ঢাকার জেলা প্রশাসক ব্যস্ত ‘অন্যকাজে’: একের পর এক সরকারি সম্পত্তি বেহাত –

শত শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি একের পর এক বেহাত হয়ে গেলেও ঢাকা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এদিকে নজর নেই। বরং কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ তুললে বা নজরে আনার চেষ্টা করলেও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তা খতিয়ে দেখতে কিংবা পদক্ষেপ নিতে যেন মোটেই আগ্রহী নন। এর কারণ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিজেরাই এসব দখল কর্মকাণ্ডে নেপথ্য থেকে সহযোগিতা এবং এসব সরকারি বাড়ি, প্লট, সম্পত্তি দখল ও বিক্রির ভাগবাটোয়ারায় মোটা অংকের অর্থ পান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুরান ঢাকায় সরকারি প্লট এবং বাড়িগুলো বেহাত হওয়া সম্পর্কে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে এ সম্পত্তিগুলোর প্রত্যেকটিই সরকারি গেজেট ও সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় আছে। এ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রকাশিত গেজেটও শীর্ষ কাগজের হাতে আছে। কিন্তু কাগজপত্রে বা গেজেটে সরকারের মালিকানা থাকলেও ভূমিদস্যুরা এ বাড়িগুলো জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের গেজেট এবং বর্তমান বাস্তব অবস্থা

পুরান ঢাকা সম্পর্কে সরকারের মালিকানাধীন অর্পিত সম্পত্তির তালিকা সর্বশেষ ২০১২ সালের ৬ মে গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত এই গেজেটের ১২০ নং ক্রমিকে নবাবপুর রোডের ২৩৪ এবং ২৩৫ হোল্ডিংয়ের কথা উল্লেখ আছে। এতে বলা হয়, ইপি কেস নং ২৭/৭২ এর মাধ্যমে এই সম্পত্তিটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ১৯৭২ সাল থেকেই এই সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ ও ভোগদখল করে আসছিলো সরকার। এখানে ৭টি দাগে মোট .১৬৮৯ একর সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়া গেজেটের ৩২০ নং ক্রমিকে ২৩৪ নবাবপুর রোডের ৬টি দাগে আরো .১৪০৬ একর সম্পত্তি অর্পিত বলে উল্লেখ রয়েছে। এটিরও কেস নম্বর একই এবং ১৯৭২ থেকে সরকারের দখলে রয়েছে। কিন্তু, ২০১২ সালের গেজেটে মালিকানা ও দখল সরকারের হাতে রয়েছে বলে উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে এটির দখল আর সরকারের হাতে নেই। জাবেদ-আবেদের নেতৃত্বাধীন জালিয়াত ও দখলবাজ চক্র ইতিমধ্যে এই অতি মূল্যবান সম্পত্তিটি দখল করে জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এর উপর ৭ তলা বিশিষ্ট ‘জাবিন টাওয়ার‘ নামে বিশাল ভবন নির্মাণ করেছে। দোকান ও ফ্ল্যাট আকারে এই ভবন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রিও করে দিয়েছে।

গেজেটের ১২৪ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ রয়েছে ২২২ হোল্ডিংয়ের নবাবপুর রোডের পাকা বাড়িটির কথা। এখানে সরকারের মোট ১২ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। ইপি কেস নং ৮০/৬৯ এর মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে এই সম্পত্তিটি ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ১৬ জুন, ১৯৬৯ তারিখে এই সম্পত্তিটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। সেই থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে লিজ দিয়ে লিজ মানিও আদায় করছিলো সরকার। ২০১২ সালে গেজেট প্রকাশিত হওয়ার সময় পর্যন্ত এটি সরকারের দখলেই ছিলো। ভূমি জরিপ অধিদফতরের রেকর্ডেও সরকারের অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখানো আছে। অথচ, এরপর দুই ভাইয়ের জালিয়াতচক্র সরকারি সম্পত্তিটি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে এখানকার পুরাতন ভবন ভেঙে বহুতলা বিশিষ্ট ভবন ‘মরিয়ম টাওয়ার’ নির্মাণ শুরু করেছে। নির্মীয়মান এই টাওয়ারের দোকান ও ফ্ল্যাট বিক্রির কাজও চালিয়ে যাচ্ছে একই সঙ্গে।

