সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত ই-পাসপোর্ট প্রকল্পব্যয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হতে যাচ্ছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, এক লাফে এ প্রকল্পে খরচ বাড়ছে ৭৬ শতাংশের বেশি। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের খসড়া (আরডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষা। জানা যায়, দেশে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই জার্মান প্রতিষ্ঠান ভেরিডোজের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। এ সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। শর্ত অনুযায়ী দেড় বছরের মধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্ধারিত কাজের অনেক কিছুই বাকি। চুক্তির শর্ত ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সব অফিসসহ ৮০টি বিদেশি মিশনে ই-পাসপোর্ট চালু করতে হবে, তাও হয়নি। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে এখন মোট ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে এসব নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন সংশ্লিষ্টদের কেউ।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মেগা হোক কিংবা ছোট, জনস্বার্থে প্রণীত দেশের কোনো প্রকল্পেই ব্যয় সংকোচনের প্রবণতা দেখা যায় না। বরং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করে মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যয়বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বন করা হয়। পাসপোর্ট নিয়ে নানারকম জালিয়াতি ও নাগরিক দুর্ভোগ কমাতেই ই-পাসপোর্ট প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আধুনিক এ সেবা যাতে প্রবাসীরা পায়, সেটাও ছিল লক্ষ্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, পাসপোর্ট ইস্যুতে জালিয়াতি ও নাগরিক দুর্ভোগ তো কমেইনি বরং এ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে অর্থের শ্রাদ্ধ হয়েছে।
সাধারণ তো দুরস্ত, জরুরি ফি প্রদানের পরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে পাসপোর্ট না পাওয়ার যে অভিযোগ আগে ছিল, তা এখনো আছে। পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানির অভিযোগও কমেনি। আমরা মনে করি, জনস্বার্থে প্রণীত প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে নিয়মিত মনিটরিং ও জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি করা দরকার। ব্যয়বৃদ্ধি নয়, বরং জনগণের অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারে প্রকল্পব্যয়ের ক্ষেত্রে সংকোচন নীতিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। শুধু তাই নয়, নির্মিত ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের ব্যয়ের খতিয়ানও গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। এতে প্রকল্প ব্যয়ে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে। ই-পাসপোর্টসহ সব প্রকল্পে কৃচ্ছ্রসাধনে সরকার আরও আন্তরিক হবে, এটাই প্রত্যাশা।