শরীফ সাদীঃ রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের নীলাকাশে। ভয়াবহ ঝড় তোলার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে। আবার ডাক দিয়ে যায় নুরুলদীন, “জাগো বাহে কোন্ ঠে সবাই”।
২০০৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল ইরাকে জীবাণু অস্ত্রের মজুত আছে এই মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ন্যাটো জোটের সৈন্যবাহিনী স্বাধীন সার্বভৌম ইরাকের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছিলো। ক্যামেরা ট্রায়ালে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, হাজার হাজার ইরাকি হত্যা করে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ইরাককে তছনছ করে দিয়েছিলো।
২০১১ সালে গণতন্ত্রের পারফিউম লাগানো “আরব বসন্তের” আকর্ষণীয় আওয়াজ তুলে গণতন্ত্র সরবরাহ করার কথা বলে লিবিয়ায়
হামলা করে। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে এবং লিবিয়াকে অতল গহ্বরে ডুবিয়ে দিয়ে এসেছে।
এই বাজপাখির দেশ ১৯৬৬ সনে কঙ্গো’র জাতীয়তাবাদী মুক্তি আন্দোলন এবং প্যান-আফ্রিকান মুভমেন্টের অবিসংবাদিত নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে তাদের বশংবদ সরকার বসিয়েছে।
এই বাজপাখি ১৯৬১ সনে ঘানা’র কৃষ্ণাঙ্গ মুক্তি আন্দোলনের নেতা সদ্য স্বাধীন ঘানার প্রথম প্রধানমন্ত্রী কাউমি নক্রুমাকে মাত্র ৭ মাসের মাথায় হত্যা করে তার লাশ এসিড মেরে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
এই বাজপাখি ১৯৭০/৭১/৭২-এ চিলিতে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দের সরকার উৎখাতের জন্য। আলেন্দে যখন তার দেশের খনিজ সম্পদ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির হাত থেকে নিয়ে নিলো,ভারী ভারী শিল্প জাতীয়করণ করে ফেললো তখন এই বাজপাখি ছোবল মেরে দিলো, হত্যা করলো বিপুল জনপ্রিয় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে এবং ক্ষমতায় বসালো এই বাজপাখির তল্পিবাহক জেনারেল অগাস্টো পিনোচেটকে।
এই বাজপাখি ১৯৬৬ সনে ইন্দোনেশিয়ার জাতির পিতা সুকর্নকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সুকর্ন’র হাতে তৈরি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল সুহার্তোকে ক্ষমতার মসনদে বসায়। ক্ষমতায় বসেই জেনারেল সুহার্তো শুরু করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, সুকর্ন’র প্রায় ১০ লক্ষ অনুসারী নেতা-কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
পৃথিবীর দেশে দেশে এই বাজপাখি
তাদের হিংস্র থাবা মেলেছে।
কোনো কোনো মুক্তিসংগ্রামী নেতাকে হত্যা করে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে, কাউকে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে সরিয়ে সেনাপতি জেনারেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করেছে। তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশ যখন আত্মপ্রতিষ্ঠায় এগিয়ে গেছে, যখন অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে তখনই এই সাম্রাজ্যবাদী বাজপাখি ছোবল মেরেছে।
পঞ্চাশোর্ধ পাঠক, আপনাদের মনে থাকার কথা এই হায়েনার দেশের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ১৯৮৬ সনে কী নির্লজ্জভাবে স্বাধীন স্বার্বভৌম গ্রানাডায় ৬ হাজার মার্কিন সৈন্য পাঠিয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মরিস বিশপকে গ্রেপ্তার ও পরে হত্যা করেছিলো।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ১৯৮৯ সনে স্বাধীন রাষ্ট্র পানামার প্রেসিডেন্ট নরিয়েগা’র বিরুদ্ধে মিথ্যা মাদক পাচারের অভিযোগ এনে তার দেশের ভেতরে মার্কিন সৈন্য পাঠিয়ে কমান্ডো স্টাইলে সেই প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো। এ কেমন গনতান্ত্রিক দেশ বাজপাখির দেশ ? এ কেমন মানবাধিকারের দেশ ?
নিজদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়,অথচ অন্য দেশে মানবাধিকারের ছবক দিতে আসে।
নিজদেশে কৃষ্ণাঙ্গ নির্যাতন হয়, অথচ তারা বর্ণবাদ-বিরোধী দাবি করে।
১৯৭১-এ এরাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলো। এরা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়েছিলো। সেই অস্ত্র দিয়ে আমাদের ৩০ লক্ষ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। আমাদের স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করে দিতে যুদ্ধ জাহাজ ৭ম নৌবহর পাঠিয়েছিলো। কিন্তু তথাপি তারা পরাজিত হয়েছিলো।
বাজপাখির দেশ সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয় ১৯৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।
আজও সেই ষড়যন্ত্রের খেলা শুরু হয়েছে।
তবে পঁচাত্তরে যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির খেলার পুতুল ছিলো, আজকের বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির খেলার এক দক্ষ ও নিপুন খেলোয়াড়। শেখ হাসিনা এখন পুতুল নয়,শেখ হাসিনা খেলোয়াড়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই। শেখ হাসিনা জিতবেই।
আজ ১১ জুলাই ২০২৩ তারিখ বাংলাদেশে যারা এসেছে, তারা পাকিস্তানে সেই পুরোনো খেলা খেলে এসেছে। ইমরান খানকে ফেলে দিয়েছে।
এখন খেলতে এসেছে বাংলাদেশে। আপনারা জানেন,
১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এই মোড়লগোষ্ঠী তাদের তাঁবেদার মোশতাক-জিয়াকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো, আজও তারেক মির্জা মান্না সাকি গং আনন্দে গদোগদো, তাদেরকে হিংস্র বাজপাখিরা ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু বাজপাখির মনে রাখা দরকার তারা ভিয়তনাম থেকে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। তারা আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছে। আমরা জঙ্গিবাদী তালেবানদের পক্ষে নই।
কিন্তু এই বাজপাখি মার্কিনীরা আলকায়দা কিংবা তালেবানদের জনক। তাদের তৈরি তালেবানরা তাদেরকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। তোমরা এখন সেই বুড়ো বাঘ,যে নড়তে চড়তে পারে না।
মিসেস পেকেলটাইড’স টাইগার। তোমার অর্থনীতি এখন ক্ষয়িষ্ণু, তোমার বেকারত্ব বাড়ছে,ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়ছে। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের কাছে তোমার ঋণের বোঝা দিনদিন বাড়ছে। তুমি এখন পতনোন্মুখ।
শেখ হাসিনা দুর্দান্ত সাহসে উচ্চারণ করেছেন, “আমি কারো কাছে নতজানু হবো না”
জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে সমৃদ্ধির পথে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তখন তাঁর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও উচ্চারণ করি—-
“হাত গুটাও মার্কিন
ফুরিয়ে গেছে তোমার দিন”
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।