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত গেজেটের ৯৩ নং ক্রমিকে উল্লেখ আছে নবাবপুর রোডের ২২৯ হোল্ডিংয়ের কথা। সাড়ে ৬ শতাংশ জমির ওপর তৈরি করা এই বাড়িটি ১৯৬০ সালে ইপি কেস নং ৯০৬/৬০ এর মাধ্যমে সরকারের অর্পিত সম্পত্তিতে তালিকাভুক্ত হয়। ১১ মে, ১৯৭২ সালে এই সম্পত্তির দখল এবং নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে আসে। ২০১২ সালে গেজেট প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত এটি তা-ই ছিলো। অর্থাৎ এ সময় পর্যন্ত সরকার লিজ দিয়ে লিজ মানি আদায় করছিলো। ভূমি জরিপ অধিদফতরের রেকর্ডে এখনো এটি অপিত সম্পত্তি হিসেবে দেখানো আছে। কিন্তু, কাগজপত্রে সরকারের মালিকানা থাকলেও ইতিমধ্যে চলে গেছে সন্ত্রাসী ও জালিয়াতচক্রের হাতে। জাবেদ-আবেদ এখানকার পুরাতন ভবনটি ভেঙে এখানে ইতিমধ্যে ‘ড্রয়েলিং পয়েন্ট’ নামে ৫ তলা ভবন নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রিও করে দিয়েছে।

নবাবপুর রোডের ৮৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের সম্পত্তিটি ইপি কেস নং ১৩০৮/৬৩ এর মাধ্যমে সরকারের অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এখানে দুটি দাগে মোট ১১ শতাংশ জমির ওপর পাকা বাড়ি থাকা অবস্থায় ১৮ জুন, ১৯৭৫ সালে এই সম্পত্তিটি সরকারের দখলে আসে। ২০১২ সালে গেজেট প্রকাশিত হওয়ার সময় পর্যন্ত এটি সরকারের দখল এবং মালিকানায় ছিলো। গেজেটের ৭১৭ নম্বর ক্রমিকে এই সম্পত্তির কথা উল্লেখ আছে। ভূমি অফিসের রেকর্ডেও তা-ই আছে। কিন্তু, কাগজপত্রে এখনো সরকার মালিক হলেও দখল ইতিমধ্যে জালিয়াতচক্র এবং দখলবাজ জাবেদ-আবেদের হাতে চলে গেছে। তারা পুরাতন ভবন ভেঙে এখানে ‘সাজেদা আলী প্লাজা’ মার্কেট নির্মাণ করেছে।

নবাবপুর রোডের ৫৫/৫৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের সম্পত্তির মালিক সরকার ১৯৬৮ সাল থেকেই। ইপি কেস নং ১৮৮/৬৮ এর মাধ্যমে ওই সময় এটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এই সম্পত্তি সরকারের দখলে নেয়া হয় ২৯ মার্চ, ১৯৮৩ সালে। ভূমি অফিসের রেকর্ড এবং ২০১২ সালের প্রকাশিত গেজেট অনুসারে এখনো সরকার এই সম্পত্তির মালিক ও দখলদার হিসেবে আছে। অর্পিত সম্পত্তি সম্পর্কিত সরকারি গেজেটের ১০৬০ নং ক্রমিকে এই সম্পত্তির কথা এভাবেই উল্লেখ আছে। কিন্তু, জাবেদ-আবেদ সম্প্রতি এই সম্পত্তি দখল করে এখানকার পুরাতন ভবন ভেঙে বহুতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ এক তলা পর্যন্ত উঠে গেছে।

নরেন্দ্র বসাক লেনের ৫০ নম্বর হোল্ডিংয়ের সরকারি মালিকানাধীন অর্পিত সম্পত্তিটিও সম্প্রতি দখলে নিয়ে এখানে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে জাবেদ-আবেদ। বর্তমানে নতুন ভবনের বেজমেন্টের কাজ চলছে। অথচ ২০১২ সালে প্রকাশিত ভূমি মন্ত্রণালয়ের গেজেটের ৯৩৯ নম্বর ক্রমিকে এটিকে অর্পিত সম্পত্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গেজেটে বলা হয়, ইপি কেস নং ২৫/৬৮ এর মাধ্যমে ১৯৬৮ সালে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে এই সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই সম্পত্তি সরকারের দখলে নেয়া হয়েছিলো ওই বছরের অর্থাৎ ১৯৬৮ সালের ১৮ মার্চ। সেই থেকে সম্পত্তিটির মালিকানা এবং দখল সরকারেরই। এই সম্পত্তি লিজ দিয়ে জেলা প্রশাসন লিজ মানিও আদায় করে আসছে। সেই সম্পত্তিই এখন হঠাৎ বেদখল হয়ে গেলো।

জেলা প্রশাসনের দুর্বলতা ও কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এভাবে একের পর এক সরকারের অতি মূল্যবান সম্পত্তিগুলো বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তাও একেবারে ডিসি অফিসের নাকের ডগায়-ই।

ডিসি-এডিসির লুকোচুরি

সরকারের অর্পিত সম্পত্তি বেদখল হওয়া প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মহাপরিচালক পদে কর্মরত) কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। গত ডিসেম্বরের কথা এটি।

জালিয়াত চক্র ও সন্ত্রাসীদের হাতে সরকারের মালিকানাধীন অর্পিত সম্পত্তিগুলো একের পর এক বেদখল হওয়া সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু তথ্য শীর্ষ কাগজের কাছে এসেছে বলে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। এব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে এবং অনুসন্ধানে ওইসব তথ্যের সত্যতাও মিলেছে, বলা হয় জেলা প্রশাসককে। এ বিষয়গুলোতে বিস্তারিত তথ্যসহ জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জেলা প্রশাসক (তৎকালীন) তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া শুরুতে বিষয়টিতে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি জানতাম না, এভাবে সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনা আমার নলেজে ছিল না। আপনি জানালেন, তো ভালোই হল। আমি এখনই পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ ব্যাপারে কিছু জানতে হলে পরে যোগাযোগ করুন।’ শীর্ষ কাগজের কাছে এ সংক্রান্ত যেসব প্রাথমিক তথ্য ছিল তাও তিনি চেয়ে নিলেন।

পরবর্তীতে ডিসি তোফাজ্জেল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি এড়িয়ে যেতে লাগলেন। ফোনে ম্যাসেজ পাঠানোর পরও তার কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া গেলো না। বহু চেষ্টার পর এক পর্যায়ে ফোনে তাকে পাওয়া গেলে তিনি অজুহাত হিসেবে বললেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, ওই ব্যস্ততার কারণেই সরকারি সম্পত্তির খোঁজ নেয়ার কাজটিও তিনি করতে পারেন নি। ডিসি সাহেব তথ্যের জন্য আবার পরে যোগাযোগ করতে বললেন।

তবে অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না। মোবাইল ফোনে আবারও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে একই সমস্যায় পড়তে হলো। ফোন করা হচ্ছে কিন্তু তিনি রিসিভ করছেন না। এভাবেই চললো কয়েক দিন। অবশেষে হঠাৎ একদিন মোবাইল ফোনে পাওয়া গেল তাকে। কিন্তু তিনি ভীষণ ব্যস্ত বলে মনে হল। তার হাতে মোটেই কথা বলার সময় নেই, এমনই ইঙ্গিত দিলেন। তিনি শুধু জানালেন, এডিসি (রাজস্ব) কে এ বিষয় খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যাবতীয় তথ্যের জন্য এডিসির (রাজস্ব) সঙ্গে এ প্রতিবেদককে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিলেন। এরপর এডিসি (রাজস্ব) এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানালেন, তাকে নাকি ডিসি সাহেব কোন কিছুই বলেননি। এ বিষয়ে ডিসির সঙ্গে ফের যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, আমি এখনই এডিসিকে বলে দিচ্ছি। তবে যতবার এডিসি সাহেবের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে তিনি বলেছেন, ‘খোঁজ নিচ্ছি, দেখছি, তদন্তের জন্য লোক লাগিয়েছি’ ইত্যাদি।

ডিসি সাহেব অফিসে আছেন কি-না, খোঁজ নিয়ে এ প্রতিবেদক আবার একদিন পুরান ঢাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভিজিটররা ডিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করছিলেন। সাক্ষাতের জন্য এ প্রতিবেদকের ভিজিটিং কার্ড পাঠানো হলো। অনেকক্ষণ পর সাক্ষাতের অনুমতি পাওয়া গেল। এর মধ্যে অনেক ভিজিটরই সাক্ষাৎ করলেন।

প্রতিবেদক কক্ষে প্রবেশ করেই ডিসি সাহেবকে রগচটা মেজাজ দেখে ভড়কে গেলেন। ডিসি সাহেব প্রশ্ন করলেন, কি বিষয়? প্রতিবেদক বললেন, ‘সরকারের মালিকানাধীন অর্পিত সম্পত্তি বেহাত হওয়া সম্পর্কে তথ্য চেয়েছিলাম। এডিসি (রাজস্ব) এর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’ ডিসি বললেন, আপনাদের এসব তথ্য নিয়ে তো আমরা বসে নেই। আমাদের তো আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, নাকি? আমি এডিসি সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছি। আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনিই এ বিষয়টি দেখাশুনা করবেন।

সেদিন আর এডিসি (রাজস্ব) সাহেবকে তার দফতরে পাওয়া গেল না। খোঁজখবর নিয়ে অন্য একদিন এডিসি (রাজস্ব) এর সঙ্গে তার অফিস কক্ষে সাক্ষাৎ করলেন এ প্রতিবেদক। এডিসি (রাজস্ব) বললেন, সহকারী কমিশনার মমতাজ বেগমকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মমতাজ বেগমের কক্ষেও এ প্রতিবেদক একাধিক বার সাক্ষাৎ করেছেন। বারবার সাক্ষাতের এক পর্যায়ে সহকারী কমিশনার মমতাজ বেগম জানালেন, বেদখল হওয়া ওইসব সম্পত্তিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারছিনা।

প্রতিবেদক বললেন, আমার জানামতে আলোচ্য সম্পত্তিগুলোর একটিতে মাত্র আদালতের স্টাটাসকো আছে। তাও এক তরফা। সরকারের তরফ থেকে এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সরকার পদক্ষেপ নিলে এ স্টাটাসকো থাকার কথা নয়। তাছাড়া স্টাটাসকো (স্থিতাবস্থা) থাকলে তো নতুন কিছু করার কোনো পক্ষেরই সুযোগ থাকে না। কিন্তু পুরাতন ভবন ভেঙে নতুন ৭ তলা ভবন উঠে গেল কীভাবে সেখানে? অন্য সম্পত্তিগুলোতে সম্ভবত স্থগিতাদেশ নেই। সেগুলো দখল উচ্ছেদের ব্যাপারে এ পর্যন্ত কী তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

মমতাজ বেগম বললেন, হ্যাঁ আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি। পরে সহকারী কমিশনার মমতাজ বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব সম্পত্তির একটিরও ফাইলপত্রের কী অবস্থা তা জানাতে পারেননি। বরং তিনি কেবল এসব সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় তার অসহায়ত্বের কথাই প্রকাশ করলেন।

জাবেদ-আবেদের প্রতিবাদ এবং প্রতিবেদকের বক্তব্য

৭ মার্চ, ২০১৬ ইং তারিখের সংখ্যায় ‘জেলা প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকা: পুরান ঢাকায় সরকারি সম্পত্তি দখলের মহোৎসব’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করেছেন সরকারি সম্পত্তি দখলের জন্য আলোচিত সেই জাবেদ-আবেদ। উকিল নোটিশের মাধ্যমে তারা এই প্রতিবাদ জানান।

কিন্তু, প্রতিবাদপত্রে তারা প্রকাশিত তথ্যকে মিথ্যা প্রমাণ করার মতো কোনো তথ্য বা যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেননি। শুধুমাত্র গৎবাঁধাভাবে প্রতিবেদনকে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রতিবেদনে সরকারের যে সম্পত্তিগুলো জাবেদ-আবেদ নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট দখল করে নিয়েছে বলে সুনির্দিষ্টভাবে হোল্ডিং নম্বরসহ উল্লেখ করা হয়েছে সে সম্পর্কে প্রতিবাদপত্রে কিছুই বলা হয়নি। সেইসব হোল্ডিং নম্বরের উল্লেখই করা হয়নি প্রতিবাদপত্রে।

প্রতিবাদপত্রে ২১৯ এবং ২২০ নবাবপুর রোড- মাত্র এই দুটি হোল্ডিং নম্বর তাদের বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ, এই দুটি হোল্ডিংয়ের সম্পত্তি সম্পর্কে শীর্ষ কাগজের ওই প্রতিবেদনে কিছুই বলা নেই।

তবে, এই দুটো সম্পত্তির মধ্যে ২২০ নম্বরও যে তাদের নয় সে সম্পর্কিত প্রমাণপত্র শীর্ষ কাগজের হাতে রয়েছে।

বস্তুত, জাবেদ-আবেদ যে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছেন তা নামেমাত্র। বাস্তবে এই প্রতিবাদপত্রে তারা প্রতিবেদনের সত্যতা সম্পর্কে পাঠকের মনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে এমন বিন্দুমাত্র তথ্যও উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে ‘নামেমাত্র’ এই প্রতিবাদপত্রের মাধ্যমে তারা শীর্ষ কাগজের প্রতিবেদনটিই যে পুরোপুরি সঠিক, সেটা প্রমাণ করলেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর