ঢাকা ০১:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭ বছর পর এক হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ –

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৬:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩ বার

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কাজের সুবিধার যুক্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এরপর থেকে সুযোগ-সুবিধা ও দায়িত্ব নিয়ে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা- এই দুই বিভাগের কর্মরতদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়। এ কারণে প্রায় ৭ বছর পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আগের মতো একটি বিভাগে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আবার একটি বিভাগে রূপান্তরিত করতে গত সোমবার জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে সুরক্ষা সেবা বিভাগেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গত মঙ্গলবার সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকে মন্ত্রণালয়কে আগের মতো একটি বিভাগে রূপান্তরিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সিনিয়র সচিব এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দুই বিভাগ একত্র হলে কাজের সুবিধা হবে। এতে অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্য দূর হবে এবং কাজের গতি বাড়বে। আর্থিক ব্যয়ও কমবে।

২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি জারি হওয়া এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করে দুটি বিভাগ গঠন করেছেন। দুই বিভাগে দুজন সচিব থাকবেন।

জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে রয়েছে- পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্ট গার্ড, তদন্ত সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে রয়েছে- বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, কারা অধিদফতর, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং ব্যবস্থা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে পদায়নের সুযোগ পাওয়া না-পাওয়া এবং এক বিভাগের কর্মীদের পদায়নের দায়িত্ব অন্য বিভাগের হাতে থাকার মতো বিষয়ে দুই বিভাগের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। বাইরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস রয়েছে।

২০১৪ সালে বিদেশে পাসপোর্ট ইস্যুর কাজটি পররাষ্ট্র থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হয়। এর তিন বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুই বিভাগে বিভক্ত করা হলে বিদেশে পাসপোর্ট অফিসে কাজ করার সুযোগ নিয়ে দুই বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। পাসপোর্ট ইস্যুর কাজটি সুরক্ষা সেবা বিভাগ করে বলে এ বিভাগের কর্মীরাই বিদেশের পাসপোর্ট অফিসে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আসছেন। একপর্যায়ে উভয় বিভাগের কর্মীদের সমান হারে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে পরিপত্র জারি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে উচ্চ আদালতে মামলা করা হয়। এ মামলায় জননিরাপত্তা বিভাগের পক্ষে রায় হয়। এর আলোকে উভয় বিভাগের মধ্যে সমহারে বিদেশে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ নির্দেশনার বিরুদ্ধে আপিল করে।

সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই ভাগে ভাগ হওয়ায় কর্মকর্তাদের সুবিধা হলেও কর্মচারীদের সমস্যা হয়। সহায়ক জনবলের ঘাটতি পূরণে মন্ত্রণালয়ে অন্তত ৪০-৪৫ জন পুলিশ সদস্যের পদায়ন হয়েছিল। এতে কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। বিক্ষুব্ধদের মত হচ্ছে, দুই বিভাগ একত্র হলে অতিরিক্ত সহায়ক জনবলের প্রয়োজন হবে না।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবার অধীনে থাকা পাসপোর্ট ফেরিভিকেশন ও ইমিগ্রেশনে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ পুলিশের পদায়নের দায়িত্বে রয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ। এটি উভয় বিভাগের মধ্যে অস্বস্তি ও অসন্তোষের অন্যতম কারণ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রামে অতিরিক্ত সচিবের পদ রয়েছে একটি। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসনে ব্যাপকভাবে পদোন্নতি দেওয়ায় বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত সচিবের পদ রয়েছে ১৫টি। এসব অতিরিক্ত সচিবের অধীনে সহায়ক জনবল দেওয়ার জন্যই মূলত পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন আর কোনো মন্ত্রণালয়ই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চলছে না। কাজের পরিধি বাড়ায় জনবলেরও প্রয়োজন বেড়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের সচিব একজন হলে অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকবে না

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৭ বছর পর এক হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ –

আপডেট টাইম : ০১:০৬:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কাজের সুবিধার যুক্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এরপর থেকে সুযোগ-সুবিধা ও দায়িত্ব নিয়ে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা- এই দুই বিভাগের কর্মরতদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়। এ কারণে প্রায় ৭ বছর পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আগের মতো একটি বিভাগে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আবার একটি বিভাগে রূপান্তরিত করতে গত সোমবার জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে সুরক্ষা সেবা বিভাগেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গত মঙ্গলবার সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকে মন্ত্রণালয়কে আগের মতো একটি বিভাগে রূপান্তরিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সিনিয়র সচিব এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দুই বিভাগ একত্র হলে কাজের সুবিধা হবে। এতে অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্য দূর হবে এবং কাজের গতি বাড়বে। আর্থিক ব্যয়ও কমবে।

২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি জারি হওয়া এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করে দুটি বিভাগ গঠন করেছেন। দুই বিভাগে দুজন সচিব থাকবেন।

জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে রয়েছে- পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্ট গার্ড, তদন্ত সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে রয়েছে- বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, কারা অধিদফতর, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং ব্যবস্থা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে পদায়নের সুযোগ পাওয়া না-পাওয়া এবং এক বিভাগের কর্মীদের পদায়নের দায়িত্ব অন্য বিভাগের হাতে থাকার মতো বিষয়ে দুই বিভাগের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। বাইরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস রয়েছে।

২০১৪ সালে বিদেশে পাসপোর্ট ইস্যুর কাজটি পররাষ্ট্র থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হয়। এর তিন বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুই বিভাগে বিভক্ত করা হলে বিদেশে পাসপোর্ট অফিসে কাজ করার সুযোগ নিয়ে দুই বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। পাসপোর্ট ইস্যুর কাজটি সুরক্ষা সেবা বিভাগ করে বলে এ বিভাগের কর্মীরাই বিদেশের পাসপোর্ট অফিসে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আসছেন। একপর্যায়ে উভয় বিভাগের কর্মীদের সমান হারে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে পরিপত্র জারি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে উচ্চ আদালতে মামলা করা হয়। এ মামলায় জননিরাপত্তা বিভাগের পক্ষে রায় হয়। এর আলোকে উভয় বিভাগের মধ্যে সমহারে বিদেশে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ নির্দেশনার বিরুদ্ধে আপিল করে।

সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই ভাগে ভাগ হওয়ায় কর্মকর্তাদের সুবিধা হলেও কর্মচারীদের সমস্যা হয়। সহায়ক জনবলের ঘাটতি পূরণে মন্ত্রণালয়ে অন্তত ৪০-৪৫ জন পুলিশ সদস্যের পদায়ন হয়েছিল। এতে কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। বিক্ষুব্ধদের মত হচ্ছে, দুই বিভাগ একত্র হলে অতিরিক্ত সহায়ক জনবলের প্রয়োজন হবে না।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবার অধীনে থাকা পাসপোর্ট ফেরিভিকেশন ও ইমিগ্রেশনে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ পুলিশের পদায়নের দায়িত্বে রয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ। এটি উভয় বিভাগের মধ্যে অস্বস্তি ও অসন্তোষের অন্যতম কারণ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রামে অতিরিক্ত সচিবের পদ রয়েছে একটি। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসনে ব্যাপকভাবে পদোন্নতি দেওয়ায় বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত সচিবের পদ রয়েছে ১৫টি। এসব অতিরিক্ত সচিবের অধীনে সহায়ক জনবল দেওয়ার জন্যই মূলত পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন আর কোনো মন্ত্রণালয়ই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চলছে না। কাজের পরিধি বাড়ায় জনবলেরও প্রয়োজন বেড়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের সচিব একজন হলে অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকবে না