ঢাকা ১২:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরী ও তরুণীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা করতেন আরাভ : : স্ত্রীর জবানবন্দি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১১:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
  • ১৫২ বার

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান যৌন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।

১৬৪ ধারার আদালতে দেওয়া সাতজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য রয়েছে। ওই সাতজন আসামির মধ্যে আরাভের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়াও রয়েছেন। তিনিও জবানবন্দিতে আরাভের যৌন ব্যবসার কথা স্বীকার করেছেন।

সুরাইয়া তার স্বীকারোক্তিতে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে রবিউলের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, রবিউল যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি নারীদের সঙ্গে পুরুষের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করতেন। একসময় তিনিও (সুরাইয়া) এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

সুরাইয়া জবানবন্দিতে আরও বলেন, যৌন ব্যবসার জন্য বনানীর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ফ্ল্যাটটি পাহারা দেওয়াসহ নানা কাজে যুক্ত ছিলেন স্বপন, দিদার, আতিক, মিজান ও সারোয়ার। তিনি (সুরাইয়া) দুই-এক দিন পরপর ফ্ল্যাটে গিয়ে যৌন ব্যবসার টাকা সংগ্রহ করতেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যার পর পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে বনানীর ফ্ল্যাটে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে খুন করা হয়।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আরাভ মামলার পর থেকেই পলাতক। সুরাইয়া জামিনে গিয়ে সম্প্রতি পালিয়েছেন।

জবানবন্দিতে উল্লেখ রয়েছে, আরাভকে যৌন ব্যবসায় সহযোগিতা করতেন স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া। আর পরিদর্শক মামুন রাজধানীর বনানীর যে ফ্ল্যাটে খুন হন, সেখানেই রবিউল তার সহযোগীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালাতেন।

২০১৮ সালের ৮ জুলাই মামুন খুন হন। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে রবিউল, সুরাইয়াসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

মামলার ১০ আসামির মধ্যে দুজন কিশোরী। তারা জামিনে আছে। অন্য আটজনের মধ্যে রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩) বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মামুন হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ওরফে আরাভ ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্টে নাম দেওয়া হয় আরাভ খান। এই পাসপোর্ট নিয়েই তিনি চলে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। গত সপ্তাহে দুবাইয়ে তার মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন তারকা যোগ দেন। এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় আসেন আরাভ।

অন্যদিকে পরিদর্শক মামুন খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়া অপর ছয় আসামিও বলেন, রবিউল যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বনানীর ফ্ল্যাটটির দায়িত্বে ছিলেন দিদার। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার দেড় বছর আগে রবিউলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। যৌন ব্যবসা করার জন্য রবিউল বনানীর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। একসময় তিনিও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন ফ্ল্যাটের ব্যবস্থাপক। তিনি, আতিক, স্বপন, মিজান ও সারোয়ার ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন। রবিউলের নির্দেশে ফ্ল্যাটে মেয়েদের সঙ্গে পুরুষের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করতেন তারা।

যদিও পরবর্তী সময় সুরাইয়াসহ সাত আসামি আদালতের কাছে জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। লিখিতভাবে আদালতের কাছে দাবি করেন, পুলিশের ভয়ে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারা পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনের সঙ্গে জড়িত নন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরী ও তরুণীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা করতেন আরাভ : : স্ত্রীর জবানবন্দি

আপডেট টাইম : ১২:১১:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান যৌন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।

১৬৪ ধারার আদালতে দেওয়া সাতজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য রয়েছে। ওই সাতজন আসামির মধ্যে আরাভের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়াও রয়েছেন। তিনিও জবানবন্দিতে আরাভের যৌন ব্যবসার কথা স্বীকার করেছেন।

সুরাইয়া তার স্বীকারোক্তিতে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে রবিউলের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, রবিউল যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি নারীদের সঙ্গে পুরুষের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করতেন। একসময় তিনিও (সুরাইয়া) এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

সুরাইয়া জবানবন্দিতে আরও বলেন, যৌন ব্যবসার জন্য বনানীর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ফ্ল্যাটটি পাহারা দেওয়াসহ নানা কাজে যুক্ত ছিলেন স্বপন, দিদার, আতিক, মিজান ও সারোয়ার। তিনি (সুরাইয়া) দুই-এক দিন পরপর ফ্ল্যাটে গিয়ে যৌন ব্যবসার টাকা সংগ্রহ করতেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যার পর পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে বনানীর ফ্ল্যাটে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে খুন করা হয়।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আরাভ মামলার পর থেকেই পলাতক। সুরাইয়া জামিনে গিয়ে সম্প্রতি পালিয়েছেন।

জবানবন্দিতে উল্লেখ রয়েছে, আরাভকে যৌন ব্যবসায় সহযোগিতা করতেন স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া। আর পরিদর্শক মামুন রাজধানীর বনানীর যে ফ্ল্যাটে খুন হন, সেখানেই রবিউল তার সহযোগীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালাতেন।

২০১৮ সালের ৮ জুলাই মামুন খুন হন। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে রবিউল, সুরাইয়াসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

মামলার ১০ আসামির মধ্যে দুজন কিশোরী। তারা জামিনে আছে। অন্য আটজনের মধ্যে রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩) বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মামুন হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ওরফে আরাভ ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্টে নাম দেওয়া হয় আরাভ খান। এই পাসপোর্ট নিয়েই তিনি চলে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। গত সপ্তাহে দুবাইয়ে তার মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন তারকা যোগ দেন। এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় আসেন আরাভ।

অন্যদিকে পরিদর্শক মামুন খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়া অপর ছয় আসামিও বলেন, রবিউল যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বনানীর ফ্ল্যাটটির দায়িত্বে ছিলেন দিদার। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, ঘটনার দেড় বছর আগে রবিউলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। যৌন ব্যবসা করার জন্য রবিউল বনানীর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। একসময় তিনিও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন ফ্ল্যাটের ব্যবস্থাপক। তিনি, আতিক, স্বপন, মিজান ও সারোয়ার ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন। রবিউলের নির্দেশে ফ্ল্যাটে মেয়েদের সঙ্গে পুরুষের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করতেন তারা।

যদিও পরবর্তী সময় সুরাইয়াসহ সাত আসামি আদালতের কাছে জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। লিখিতভাবে আদালতের কাছে দাবি করেন, পুলিশের ভয়ে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারা পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনের সঙ্গে জড়িত নন।