ঢাকা ১১:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা শমী কায়সারের ব্যাংক হিসাব তলব আগামী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সবাই হাতে পাবে : প্রেস সচিব নিক্কেই এশিয়াকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা

নোয়াখালীতে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩৫ বার

নোয়াখালীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো পানিবন্দি থাকায় বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে নানা ধরণের সংকট। বিশেষ করে টিউবওয়েলগুলো ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। রান্না করা খাবারের সংকটও আছে। এছাড়াও চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ বেড়ে গেছে। পানি কমতে থাকায় ফুটে উঠছে ক্ষত চিত্র।

জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার আটটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকায় পানি কমছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ও তিনদিন ধরে সূর্য ওঠায় জেলাতে বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি। জেলা জুড়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দুর্গম এলাকাগুলোতে যথাযথ ভাবে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। জেলায় বাড়ছে ডায়রিয়া ও সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা।

জেলার বেশীর ভাগ নিচু এলাকায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি এখনও কোমর সমান পানির নিচে। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। বিভিন্ন উপজেলায় সড়কের পাশের ঘরবাড়িগুলো এখনো পানির নীচে। প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরের অনেক এলাকায়ও ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার পানিতে। এতে করে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ-বালাই।

সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, পুরো ইউনিয়নের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রত্যন্ত এলাকায় খাদ্য সহায়তা যাচ্ছে না।

কাদির হানিফ ইউনিয়নের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং সেপটিক ট্যাংকের ময়লা-আবর্জনা পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগে ভুগছে অনেকেই। যারাই বন্যার পানিতে চলাচল করছেন, তাদের প্রায় সবারই চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।

সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, রোদ থাকায় পানি কিছুটা কমছে। অনেক পানি নেমে গেছে। তবে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যার্তরা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যাকবলিত এলাকায় এখন চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি প্রশাসনকে পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।

নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চর্মরোগীর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ যাতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন সরবরাহ করছি। চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে  পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। আক্রান্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সেবা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গত ১২ ঘণ্টায় সদর উপজেলায় এক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। বেগমগঞ্জ উপজেলায় তিন সেন্টিমিটার পানি কমেছে। অন্যান্য উপজেলায়ও পানি কমছে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালী জেলায় পানিবন্দি প্রায় ২২ লাখ মানুষ। সরকারিভাবে খোলা হয়েছে ১ হাজার ৩৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। ২ লাখ ৫৯ হাজার জন মানুষ এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সরকারি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত ১৭১৮ মেট্রিক টন চাল, ৪৫ লাখ টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার

নোয়াখালীতে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

আপডেট টাইম : ১১:০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

নোয়াখালীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো পানিবন্দি থাকায় বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে নানা ধরণের সংকট। বিশেষ করে টিউবওয়েলগুলো ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। রান্না করা খাবারের সংকটও আছে। এছাড়াও চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ বেড়ে গেছে। পানি কমতে থাকায় ফুটে উঠছে ক্ষত চিত্র।

জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার আটটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকায় পানি কমছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ও তিনদিন ধরে সূর্য ওঠায় জেলাতে বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি। জেলা জুড়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দুর্গম এলাকাগুলোতে যথাযথ ভাবে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। জেলায় বাড়ছে ডায়রিয়া ও সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা।

জেলার বেশীর ভাগ নিচু এলাকায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি এখনও কোমর সমান পানির নিচে। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। বিভিন্ন উপজেলায় সড়কের পাশের ঘরবাড়িগুলো এখনো পানির নীচে। প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরের অনেক এলাকায়ও ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার পানিতে। এতে করে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ-বালাই।

সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, পুরো ইউনিয়নের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রত্যন্ত এলাকায় খাদ্য সহায়তা যাচ্ছে না।

কাদির হানিফ ইউনিয়নের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং সেপটিক ট্যাংকের ময়লা-আবর্জনা পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগে ভুগছে অনেকেই। যারাই বন্যার পানিতে চলাচল করছেন, তাদের প্রায় সবারই চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।

সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, রোদ থাকায় পানি কিছুটা কমছে। অনেক পানি নেমে গেছে। তবে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যার্তরা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যাকবলিত এলাকায় এখন চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি প্রশাসনকে পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।

নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চর্মরোগীর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ যাতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন সরবরাহ করছি। চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে  পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। আক্রান্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সেবা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গত ১২ ঘণ্টায় সদর উপজেলায় এক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। বেগমগঞ্জ উপজেলায় তিন সেন্টিমিটার পানি কমেছে। অন্যান্য উপজেলায়ও পানি কমছে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালী জেলায় পানিবন্দি প্রায় ২২ লাখ মানুষ। সরকারিভাবে খোলা হয়েছে ১ হাজার ৩৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। ২ লাখ ৫৯ হাজার জন মানুষ এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সরকারি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত ১৭১৮ মেট্রিক টন চাল, ৪৫ লাখ টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।