পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল রাজধানীর অদূরে সাভার উপজেলায় অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। গাছপালাসমৃদ্ধ এ ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি বড় লেক ও পুকুর থাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে শীত মৌসুমে অতিথি পাখিরা বেড়াতে আসে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে কমছে অতিথি পাখিদের আনাগোনা। ‘পাখির স্বর্গ’ বলে পরিচিত এ বিশ্ববিদ্যালয় হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার বিশ্ববিদ্যালযয়ের পরিবহন চত্বরসংলগ্ন লেকে ৯৯০টি পাতি সরালি, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের বাইরের লেকে ৩৫০টি শামুকখোল ও সেন্টারের ভিতরের লেকে ২ হাজার পাতি সরালি দেখা গেছে, যা গতবারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য মতে, জাবিতে আগে দেশি-বিদেশি মিলে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিললেও এখন দেশি প্রজাতির সংখ্যাই বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পরিযায়ী পাখির বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জলময়ূর, ছোট সরালি, গার্গিনি, চিতা টুপি, বামুনিয়া, মুরহেন, খঞ্জনা, পিনটেইল, কোম্বডাক, পচার্ড, লাল গুড়গুটি, জলপিপি, শামুকভাঙা, নাকতা, মানিকজোড়, খোঁপাডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি প্রভৃতি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ২৬টি লেক থাকলেও শুধু চারটিতে পাখিরা আসে।
জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান আমাদের সময়কে বলেন, এ বছর শুধু ক্যাম্পাসেই নয়; শীতের পাখি সারাদেশেই কমে গেছে। পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু আমাদের সময়কে বলেন, জাহাঙ্গীরনগরে আসে অতিথি পাখি মূলত নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের জন্য। তবে অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে পাখিদের ফ্লাইং জোন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; আবাসস্থল আর নিরঙ্কুশ নেই। পাখিরা কৃষিজমি থেকে যে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করত সেটাও এখন নাই। খাদ্যাভাব তাদের এখানে পরিযায়ী হতে নিরুৎসাহিত করেছে। শব্দের স্বাভাবিক ফ্রিকোয়েন্সি হলো দিনেরবেলা ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল। পাখিরা আরও লো ফ্রিকোয়েন্সিতে যোগাযোগ করে। তবে ক্যাম্পাসে এখন সব সময়ই ৬০ ডেসিবেল থাকে। ক্যাম্পাসের ভিতর অতিরিক্ত জনসমাগম, বিল্ডিং বা রাস্তার পাশের বড় বড় ফ্ল্যাডলাইটের আলোক দূষণও একটা বড় কারণ।
অতিথি পাখি হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রভাব প্রসঙ্গে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এর বড় একটা সম্ভাবনা আছে। এখন অনেকগুলো বহুতল ভবন হওয়ায় ওপর থেকে পাখিরা আবাসস্থল খুঁজে পায় না। শুধু মানুষের আবাস নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশের সকল অধিবাসীদের কথাও ভাবতে হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী ১৯ জানুয়ারি ‘পাখিমেলা ২০২৪’ অনুষ্ঠিত হবে।