এম ইলিয়াস আলীর স্থলাভিষিক্ত হলেন ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন। হঠাৎ করে ইলিয়াস গুম হয়ে যাওয়ার পর সিলেট বিভাগ বিএনপিকে চালিয়ে নেয়ার অনেকটা দুরূহ কাজকে তিনি সহজভাবে করেছিলেন। পোড়াতে হয়েছিল অনেক কাঠখড়ও। এরপরও সময়ের বিপরীতে সিলেট বিভাগে বিএনপির হাল ধরে রেখেছিলেন ডা. জীবন।
শনিবার দুপুরে দলের চেয়ারপার্সনের তরফ থেকে বিভাগওয়ারী যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল সেটিতে ছিল না সিলেট বিভাগে কারও নাম। ফলে সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক কে- এ নিয়ে শুরু হয় রহস্য। সিলেট বিএনপিতে শুরু হয় তোলপাড়।
বিএনপি নেতারা আন্দাজে ধরে নিয়েছিলেন, গুম হওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলীকেই রাখা হচ্ছে সিলেট বিভাগের বিএনপির কাণ্ডারি। এ নিয়ে শুরু হয়েছিল কথাবার্তা। কিন্তু রাতেই চেয়ারপার্সনের তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হলো সিলেট বিভাগে বিএনপির নতুন কাণ্ডারির নাম। আর তিনি হচ্ছেন ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) পদে আসীন থাকাকালেই ২০১২ সালে ঢাকা থেকে গুম হয়ে যান ইলিয়াস আলী। আর ইলিয়াস গুমের পর বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে সহ-সাংগঠনিক
সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবনের ওপর। ওই সময় দলের সহ-সভাপতি ছিলেন শমসের মবীন চৌধুরী। কিন্তু পরবর্তীতে তিনিও দল থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে পুরো দায়িত্বটি চলে আসে জীবনের ওপর।
ডা. জীবনের নেতৃত্বেই এবার সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিল অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করার পেছনে ডা. জীবনের ভূমিকা ছিল। এছাড়া আন্দোলনকালে তিনি সিলেট বিএনপিকে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সিলেট জেলা বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে থেকেই প্রায় নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল ডা. জীবনই হচ্ছেন সাংগঠনিক সম্পাদক। কারণ, ইলিয়াস আলীর পর তিনি শক্ত হাতে সিলেটে বিএনপির হাল ধরেছিলেন। কিন্তু কাউন্সিলের সময় সিলেট ও হবিগঞ্জ থেকে বেশ কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদকের জন্য লবিং শুরু করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডা. জীবনকেই করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানিয়েছেন, ডা. জীবনের নেতৃত্বে সিলেট বিভাগে বিএনপি অনেক এগিয়েছে, আগামীতেও অনেক এগিয়ে যাবে। তার যোগ্য নেতৃত্বে বিভাগে বিএনপি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এদিকে, গুম থাকার কারণে কাউন্সিলে অনুপস্থিত ছিলেন ইলিয়াস আলী। তাকে কমিটিতে রাখা হচ্ছে কিনা এ নিয়ে কাউন্সিলের পূর্বে বেশ কথাবার্তা হয়েছিল।
কিন্তু দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলী বিএনপিতেই থাকছেন। তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে নেয়া হলেও দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাকে রাখা হতে পারে। তেমনটি দলের হাইকমান্ড চিন্তা করছে। পাশাপাশি সিলেট বিএনপির প্রবীণ নেতা এম এ হক, সিলেটে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও আসতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ পদে।
এছাড়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ থেকে যে কাউকে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে লন্ডনের কোনো নেতার নামও থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে, সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পরই ভোটের রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন।
এতদিন তিনি বাড়তি দায়িত্বে থাকলেও এবার সরাসরি তার সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতায় চলমান ইউনিয়ন নির্বাচনে সিলেট বিভাগে বিএনপি কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেটিই এখন দেখার বিষয়। -এমজমিন