উন্নয়নের নামে প্রকল্প-মহাপ্রকল্প গ্রহণ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমের ১৫ বছর লুটপাট হয়েছে। বিদেশি ঋণে জর্জরিত দেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। ‘গণতন্ত্র’ না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলো রুটিন সহায়তার বাইরে বাংলাদেশকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দেয়নি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। ড. ইউনূসকে সহায়তার জন্য মুখিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। ফলে বাংলাদেশের রফতানি খাতে পোশাক শিল্পে খুলে গেছে নতুন দুয়ার। সামনে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা দেবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জিএসপি প্লাস সুবিধাসহ আরো অনেক সুবিধা দেবে। দেশের প্রধান রফতানিমুখী পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পে বিশৃঙ্খলার ফাঁড়া কেটে গেছে। এখন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে ব্যাপক উৎপাদন বেড়ে যাবে। তৈরি পোশাকের রফতানি বেড়ে যাবে দ্বিগুণ-তিনগুণ। এ ছাড়া ওষুধ, চামড়া, পাট, হোক-টেক্সটাইল ও কৃষিজাত পণ্য রফতানি করে শত বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গার্মেন্টসহ দেশে পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল ও গ্যাস-বিদ্যুতের জোগান ঠিকমতো দেয়া গেলে এবং ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক ইমেজ কাজে লাগাতে পারলে অর্থনীতিতে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শুধু পোশাক খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন অর্জন সম্ভব। তবে এ জন্য ইতোমধ্যে আমরা যে কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছি তার মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট এক নম্বরে রয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনে সরবরাহ করা হলে গ্যাস সংকটের সমাধান কিছুটা হতে পারে
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল ইনকিলাবকে বলেন, ১০০ বিলিয়নের রফতানির লক্ষ্য অনুযায়ী পজিটিভলি আগাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি অর্জন করা সম্ভব। তবে বিশেষ করে নিরাপত্তা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ব্যাংকের ঋণ, এলসি ও শিপমেন্ট জটিলতা কমাতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে জেনারেটর দিয়ে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হলে টার্গেটে পৌঁছা সম্ভব হবে না।
দেশকে গত ১৫ বছরে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গেছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসহ সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও নৈরাজ্যের শেষ প্রান্তে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ভারতে পলানোর আগে হাসিনা সরকার দেশীয় ব্যাংক ব্যবস্থা ও বিদেশি সূত্রগুলো থেকে বিরাট অঙ্কের ঋণ করে দেশকে ঋণ-দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ভগ্নদশা অবস্থায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। দেশের প্রধান হয়ে নোবেল বিজয়ী এ খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব হিমালয়সম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অবশ্য প্রাথমিক ধাপে এই চ্যালেঞ্জ শুধু উৎরাননি। দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। গত আড়াই মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বগুণ দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি, রিজার্ভের উন্নতি, জ্বালানির মূল্যহ্রাস এবং রফতানি শিল্পের কর্মীদের জন্য সহজলভ্য ঋণ। ব্যাংক কার্যক্রম স্থিতিশীল করা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন, ছয়টি কমিশন গঠন এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রফতানি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তবে এত দিন রফতানিমুখী পোশাক শিল্পে ভারতীয় ষড়যন্ত্রে মালিক-শ্রমিক অসন্তোষের যে সংকট দেখা দিয়েছিল তা কাটিয়ে একটি স্থিতিশীল ধারায় ফিরেছে এই শিল্প। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ এবং সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। পোশাক খাত বর্তমান স্থিতিশীলতা এবং সরকারের নীতি-সহায়তার সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক শিল্প খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। আর এ জন্য শ্রমিক অসন্তোষ দূর করা, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা, ব্যাংকের এলসি ও শিপমেন্ট জটিলতা নিরসন করা গেলে লক্ষ্যমাত্রা থেকেও বেশি অর্জন করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন রফতানিকারকরা। একই সঙ্গে পোশাক ধীরে ধীরে এআইসহ (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) আধুনিক অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাত। শ্রমিক নিজেই করতে পারছেন তার কাজের মূল্যায়ন। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে কারখানার উৎপাদনশীলতা, তেমনি শ্রমিকরাও পাচ্ছেন বোনাস-প্রণোদনা। প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের এগিয়ে রাখতে উদ্যোক্তারা উৎপাদনে যুক্ত করে চলেছেন স্বয়ংক্রিয় নানান আধুনিক ব্যবস্থা।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সময় এই সম্পর্কে ফাটল ধরে। যার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পোশক রফতানিসহ অন্যান্য সহযোগিতা কমে যায়। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করতেও আশস্ত করেছে দেশটি। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) পেতে আরো অপেক্ষা করতে হলেও কোনো শুল্কমুক্ত সুবিধা ছাড়াই বাংলাদেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ। যা আরো বাড়বে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কারণে বিশ্বের অন্যান্য বাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। এদিকে গত কয়েক বছরে থেকে পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের প্রভাব কমছে। অন্যদিকে আমদানিকারকরা ভিয়েতনামের বাইরেও বিকল্প খুঁজছেন; এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আমেরিকান বাজারে তার অবস্থান ধরে রেখে আগামী দিনে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে রফতানিকারকরা আশাবাদী। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাদের মতে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সেই পথেই রয়েছে।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন বা তার চেয়েও বেশি অর্জন সম্ভব। তবে এ জন্য ইতোমধ্যে আমরা যে কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছি তার মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট এক নম্বরে রয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনে সরবরাহ করা হলে গ্যাস সংকটের সমাধান কিছুটা হতে পারে।
তিনি বলেন, তেলের দাম কমেছে। এতে উৎপাদন খরচ কমার কথা। আর আমরা যদি গ্যাস-বিদ্যুৎ না থাকার কারণে শিপমেন্ট করতে না পারি, রফতানি করতে না পারি, তাহলে বেতন দেবো কীভাবে। তিনি সরকারকে বিশেষভাবে রফতানিমুখী পোশাক খাতে বিশেষ নজর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
গত ৩০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশকে চীন ও ভিয়েতনামের সম্ভাবনাময় বিকল্প হিসেবে মনে করেন। তারা মনে করেন, পোশাক খাতের কিছু ক্যাটাগরিতে চীনের সাথে পাল্লা দিতে পারে এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ অন্যান্য গন্তব্যস্থলের মতো মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের জন্য কোনো শুল্ক সুবিধা না থাকলেও মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি প্রশংসার দাবি রাখে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা মোট রফতানির ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রফতানির পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তার শীর্ষ রফতানি গন্তব্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যুক্তরাজ্যে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ, কানাডায় ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং জাপানে ১২৩ শতাংশ রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে এই প্রতিবেদন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএস ট্রেইড রিপ্রেজেন্টেটিভ) জন্য বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পোশাক শিল্পের প্রোফাইল তৈরিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি হয়েছিল, যা ২০২২ সালে ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। যদিও ২০২৩ সালে কিছুটা কমেছে, তবুও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতোমধ্যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। যে কারণে জিএসপি সুবিধা পেতে আরো অপেক্ষা করতে হলেও আমেরিকার বাজারে পোশাকের রফতানি আরো বাড়বে।
ইউএসআইটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পোশাকের ওপর ২০২৩ সালে গড়ে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ শুল্ক প্রয়োগ করা হয়েছিল, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডা বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাকের শীর্ষ ১০টি রফতানি গন্তব্যের মধ্যে একমাত্র দেশ, যারা শুল্ক সুবিধা বা বিশেষ বাজার প্রবেশাধিকার দেয় না।
এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ইরমা ভ্যান ডুডেন সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পনগরীর কয়েকটি রফতানিমুখী পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে বলেছেন, সরকার চেষ্টা করলে দেশের পোশাক রফতানি শিল্পের আরো উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। ইরমা ভ্যান ডুডেন বলেন, তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিতে বাংলাদেশ এখনো যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে। সরকার চেষ্টা করলে এই খাতে বাংলাদেশের আরো উন্নতির সুযোগ এবং সম্ভাবনা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ও উৎপাদনে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত ইরমা ভ্যান ডুডেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, পোশাক শিল্প একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করে বর্তমানে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে। সরকার, মালিক, শ্রমিক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতায় বিজিএমইএর সদ্য বিদায়ী বোর্ড বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ক্রেতারাও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর আস্থা রাখছেন।
খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরে পোশাক রফতানি বেড়েছিল ৩৫ শতাংশ। গত কিছু দিন এই শিল্পে কিছুটা সংকট ছিল, যা ইতোমধ্যে কাটিয়ে স্থিতিশীল ধারায় ফিরেছে। একই সঙ্গে চীন থেকে গত কয়েক বছরে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে। ২০৩০ সাল থেকে আরো ছয় বছর এই পরিমাণ আরো বাড়বে। চীন যেহেতু পরিবেশগত কারণে টেক্সটাইল থেকে সরে আসছে, ফলে সঙ্গত কারণেই সেগুলো বাংলাদেশে আসবে। আমরা এই সুযোগগুলো গ্রহণ করতে চাই। তিনি বলেন, টেকসই পোশাক শিল্প গড়তে ইতোমধ্যে বিজিএমইএ পোশাক শিল্প রূপকল্প ঘোষণা করেছে। রূপকল্পের ২০ লক্ষ্যের অন্যতম হলো-২০৩০ সাল নাগাদ রফতানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে যা সম্ভব বলে মনে করেন খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল ইনকিলাবকে বলেন, ১০০ বিলিয়নের লক্ষ্য অনুযায়ী পজিটিভলি আগাচ্ছি। অবশ্যই ২০৩০ সালের মধ্যে এটি অর্জন করা সম্ভব। তবে এ জন্য আমাদেরকে আরো বিশেষ কিছু জায়গায় উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে নিরাপত্তা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যু ও ব্যাংকের ঋণ, এলসি ও শিপমেন্ট জটিলতা কমাতে হবে। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সে অনুপাতে দাম বাড়েনি। তাই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ থেকে উত্তরণে সরকারকে রফতানিমুখী এই খাতে বিশেষ গুরুত্বারোপের কথা বলেন মো. মহিউদ্দিন রুবেল।