বরিশালে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস হাওলাদার ও তার চাচাতো ভাই সাগর হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাফর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ইদ্রিসের ছোট ভাই জাকির হোসেন বলেন, শনিবার রাত ১১টার সময় ইদ্রিস হাওলাদার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চাচাতো ভাই সাগর হাওলাদারের মোটরসাইকেলে বাড়ি যাচ্ছিলেন। সাতলা ব্রিজের ঢাল অতিক্রমকালে হামলাকারীদের বেঁধে রাখা রশিতে বাধাগ্রস্ত হয়ে দুই ভাই ছিটকে সড়কে পড়ে যান। এ সময় আগে থেকে অত পেতে থাকা হামলাকারীরা শাহিনের নেতৃত্বে ইদ্রিসকে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দেয়। সাগর বাঁধা দিলে তাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়।
এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই ইদ্রিস হাওলাদার মৃত্যুবরণ করেন। গুরুতর আহত সাগর হাওলাদার আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন হাওলাদার, যুবলীগ নেতা আসাদ হাওলাদার এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস হাওলাদারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার বাদী ছিলেন নিহত ইদ্রিস হাওলাদার।
মৎস্য ঘেরে হামলা ও লুটপাটের মামলায় প্রায় চার মাস আগে বিএনপি নেতা ইলিয়াস হাওলাদার, তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও আসাদ হাওলাদার জেলহাজতে ছিলেন। এই ঘটনায় মামলার আসামিরাই দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন পরিবারের সদস্যরা।
নিহত ইদ্রিসের স্ত্রী রেশমা খানম অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মাছের ঘের নিয়ে বিরোধের জের ধরে ইদ্রিস হাওলাদারের দায়ের করা মামলার আসামিরা তাকে (ইদ্রিস) হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ঘটনার জের ধরেই তার স্বামী ও দেবরকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতদের চাচা সাবেক ইউপি সদস্য মোনাফছের হাওলাদার বলেন, সাতলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের নেতৃত্বে সজল, কিবরিয়া, ইলিয়াস, আসাদ, রাসেল ও সজিবসহ দুর্বৃত্তরা রাস্তায় রশি টানিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে দুই ভাতিজাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষুদ্ধদের শান্ত রাখতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। ঘটনাটি কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আহমেদ জানান, নিহত ইদ্রিসের সঙ্গে একটি মাছের ঘের নিয়ে চলা দ্বন্দ্বের কারণে এই জোড়া হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা করা যাচ্ছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ওসি আরও জানান, এলাকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি সোনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে।