হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকায় এখন বোরো আবাদের ধুম পড়েছে। কিছুদিন আগেও সেখানে ছিল দিগন্ত বিস্তৃত বিশাল জলরাশি। আর কিছুদিন পরই ধানগাছগুলো বড় হয়ে হাওরের বুকে বইবে সবুজের ঢেউ। ক্ষেতের বুকে চলবে রৌদ্র-ছায়ার লুকোচুরি খেলা।
হবিগঞ্জের হাওর এলাকায় পিউম ফুলকে অনেকে বলে ঝরনা ফুল। হবিগঞ্জসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সব হাওরেই পিউম ফুল দেখা যায়। মূলত শুকনো মৌসুমে চারা গজায়। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফোটে পিউম ফুল। হাওরে পুরো বর্ষার জল আসার আগেই ফলের বীজ পরিপক্ব হয়ে ভূমিতে পড়ে। সেই বীজ আবার পানিতে ভেসে ছড়িয়ে পড়ে কাছে-দূরে। পানি কমলেই সেই বীজ থেকে চারা গজায়। কেউ কেউ শখ করে এই গাছ সংগ্রহ করে নিজের বাগানেও লাগায়।
হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী জানালেন, পিউম একবর্ষজীবী (এক বছর বাঁচে এমন) দ্রুতবর্ধনশীল বীরুৎ জাতীয় গাছ। এটি তিন থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। পিউম ফুলগাছের কাণ্ড সবুজ, কাঁটাযুক্ত ও ঝোপালো। শাখার আগায় লম্বা মঞ্জরিতে ফুল ধরে। ফুল হয় বেগুনি-গোলাপি অথবা সাদা রঙের। প্রতিটি ফুলের পাঁচটি পাপড়ি আর ছয়টি লম্বা পুংকেশর থাকে। প্রজাপতি এ ফুলের মধু পান করতে আসে।
শহরেও কারো কারো ফুলের বাগানে মাঝে মাঝে পিউম দেখা যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cleome hassleriana| ইংরেজি নাম Spider flower, Pink Queen । পিউম আর্দ্র পতিত জমি, হাওরের ঢাল, বাড়িঘরের আশপাশ এবং ছোট- বড় সড়কের পাশে ব্যাপকভাবে জন্মায়। প্রকৃতিতে ছড়ায় রঙের শোভা। পিউম আদিতে দক্ষিণ আমেরিকার উদ্ভিদ ছিল। এর আদি আবাস আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে ও দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিল।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এ গাছের তেমন রোগ-বালাই নেই। অল্প পানিতেই এরা স্বচ্ছন্দে টিকে থাকে ও বাড়ে। পিউম ফুল ফোটার সময় ভিড় জমাবে হরেক রঙের প্রজাপতি, ছোট পাখি আর বিভিন্ন মৌ লোভী পতঙ্গ। সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব মত দিলেন, হাওর এলাকার পর্যটনকে এগিয়ে নিতে পিউম ফুলকে অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে।