ঢাকা ০১:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা শমী কায়সারের ব্যাংক হিসাব তলব আগামী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সবাই হাতে পাবে : প্রেস সচিব নিক্কেই এশিয়াকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে বন্যার পানি, বৃষ্টিও থামছে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • ২৯ বার

নোয়াখালী থেকে বন্যার পানি ঢুকে লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ জনপদ ডুবে গেছে। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। আবার অনেকের গন্তব্য উজানে স্বজনদের বাড়ি। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের গন্তব্য অজানা। অনেকে আবার চকির ওপর রান্নাবান্না করে ঘরেই অবস্থান নিয়েছেন। কোমড় পানিতে যাতায়াতে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া সুপেয় পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

বন্যা কবলিত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়ন ও বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা যায়। অন্যদিকে গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে রয়েছেন গৃহস্থরা।

রোববার (২৫ আগস্ট) রাত পর্যন্ত কোথাও বন্যার পানি কমেনি। পুরো জেলায় বৃষ্টিও অব্যাহত ছিল। পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকতে শুরু করে। শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল থেকে পানির চাপ বেড়ে যায়। এরমধ্যে শনিবার রাত থেকে লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, উত্তর জয়পুর, বাঙ্গাখাঁ, মান্দারী, তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন, শাকচর ও চররুহিতা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৪-৫ ফুট পানিতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। একই সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া রহমতখালী খালসহ ওয়াপদা খালগুলোতে পানি উপচে পড়ছে। এতে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার লামচরী, মধ্য বাঞ্চানগর, শিশু পার্ক এলাকা ও লাহারকান্দি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এসব এলাকার ১২ হাজার ৭৫০ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অধিকাংশ মানুষ নিজের বাড়ি-ঘর ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা পানিতে নোয়াখালী ও ফেনীতে যখন বন্যা দেখা দেয় তখন লক্ষ্মীপুরে প্রবল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। এ জলাবদ্ধতার কারণে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বহু মানুষ প্রায় ১ মাস জুড়ে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। সদর, রায়পুর, রামগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। সবশেষ গত শুক্রবার নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ে। এতে লক্ষ্মীপুর এখন পুরোপুরি বন্যা কবলিত। এরমধ্যে শনিবার রাতেই প্রায় ৩ ফুট পানি বেড়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে মেঘনা নদীতে যেন বানের পানি নেমে যেতে পারে সেজন্য মজুচৌধুরীর হাটের দুটি স্লুইসগেইট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কোথাও যেন পানি কমছে না। উল্টো সময়ের সাথে সাথে বানের পানি বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র। এতে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়,  জেলার ৫টি উপজেলায় ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া পৃথক দুটি চিঠিতে চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেন। বরাদ্দকৃত চালের মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন রয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।

মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া ও উত্তর দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা তোফায়েল, ইমরান হোসেনসহ কয়েকজন জানায়, গত ৭ দিন ধরে তাদের বাড়িঘরে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। ওই পানি না নামতেই গত ৩ দিন ধরে হঠাৎ করে পানি বাড়তে থাকে। শনিবার সারাদিন বৃষ্টি না হলেও রাতে বৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টির পাশাপাশি নোয়াখালী বন্যার পানি এদিকে চাপ দেয়। এখন প্রত্যেকটি বাড়ি ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। ঘর-বাড়িতে থাকার কোন সুযোগ নেই। যাদের ঘরের ভিটা উঁচু তারাই শুধু বাড়িঘরে থেকে গেছে। আর অন্যরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়েছে। এজন্য পানি বেড়ে গেছে। প্রায় সাড়ে  ১২ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদেরকে শুকনো খাবার বিতরণ করছি। একই সঙ্গে খিচুড়ি রান্না করেও আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষদেরকে পরিবেশন করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে বন্যার পানি, বৃষ্টিও থামছে না

আপডেট টাইম : ১১:০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

নোয়াখালী থেকে বন্যার পানি ঢুকে লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ জনপদ ডুবে গেছে। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। আবার অনেকের গন্তব্য উজানে স্বজনদের বাড়ি। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের গন্তব্য অজানা। অনেকে আবার চকির ওপর রান্নাবান্না করে ঘরেই অবস্থান নিয়েছেন। কোমড় পানিতে যাতায়াতে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া সুপেয় পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

বন্যা কবলিত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়ন ও বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা যায়। অন্যদিকে গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে রয়েছেন গৃহস্থরা।

রোববার (২৫ আগস্ট) রাত পর্যন্ত কোথাও বন্যার পানি কমেনি। পুরো জেলায় বৃষ্টিও অব্যাহত ছিল। পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকতে শুরু করে। শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল থেকে পানির চাপ বেড়ে যায়। এরমধ্যে শনিবার রাত থেকে লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, উত্তর জয়পুর, বাঙ্গাখাঁ, মান্দারী, তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন, শাকচর ও চররুহিতা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৪-৫ ফুট পানিতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। একই সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া রহমতখালী খালসহ ওয়াপদা খালগুলোতে পানি উপচে পড়ছে। এতে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার লামচরী, মধ্য বাঞ্চানগর, শিশু পার্ক এলাকা ও লাহারকান্দি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এসব এলাকার ১২ হাজার ৭৫০ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অধিকাংশ মানুষ নিজের বাড়ি-ঘর ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা পানিতে নোয়াখালী ও ফেনীতে যখন বন্যা দেখা দেয় তখন লক্ষ্মীপুরে প্রবল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। এ জলাবদ্ধতার কারণে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বহু মানুষ প্রায় ১ মাস জুড়ে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। সদর, রায়পুর, রামগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। সবশেষ গত শুক্রবার নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ে। এতে লক্ষ্মীপুর এখন পুরোপুরি বন্যা কবলিত। এরমধ্যে শনিবার রাতেই প্রায় ৩ ফুট পানি বেড়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে মেঘনা নদীতে যেন বানের পানি নেমে যেতে পারে সেজন্য মজুচৌধুরীর হাটের দুটি স্লুইসগেইট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কোথাও যেন পানি কমছে না। উল্টো সময়ের সাথে সাথে বানের পানি বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র। এতে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়,  জেলার ৫টি উপজেলায় ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া পৃথক দুটি চিঠিতে চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেন। বরাদ্দকৃত চালের মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন রয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।

মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া ও উত্তর দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা তোফায়েল, ইমরান হোসেনসহ কয়েকজন জানায়, গত ৭ দিন ধরে তাদের বাড়িঘরে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। ওই পানি না নামতেই গত ৩ দিন ধরে হঠাৎ করে পানি বাড়তে থাকে। শনিবার সারাদিন বৃষ্টি না হলেও রাতে বৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টির পাশাপাশি নোয়াখালী বন্যার পানি এদিকে চাপ দেয়। এখন প্রত্যেকটি বাড়ি ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। ঘর-বাড়িতে থাকার কোন সুযোগ নেই। যাদের ঘরের ভিটা উঁচু তারাই শুধু বাড়িঘরে থেকে গেছে। আর অন্যরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়েছে। এজন্য পানি বেড়ে গেছে। প্রায় সাড়ে  ১২ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদেরকে শুকনো খাবার বিতরণ করছি। একই সঙ্গে খিচুড়ি রান্না করেও আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষদেরকে পরিবেশন করা হচ্ছে।