাতিয়ার করে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান

জানানো হয় বিক্রম মিশ্রির কাছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা নেই বলে স্পষ্ট করা হয়। আরও স্পষ্ট করা হয়- ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়, তাহলে মানুষে মানুষে সম্পর্ক রাখতে হবে। অতীতের মতো কোনো সরকারের সঙ্গে নয়। সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাইলে ৫ আগস্টপরবর্তী পরিস্থিতি মেনে নিয়েই করতে হবে।

পক্ষান্তরে ভারতের তরফ থেকে উত্তেজনা কমিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের কথা বলা হয়। ভারতের তরফ থেকেও বলা হয়, ভারত মানুষে মানুষে সম্পর্ক চায়। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু তুলতে ভুলেননি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টপরবর্তী সময়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ সীমিত হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর ভালো দিক। বৈঠকে দুপক্ষই নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে জানা গেছে।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যে উত্তেজনা চলছে, তার একটি সমাধান দরকার। সম্পর্ক স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে উভয় দেশের আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতির অবনতি হলে তা উভয় দেশের জন্যই ভয়াবহ হবে। সে জন্য আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করা উচিত। এসব বিষয়ে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে কথা বলতে হবে এবং যোগাযোগ বাড়াতে হবে। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতও বলেছে, তারা বাংলাদেশে মানুষে মানুষে সম্পর্ক রাখতে চায়। অতীতের মতো কোনো একটি বিশেষ সরকার বা দলের সঙ্গে নয়। বিশেষ সরকার বা দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে আখেরে লাভ হয় না। ভারতের মিডিয়া এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে বিষোদ্গার করছেন, তা বন্ধে সেই দেশের সরকারকেই আগে উদ্যোগ নিতে হবে। এখন দেখার বিষয়- পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর ভারত কী পদক্ষেপ নেয়। এর ওপরই নির্ভর করবে আগামী দিনে সম্পর্ক কোন দিকে যাবে।