হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই বছর পর দশমবারের মতো কলকাতায় শুরু হলো বাংলাদেশ বইমেলা। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় এ বইমেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি। প্রধান অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সম্মিলিত উদ্যোগে এ বছর মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
কলকাতার বইপাড়া হিসেবে খ্যাত কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কয়ার প্রাঙ্গণে এ মেলা চলছে। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ বইমেলা চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম, কলকতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক দেবাশীষ কুমার, কবি সুধাংশু শেখর রায়, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, এ বইমেলা আজ দুই বাংলার মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। কাঁটাতার, ভিসা, পাসপোর্ট এসব শব্দকে একটা জিনিসই অতিক্রম করতে পারে। তা হলো, বই। বই আমাদেরকে জুড়তে পারে।
‘১৯৪৭ সালে দুভাগে ভেঙে যাওয়া বাংলার মনকে কখন ভাগ করতে পারেনি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তি। দুই বাংলাই একইসঙ্গে আনন্দে মেতে উঠি, আবার ব্যথা বোধ করি। আর সে হৃদয়কে দুইপাড়ে জুড়ে রেখেছে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বের টালমাটাল পরিস্থিতিতেও দুই বাংলাকে শান্তি ও সহিষ্ণুতার পথ দেখাচ্ছেন। চক্রান্ত থাকবে, কুৎসা থাকবে। সবকিছু অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাই নিজের দিকে তাকান, নিজেকে চিনুন, আর নিজেকে চিনতে বইয়ের বিকল্প হয় না।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি বলেন, বইয়ের চেয়ে ভালো সঙ্গী মানুষের জন্য হতে পারে না। কলেজ স্ট্রিট হলো কলকাতার বইপাড়া। চারিদিকে শুধু নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমন একটি জায়গায় এ বইমেলা হওয়াটা সত্যিই খুব আনন্দের।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছিলেন। এরপর ১৯৭১ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের গঠনের মধ্যদিয়ে বাংলাভাষা আরও উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন।
‘এরপর ১৯৭৪ সালে তিনি যখন জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিলেন, তখন এ ভাষা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা রাখেন।’
দীপু মণি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে ভাতৃত্ব ও সৌহার্দের বন্ধন আরও গভীর হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির এ অঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা এ সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।
মমতা ব্যানার্জি ও শেখ হাসিনার মধ্যেকার সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহভাজন হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, কলেজ স্ট্রিট হলো বইয়ের আঁতুড় ঘর। আমি এখান থেকে বহুবার বই কিনেছি। এটি কলকাতার বইপাড়া। ফলে এখানে বইমেলা হওয়াটা খুবই সৌভাগ্যের বিষয়।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, এটি শুধু বই মেলা কেনা-বেচার মেলা নয়, দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন তৈরির মেলা। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ নিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৬৮টি স্টলে ৭৭টি বাংলাদেশি প্রকাশনার বই কলকাতার পাঠকদের কাছে হাজির করা হয়েছে।
২০১৯ সালে নবম বাংলাদেশ বইমেলা হয়েছিল মোহরকুঞ্জ প্রাঙ্গণে। সেবার মোট ৮০টি প্রকাশনী অংশ নিয়েছিল। অষ্টম মেলায় ছিল ৬৯টি ও সপ্তম মেলায় ৪৭টি বাংলাদেশি প্রকাশনী অংশ নেয়।
প্রতিটি স্টলে বিপুল বাংলাদেশি বইয়ের সম্ভারের পাশাপাশি কলকাতার বইপ্রেমীদের জন্য প্রতিদিন থাকছেন একমঞ্চে দুই বাংলার প্রতিথযশা শিল্পীদের আসর। অংশ নেবেন কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করছে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি।
একসময় কলকাতায় বাংলাদেশি বইয়ের প্রাপ্তিস্থান ছিল এ বইমেলা। পরে পাঠক সমাবেশ ও পত্রভারতীর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশি বইয়ের স্থায়ী ঠিকানা হয় কলকাতার কলেজ স্ট্রিট। ২০১১ সালে কলকাতায় পথচলা শুরু বাংলাদেশ বইমেলার।
শুরু থেকে তিনবছর গগনেন্দ্র প্রদর্শণশালায় হয় এ বইমেলা। পরের চার বছর এ মেলা হয় রবীন্দ্রসদনের খোলা প্রাঙ্গণে। তারপর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ বইমেলা হয়ে আসছিল রবীন্দ্রসদনের পশ্চিম পাশে মোহরকুঞ্জ প্রাঙ্গণে।