ঢাকা ০৬:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঁশের ‘বানা’য় চলে সংসারের চাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৬:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০১৬
  • ৭৪৯ বার

জেলার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের একটি গ্রাম জবরা। এ গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের সংসার চলছে বাঁশের বানা তৈরি করে।

পরিবারেরতো বটেই এমনকি ঘিওর উপজেলার অর্থনৈতিতেও বিশেষ অবধান রেখে চলছে এ বানা শিল্প। এ হতভাগা পরিবারগুলিতে একসময় দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী।অভাব-অনটনের কারণে পরিবারগুলো খুবই কষ্টে দিন কাটাতো। বর্তমানে বানা তৈরি করে তারা সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। আর দারিদ্র্যকে পাঠিয়েছে জাদুঘরে।

দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সন্তানরাও নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে।

জাবরা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারগুলোর সবাই বাঁশের বানা তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে। তবে এ কাজে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে নারীরাও কাজ করে যাচ্ছে। বাড়ির বউ-ঝিরা অবসর সময়ে বসে না থেকে ঘর গৃহস্থালীর কাজ শেষে যোগ দেয় পুরুষদের সঙ্গে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামটিতে উৎসবের আমেজে চলছে ওই কাজ।

রতন রাজবংশি জানান, ১২০টি পরিবারের মত তিনিও বানা তৈরির কাজে সরাসরি জড়িত। তবে আরও ৫০-৬০টি পরিবার এ বানা পাইকারী ক্রয় করে খুচরা ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। পৈত্রিক পেশা হিসেবেই তারা ওই কাজ করে থাকে বলে তিনি জানান। এখানে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজে মাসে গড়ে ৫-৭ হাজার টাকা উপার্জন করে। এতে তাদের পড়াশোনার খরচ ছাড়াও পরিবারের আর্থিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

গৃহবধূ আমেলা বেগম (৪০) জানান, বিয়ের পর থেকেই তিনি বানা তৈরি করছেন। প্রতিদিন ঘরের কাজের পাশাপাশি দুটি বানা তৈরি করা যায়। বছরের বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত কাজের চাহিদা একটু বেশি থাকে। গড়ে দিন প্রতি তিন চারশ টাকার মতো আয় হয়।

পাইকারী উৎপাদনকারী উজ্জ্বল কুমার রাজবংশী জানান, ৯ ফুট ১৫ ফুট আয়তনের একটি বানা তৈরি করতে গড়ে ১১শত টাকার মতো। বিক্রি করেন ১২ শ’ থেকে ১৩ শত টাকা। পাইকাররা বাড়ি থেকে এগুলো কিনে নিয়ে যায়।

জাবরা মাঝিপাড়া গ্রামের মাদারি রাজবংশি জানান, আমাদের গ্রামে তিন যুগ ধরে বানা তৈরির কাজ করে আসছে। লাভ যাই হোক না কেন এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সংস্থা আমাদের পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা এ শিল্পকে অনেক এগিয়ে নিতে পারব। বেকার যুবক- যুবতীরাও এ কাজ শিখে পুঁজি নিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারবে।

জাবরা গ্রামের বাঁশের বানা ঢাকা, গাজিপুর, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, পাবনা, সাতক্ষিরা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, নেত্রকোনা, নরসিংদীসহ প্রায় ১৪ টি জেলায় পাইকারি বিক্রি হয়ে আসছে।

স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী পূর্ণিমা রাজবংশী ও মেধাবী ছাত্র মাসুম মিয়া জানান, সংসারে অন্যান্য কাজ ও লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মাকে সাহায্য করি। তাতে বাবা মায়ের অনেকটা কষ্ট দূর হয় এবং সেই সঙ্গে কিছু বাড়তি আয়ও হয়।

এ ব্যাপারে বানিয়াজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চতু জানান, সরকারি ও বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এ বানা তৈরি ও পাইকারী বিক্রেতাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে তাহলে এই এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ বানা শিল্পের আরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন। শিক্ষিত ও বেকার যুবক- যুবতীসহ গৃহিনীরাও পুঁজি পেলে এ নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাঁশের ‘বানা’য় চলে সংসারের চাকা

