সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ-আগুন নিয়ে যা বলছে আ.লীগ-বিএনপি

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের ঘটনাসহ সাম্প্রতিক ঘটা বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনাগুলো নিছক কোনো দুর্ঘটনা না-কি নাশকতা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। এসব ঘটনা নিয়ে এক দল অন্য দলকে দেখছে সন্দেহের চোখে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা নাশকতার ইঙ্গিত দিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন।

এসব ঘটনাকে আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া চেষ্টা হিসেবে দেখছে বিএনপি। একইসঙ্গে চাপে ফেলতে বিএনপিকে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টাও হতে পারে বলে সন্দেহ দলটির। আর সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য কেউ নাশকতা করছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখার কথা বলছে আওয়ামী লীগ। প্রাসঙ্গিক হিসেবে অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়গুলো টানছেন তারা।

দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের এমন বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মনেও এক ধরনের ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।

সাধারণ মানুষ বলছেন, যেহেতু দেশের প্রধান দুই রাজজনৈতিক দল এসব ঘটনা নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে এবং তারাও এসব দুর্ঘটনাকে নাশকতার চোখে দেখছে, তাই বিষয়টি আতঙ্কের। কেননা এমন কিছু হলে সাধারণ কর্মজীবী, খেটে খাওয়া মানুষ রাস্তায় ও কর্মস্থলে অনিরাপত্তা তৈরি হবে।

বুধবার ২৩বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথসভায় গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের ঘটনাসহ সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারসহ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনাগুলো নাশকতা কিনা সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।

 

কাদের বলেন, ‘গুলিস্তান, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, কক্সবাজারের বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তা বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ঘটিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে সরকার। আন্দোলনে ব্যর্থতা যাদের, তারা এখন নাশকতার পথ খুঁজছে কিনা, নাশকতার পথে হাটছেন কিনা সেটাও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। সেটাই আমরা খতিয়ে দেখছি।

এসময় প্রায় এক দশক আগে বিএনপির আন্দোলনের সময় বাসে আগুন দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে আনেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে আমরা দেখেছি বিএনপি যখন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়, তারা আগুন সন্ত্রাসে মেতে উঠে। সে সময় তারা ভাঙচুর অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। সেই থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক আছি, দেশবাসী এবং জনগণকে আমরা সতর্ক করছি’

তবে আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলিস্তান সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনাকে রহস্যজনক হিসেবে দেখছেন।

মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারা দেশে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা রহস্যজনক। মঙ্গলবার বিকালে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের পাশে পাচঁতলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

‘এর আগে গত রবিবার রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হন। তার আগে গত শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে সাতজন মারা যান। যখনই সরকারবিরোধী আন্দোলন একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে ধাবিত হয়, ঠিক সেই মুহূর্তে সরকারি মহল পরিকল্পিতভাবে জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটিয়ে আসছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে।’ বলেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ইতোপূর্বে এ ধরনের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সুনির্দিষ্ট প্রতিকার হয়নি। কারণ, সরকারি মহলই এ ধরনের ঘটনা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত; যা পত্রপত্রিকায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধান করতে ব্যর্থতার দায়ে সরকারের পদত্যাগ করে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা অর্পণ করা উচিৎ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকারের আমলে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তাই একের পর এক ঘটনা ঘটলেও সরকার ভয়বাহ প্রাণহানির ঘটনা ঠেকাতে পারছে না। সব অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর