২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএফআইইউ বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ২২টি অনুরোধ পেয়েছে এবং সেই অনুযায়ী তথ্য প্রদান করেছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক লেনদেন বা অর্থপাচারসংক্রান্ত তথ্যের জন্য বিদেশি এফআইইউকে ৯০টি অনুরোধ করেছে বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থাটি। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ৫৪৯টি তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। বাৎসরিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারসংক্রান্ত তথ্য চাওয়ার ঘটনা ক্রমে বাড়ছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৭৪টি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে গঠিত এগমন্ট। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউনাইটেড আরব আমিরাত অন্যতম।
বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্যের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত অর্থপাচারের ৫৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুদক করেছে ৪৭টি মামলা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে সিআইডি ১০টি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুটি মামলা করেছে। সব মামলাই চলমান। এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর থেকে আরাফাত রহমান কোকোর ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। এরপর আর কোনো অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
গত ৩১ মার্চ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয় ‘সাবেক আইজিপির অপকর্ম-১’। এই পর্বে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে মূল প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জে বেনজীরের পরিবারের মালিকানায় রয়েছে প্রায় ৬০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত চোখ-ধাঁধানো রিসোর্ট। তার পাশে কিনেছেন আরো ৮০০ বিঘা জমি। শুধু তা-ই নয়, রাজধানীর গুলশানে ১৭ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাটসহ দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন তিনি।
এরপর ২ এপ্রিল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয় ‘সাবেক আইজিপির অপকর্ম-২’। এই পর্বের মূল শিরোনাম ছিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুরের ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী গ্রামে ১৬০ বিঘা জমির ওপর রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়। এতে বনের জমিই রয়েছে অন্তত ২০ বিঘা। ওই রিসোর্টের ২৫ শতাংশের মালিকানা বেনজীরের পরিবারের হাতে।
কালের কণ্ঠ’র এসব প্রতিবেদন দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় তোলে। পরে গত ৪ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। ২১ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। একই দিন বেনজীরের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকে আবেদন করেন সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে গত ২২ এপ্রিল তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটির সদস্যরা হলেন কমিশনের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদীন ও নিয়ামুল হাসান গাজী। ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টের এক আদেশে দুই মাসের মধ্যে অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন হলফনামা আকারে জমা দিতে বলা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ গত ২৩ মে ও ২৬ মে দুই দফায় বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আদালতের আদেশের কপির সঙ্গে চিঠিও পাঠানো হয়। চিঠিতে ওই আদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
এর মধ্যে গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। আর গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কম্পানির শেয়ার ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন।
তবে ব্যাংকের হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ বাস্তবায়নের আগেই বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অর্থ সরিয়ে নেন বেনজীর আহমেদ। দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, এই টাকার পরিমাণ কয়েক শ কোটি হতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ চাকরিকালীন কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্ত্রী-সন্তানদের নামে ৬২১ বিঘা জমি কিনেন, যার দলিল মূল্য ও বাস্তব মূল্যে অনেক পার্থক্য পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া অ-তালিকভুক্ত ১৯টি কম্পানি, তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও সঞ্চয়পত্রে বিপুল বিনিয়োগের সন্ধান পেয়েছে দুদক।