আপডেট টাইম : ১২:৫৬:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০১৬

জেলার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের একটি গ্রাম জবরা। এ গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের সংসার চলছে বাঁশের বানা তৈরি করে।

পরিবারেরতো বটেই এমনকি ঘিওর উপজেলার অর্থনৈতিতেও বিশেষ অবধান রেখে চলছে এ বানা শিল্প। এ হতভাগা পরিবারগুলিতে একসময় দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী।অভাব-অনটনের কারণে পরিবারগুলো খুবই কষ্টে দিন কাটাতো। বর্তমানে বানা তৈরি করে তারা সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। আর দারিদ্র্যকে পাঠিয়েছে জাদুঘরে।

দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সন্তানরাও নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে।

জাবরা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারগুলোর সবাই বাঁশের বানা তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে। তবে এ কাজে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে নারীরাও কাজ করে যাচ্ছে। বাড়ির বউ-ঝিরা অবসর সময়ে বসে না থেকে ঘর গৃহস্থালীর কাজ শেষে যোগ দেয় পুরুষদের সঙ্গে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামটিতে উৎসবের আমেজে চলছে ওই কাজ।

রতন রাজবংশি জানান, ১২০টি পরিবারের মত তিনিও বানা তৈরির কাজে সরাসরি জড়িত। তবে আরও ৫০-৬০টি পরিবার এ বানা পাইকারী ক্রয় করে খুচরা ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। পৈত্রিক পেশা হিসেবেই তারা ওই কাজ করে থাকে বলে তিনি জানান। এখানে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজে মাসে গড়ে ৫-৭ হাজার টাকা উপার্জন করে। এতে তাদের পড়াশোনার খরচ ছাড়াও পরিবারের আর্থিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

গৃহবধূ আমেলা বেগম (৪০) জানান, বিয়ের পর থেকেই তিনি বানা তৈরি করছেন। প্রতিদিন ঘরের কাজের পাশাপাশি দুটি বানা তৈরি করা যায়। বছরের বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত কাজের চাহিদা একটু বেশি থাকে। গড়ে দিন প্রতি তিন চারশ টাকার মতো আয় হয়।

পাইকারী উৎপাদনকারী উজ্জ্বল কুমার রাজবংশী জানান, ৯ ফুট ১৫ ফুট আয়তনের একটি বানা তৈরি করতে গড়ে ১১শত টাকার মতো। বিক্রি করেন ১২ শ’ থেকে ১৩ শত টাকা। পাইকাররা বাড়ি থেকে এগুলো কিনে নিয়ে যায়।

জাবরা মাঝিপাড়া গ্রামের মাদারি রাজবংশি জানান, আমাদের গ্রামে তিন যুগ ধরে বানা তৈরির কাজ করে আসছে। লাভ যাই হোক না কেন এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সংস্থা আমাদের পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা এ শিল্পকে অনেক এগিয়ে নিতে পারব। বেকার যুবক- যুবতীরাও এ কাজ শিখে পুঁজি নিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারবে।

জাবরা গ্রামের বাঁশের বানা ঢাকা, গাজিপুর, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, পাবনা, সাতক্ষিরা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, নেত্রকোনা, নরসিংদীসহ প্রায় ১৪ টি জেলায় পাইকারি বিক্রি হয়ে আসছে।

স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী পূর্ণিমা রাজবংশী ও মেধাবী ছাত্র মাসুম মিয়া জানান, সংসারে অন্যান্য কাজ ও লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মাকে সাহায্য করি। তাতে বাবা মায়ের অনেকটা কষ্ট দূর হয় এবং সেই সঙ্গে কিছু বাড়তি আয়ও হয়।

এ ব্যাপারে বানিয়াজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চতু জানান, সরকারি ও বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এ বানা তৈরি ও পাইকারী বিক্রেতাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে তাহলে এই এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ বানা শিল্পের আরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন। শিক্ষিত ও বেকার যুবক- যুবতীসহ গৃহিনীরাও পুঁজি পেলে এ নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।