বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য তিন লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর মতো মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্য বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ সহায়ক খাতগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ থাকছে নতুন বাজেটে। এর মধ্য দিয়ে ঘোষিত রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০১৮ সালের শেষ দিকে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। বাংলাদেশে সাধারণত কোনো সরকারের মেয়াদের শেষ এক-দেড় বছরজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলে। তাই শেষ অর্থবছরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। এটি মাথায় রেখেই অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন যতটা সম্ভব ২০১৬-১৭ অর্থবছরেই বাস্তবায়ন করতে মনোযোগী সরকার। তিনি বলেন, সরকার আগামী অর্থবছরের অগ্রাধিকার খাতগুলো চিহ্নিত করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়নসহ সার্বিকভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে বাড়তি নজর দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, সড়ক, রেলওয়ে ও বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে নতুন অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এর আকার হবে তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হবে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেট আরো কার্যকর করতে বড় প্রকল্প ও ক্যাপিটাল বাজেট নামে দুটি আলাদা বাজেট করার চিন্তা আছে। আগামী ২ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। তাতে তিন লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ আট হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী বাজেটের আকার বাড়ছে ১৫ শতাংশ, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে ১৬ শতাংশ। তবে বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে।
চলতি বাজেটে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৯৯৭ কোটি টাকা। ৫ এপ্রিল বাজেট সংশোধনকালে তা কমিয়ে ৯৩ হাজার ৮৯৪ কোটিতে নামিয়ে এনেছে সরকার। নতুন বাজেটে এডিপিতে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আগামী ১০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরসহ মধ্যমেয়াদি (২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯) সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর (এমটিএমএফ) সূচকগুলোর প্রক্ষেপণের ওপর আলোচনা ও অনুমোদন হবে। এ বৈঠকে বাজেটের কাঠামো নির্ধারণ করা হলেও সংসদে উপস্থাপনের আগে দল ও সরকারের নানামুখী চাপে শেষ পর্যন্ত তার আকার ও বরাদ্দে কিছুটা হেরফের করতে হয় অর্থমন্ত্রীকে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্প অন্তর্ভুক্তকরণের ক্ষেত্রে সুষম উন্নয়ন ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন ও পুষ্টিমান উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পানিসম্পদ ও পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, রপ্তানি প্রসার ও শিল্পায়ন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি এবং যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন, নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু সংবেদনশীল ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।