শুরু হলো শোকস্তব্ধ মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই ঘাতকের দল হত্যা করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মানুষের মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিপথগামী একদল সেনা কর্মকর্তার বুলেট বন্ধ করে দেয় বঙ্গবন্ধুর হৃদস্পন্দন। থমকে যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের দুরন্ত পথচলা। তাইতো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার এই মাসটি হয়ে আছে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছরেও দণ্ডপ্রাপ্ত কিছু খুনি পালিয়ে আছে বিদেশে, দাবি ওঠেছে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের।
ঔপনেবিশক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে মাঠে ছিলেন টুঙ্গিপাড়ার খোকা শেখ মুজিব। পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ ও বাঙালির বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা।
বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় জীবনের বড় অংশই জেলে কাটাতে হয় কিংবদন্তী এই নেতাকে। কালক্রমে শেখ মুজিব হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু। লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ৭০ এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ঐতিহাসিক জয় পায় আওয়ামী লীগ।
এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানীদের তালবাহানায় বাঙালির স্বাধীনতার দাবিতে ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে এলেন বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা ভাষণ দেন, যা ছিল মূলত আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা। এই ধারাক্রমেই ৯ মাসে লাখো প্রাণের বিনিময়ে জন্ম নেয় নতুন দেশ, বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়া আর সমৃদ্ধি আর্জনে কাজ শুরু করলেন বঙ্গবন্ধু মুজিব।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কাকডাকা ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি হলো রক্তাক্ত। মুহুর্মুর্হু গুলিতে প্রকম্পিত এলাকা। জাতির জনকের মুখোমুখি ঘাতকের দল, মুহূর্তেই সব শেষ।
দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, এমন কলঙ্কময়, নির্মম হত্যাযজ্ঞ বিরল পৃথিবীর ইতিহাসে।
বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক মো. হারুন-উর-রাশিদ আসকারী বলেন, “স্বাধীনতার বিরোধী হিসেবে কাজ করেছিল তারা সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে হত্যা করেছিল।”
১৯৭৫ এর এই হত্যাযজ্ঞের পর বাংলাদেশ চলে যায় নিকষ কালো অন্ধকারে।
মো. হারুন-উর-রাশিদ আসকারী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যা যে শুধু এক ব্যক্তিকে হত্যা করলো এটি মনে করার কোনোই কারণ নেই। বঙ্গবন্ধু নিজ ও যোগ্যতায় একজন প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিলেন।”
পলাতক খুনীদের দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর যেমন সবার দাবি। তেমনি আগামীতে দেশের যে কোনো সঙ্কটে বঙ্গবন্ধুর প্রেরনাই হতে পারে উত্তরণের পথ। জাতির জীবনে আর কখনো এমন দিন ফিরে না আসুক, এমন প্রত্যাশা সবার।