বাংলার আকাশে গত দুই দশক আগেও শকুন দেখা যেত। এখন আর ডানা মেলে উড়তে দেখা যায়না তাদের। কিছুদিন পর হয়তো নিশ্চির্ণ হয়ে যাবে তারা। গাল গল্প আর বইয়ের পাতায় থেকে যাবে শুধুই ছবি।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এর মধ্যে রাজ-শকুন বাংলাদেশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গত চল্লিশ বছর পরে এবছর মাত্র একটি সরু-ঠুঁটি শকুনের দেখা পাওয়া গেছে। তাই এই প্রজাতিটি ছাড়া বর্তমানে বাংলা শকুনই একমাত্র আবাসিক শকুন হিসেবে টিকে আছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় এনডেমিক পাখি।
বাংলা শকুন বর্জ্যভূক হিসেবে শুধুমাত্র ‘প্রাকৃতিক পরিষ্কারকই নয়, এটি বাংলা সংস্কৃতিরও অংশ। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৪ কোটি শকুন ছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ১০ হাজারে। ১৯৯০ সাল থেকে সমগ্র উপমহাদেশে বাংলা শকুনসহ অন্যান্য শকুন অতি দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। উপমহাদেশের প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ বাংলা শকুন এখন বিলুপ্ত এবং আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে বিশ্বে মহাবিপন্ন ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশেও শকুনের সংখ্যা আশংকাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে বাংলা শকুনের সংখ্যা ৫০০ এর নিচে নেমে এসেছে।
প্রতি বছর শীতকালে কিছু পরিযায়ী শকুন পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় খাবারের সন্ধানে চলে আসে। কিন্তু যে আশায় উড়ে আসে তারা তা হয়না। নির্দয় কিছু মানুষের হাতে উল্টো আহত অথবা প্রাণ হারাতে হয় তাদের। দীর্ঘ পথ উড়ে উড়ে ক্লান্ত শকুনেরা খাবারের অভাবে ডানা মেলতে পারেনা। পড়ে যায় মাটিতে অথবা গাছের আগায় চুপ করে বসে থাকে। এই সুযোগে কিছু অসচেতন মানুষ তাদেরকে পিটিয়ে মারে। শকুনের প্রতি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পঞ্চগড়ে সচেতনা বাড়াতে আইইউসিএন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ বন বিভাগের যৌথ উদ্যেগে শনিবার সদর উপজেলার মিড়গড় উচ্চবিদ্যালয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আই ইউ সিএন এর প্রকল্প পরিচালক সারোয়ার আলম দীপু জানান এই এলাকায় একটি শকুন সংরক্ষণ দল তৈরী করা হয়েছে যারা এই জেলায় শকুন রক্ষায় কাজ করবে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শকুন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করবে। এসময় বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইনাম আল হক উপস্থিত ছিলেন।