ঢাকা ০৩:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিপাহ ভাইরাস : খেজুরের রস পান মানেই কি বিষপান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৬:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১০৭ বার

দেশে শীত মৌসুমে বেড়ে যায় নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি। খেজুরের রসে বাদুরের সংস্পর্শ এই ভাইরাসের অন্যতম কারণ। শীতে খেজুরের রস পান করেন অনেকে। এই রস দিয়ে পিঠা, পায়েসও তৈরি করা হয়। তবে কাচা খেজুরের রস পান নিরাপদ নয়। কারণ রসের মাধ্যমেই আপনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

নিপাহ ভাইরাসের আদ্যোপান্ত নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌফিক আহমেদ।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যশোর, নড়াইল, মাগুরা, ফরিদপুর এসব জায়গায় প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে অনেকে খেজুরের রস পান করেন। খেজুরের খোলা রসে বাদুরের লালার সংস্পর্শ থেকে  রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। নিপাহ ভাইরাস বাদুরের লালা ও বিভিন্ন অংশ থেকে ছড়ায়। বর্তমানে বড়-ছোট অনেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন- এটি মারাত্মক একটি রোগ। মস্তিষ্কে সংক্রমণ করে এই ভাইরাস মানুষের মৃত্যু ঘটায়।

নিপাহ ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি ৭০-৯০ শতাংশ বাড়ে। এবং এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি ফলে সচেতন থাকা জরুরি। বলেন ডা. তৌফিক।

নিপাহ ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ: জ্বর, মাথাব্যথা, খিচুনি দিয়ে কখনো জ্বর আসা, অনেক ক্ষেত্রে শাসকষ্ট হওয়া, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি।

প্রতিকার : কাঁচা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাদুর বা পাখিতে অর্ধেক খাওয়া ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা। ফলমূল ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া। খেজুরের রস কাচা না খেয়ে সিদ্ধ করে পান করা।  কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া অথবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

ডা. তৌফিক আরও বলেন, আমাদের সরাসরি খেজুরের কাচা রস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেউ রস পান করতে চাইলে সিদ্ধ করে খেতে পারবে অথবা কেউ যদি জাল দিয়ে ঢেকে রস সংগ্রহ করতে পারে তবে সেই রস খাওয়া উত্তম। খোলা কিংবা বাজারের রস একেবারেই পান করা উচিত নয়। আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সচেতনতাই পারে আমাদের এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে।

এর আগে বৃ্হস্পতিবার নিপাহ ভাইরাস নিয়ে জরুরি স্বাস্থ্য বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বার্তায় বলা হয়েছে, কাঁচা খেজুরের রসে বাদুড়ের বিষ্ঠা ও লালা মিশ্রিত হয় এবং ওই বিষ্ঠা ও লালাতে নিপাহ ভাইরাসের জীবাণু থাকে। ফলে খেজুরের কাঁচা রস পান করলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমান সময়ে বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরেরা নিপাহ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

বার্তায় আরো বলা হয়েছে, খেজুরের কাঁচা রস সংগ্রহ, বিক্রয় ও বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাছি ও জনসাধারণকে প্রাণিবাহিত সংক্রামক ব্যাধি নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে জানানো হলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই রোগে মৃত্যু ৭০ শতাংশের বেশি। ২০২২-২৩ সালে দেশে এ রোগে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই মৃত্যুবরণ করেন। তাই প্রতিরোধই হচ্ছে এই রোগ থেকে বাঁচার উপায়।

তবে খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় খেতে কোনো বাধা নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নিপাহ ভাইরাস : খেজুরের রস পান মানেই কি বিষপান

আপডেট টাইম : ১২:৩৬:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

দেশে শীত মৌসুমে বেড়ে যায় নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি। খেজুরের রসে বাদুরের সংস্পর্শ এই ভাইরাসের অন্যতম কারণ। শীতে খেজুরের রস পান করেন অনেকে। এই রস দিয়ে পিঠা, পায়েসও তৈরি করা হয়। তবে কাচা খেজুরের রস পান নিরাপদ নয়। কারণ রসের মাধ্যমেই আপনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

নিপাহ ভাইরাসের আদ্যোপান্ত নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌফিক আহমেদ।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যশোর, নড়াইল, মাগুরা, ফরিদপুর এসব জায়গায় প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে অনেকে খেজুরের রস পান করেন। খেজুরের খোলা রসে বাদুরের লালার সংস্পর্শ থেকে  রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। নিপাহ ভাইরাস বাদুরের লালা ও বিভিন্ন অংশ থেকে ছড়ায়। বর্তমানে বড়-ছোট অনেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন- এটি মারাত্মক একটি রোগ। মস্তিষ্কে সংক্রমণ করে এই ভাইরাস মানুষের মৃত্যু ঘটায়।

নিপাহ ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি ৭০-৯০ শতাংশ বাড়ে। এবং এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি ফলে সচেতন থাকা জরুরি। বলেন ডা. তৌফিক।

নিপাহ ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ: জ্বর, মাথাব্যথা, খিচুনি দিয়ে কখনো জ্বর আসা, অনেক ক্ষেত্রে শাসকষ্ট হওয়া, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি।

প্রতিকার : কাঁচা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাদুর বা পাখিতে অর্ধেক খাওয়া ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা। ফলমূল ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া। খেজুরের রস কাচা না খেয়ে সিদ্ধ করে পান করা।  কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া অথবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

ডা. তৌফিক আরও বলেন, আমাদের সরাসরি খেজুরের কাচা রস পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেউ রস পান করতে চাইলে সিদ্ধ করে খেতে পারবে অথবা কেউ যদি জাল দিয়ে ঢেকে রস সংগ্রহ করতে পারে তবে সেই রস খাওয়া উত্তম। খোলা কিংবা বাজারের রস একেবারেই পান করা উচিত নয়। আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সচেতনতাই পারে আমাদের এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে।

এর আগে বৃ্হস্পতিবার নিপাহ ভাইরাস নিয়ে জরুরি স্বাস্থ্য বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বার্তায় বলা হয়েছে, কাঁচা খেজুরের রসে বাদুড়ের বিষ্ঠা ও লালা মিশ্রিত হয় এবং ওই বিষ্ঠা ও লালাতে নিপাহ ভাইরাসের জীবাণু থাকে। ফলে খেজুরের কাঁচা রস পান করলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমান সময়ে বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরেরা নিপাহ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

বার্তায় আরো বলা হয়েছে, খেজুরের কাঁচা রস সংগ্রহ, বিক্রয় ও বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাছি ও জনসাধারণকে প্রাণিবাহিত সংক্রামক ব্যাধি নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে জানানো হলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই রোগে মৃত্যু ৭০ শতাংশের বেশি। ২০২২-২৩ সালে দেশে এ রোগে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই মৃত্যুবরণ করেন। তাই প্রতিরোধই হচ্ছে এই রোগ থেকে বাঁচার উপায়।

তবে খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় খেতে কোনো বাধা নেই।