ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের দুই পররাষ্ট্রসচিব বৈঠকে বসছেন বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)। বৈঠকে আদানির বিদ্যুৎ, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, পাইপলাইনে তেল আমদানি, রোহিঙ্গা, সীমান্তসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোত্রার এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে এসেছেন তিনি। নানা কারণে দুই দেশ একে অপরের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এই বৈঠকেই আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হবে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোত্রা। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে কয়লা কেনার বিষয়টি যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি এখতিয়ার না, তারপরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।
বেশি দামে কয়লা কেনা নিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অবশ্যই আদানি গ্রুপকে কয়লার দাম কমাতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলছেন, যে দাম বলা হচ্ছে সেই দামে কয়লা কিনে ব্যবহার করে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে সেই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের পক্ষে কেনা কঠিন হবে। আদানি গ্রুপকে অবশ্যই কয়লার দাম কমাতে হবে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ বরাবরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারতের সহায়তা চেয়ে আসছে। বৈঠকেও এ ব্যাপারে ভারতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশে মিয়ানমারের যে ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে তাদের প্রত্যাবাসনে ভারতের জোরালো সমর্থন আদায়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তাহলে মিয়ানমারের উপর চাপ তৈরি হবে বলে মনে করেন এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলা হয় দুই দেশের প্রতিটি বৈঠকে। তারপরও সীমান্ত হত্যা থামছে না। নিয়মিতই বিএসএফের গুলিতে মারা যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এই বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পাবে।
তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে এবারও। যদিও অদূর ভবিষ্যতে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বলেই জানান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
জানা যায়, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সই নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে ভারতের অনাগ্রহ রয়েছে। এ কারণে সম্প্রতি ১২ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে জেআরসি বৈঠক। এ ধরনের বৈঠক নিয়মিত করার বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
এ ছাড়া দুই দেশের স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন, রেলপথ, বাণিজ্য ও পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, গত এক বছরে দুই দেশের মধ্যে অনেকগুলো উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকগুলো পর্যালোচনা হবে।