দাপুটে আব্বাস কি প্রভাব হারাচ্ছেন

প্রতিষ্ঠার পর রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত, প্রায় সবার বিরুদ্ধে হয়েছে মামলা। এমন প্রতিকূল সময়েই দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছে বিএনপি। যেকোন সময় ঘোষিত হবে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি।

১৯ সদস্যের এ কমিটিতে পদাধিকারবলে জায়গা পাচ্ছেন চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব। তবে গুঞ্জন রয়েছে, বর্তমান কমিটিতে রয়েছেন এমন নেতাদের মধ্যে মির্জা আব্বাসকে বাদ দেয়া হতে পারে কমিটি থেকে। বিএনপির এ নেতা এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিকে ঘিরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কর্মসূচি ঘোষণার পর বেশ কয়েকমাস আত্মগোপনে ছিলেন মির্জা আব্বাস। আত্মগোপনে থেকেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লড়েন তিনি।

নির্বাচনের পরও বেশ কয়েক মাস আত্মগোপনে থেকে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর কয়েক মাস কারাভোগের পর রোববার কারামুক্ত হন আব্বাস। বর্তমানে তিনি বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আব্বাসের দেশের বাইরেও যাওয়া লাগতে পারে বলেও জানা গেছে।

তবে দলটির এক পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করেন, ঢাকার রাজনীতিতে একসময় দাপুটে এ নেতা অজানা কারণেই রাজনীতিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়েছেন।

হঠাৎ করে আদালতে আত্মসমর্পণ করে তার কারাবরণকেও ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন দলটির একটি অংশের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ মাস চারেক কারাভোগের পর মুক্তি লাভের পরও বাসায় না গিয়ে হাসপাতালে থাকায় হেভিওয়েট এ নেতা বর্তমানে ‘চিকিৎসা কৌশল’ অবলম্বন করছেন বলেও মনে করেন তারা।

দলের একটি অংশের নেতাকর্মী মনে করেন, অভ্যন্তরীণ নানা অসন্তোষের কারণে মির্জা আব্বাস নানা কৌশল অবলম্বন না করে দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলে মহানগরে বিএনপি আরো শক্তিশালী হতো।

ঢাকা মহানগর বিএনপির মির্জা আব্বাস-ভক্ত এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, দুঃসময়ে মির্জা আব্বাস দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অথচ বারডেম হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাকে দেখতে না যাওয়ায় অনেকে হতাশ হয়েছেন।

এদিকে ওয়ার্ড কমিশনার থেকে জাতীয় রাজনীতিতে তারকা বনে যাওয়া আব্বাসের জনপ্রিয়তায় ভাটা লাগতে শুরু করছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাদের মতে- সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুস সালাম, শিরিন সুলতানার সঙ্গে সমন্বয় করতে না পারার কারণে আব্বাসের রাজনীতির গতি শিথিল হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মির্জা আব্বাসকে দেখতে বারডেম হাসপাতালে যান তিনজন গণমাধ্যম কর্মী। তিন সাংবাদিকের পরিচয় চেয়ে বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী এ নেতা বলেন, সন্ধ্যার পর আমি কারো সঙ্গে কোনো কথা বলি না। ইবাদত বন্দেগিতে সময় পার করার চেষ্টা করি।

রাজনৈতিক কোনো আলাপ করতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা অন্য এক সময় আসবেন। সেসময় আলাপ করবো, তবে রাত ৯টার পর বা সকালে আসবেন।

আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, রেনাল আর্টারি, স্টেনোসিস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ওজন কমে যাওয়া ও হেপাটিক হিউম্যানজিওমাসহ বেশ কয়েকটি রোগে ভুগছেন।

মির্জা আব্বাস স্থায়ী কমিটির পদ হারাতে পারেন বলে যে গুঞ্জন রয়েছে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা মহানগর (পূর্ব) ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মানিক বলেন, মির্জা আব্বাস নিঃসন্দেহে যোগ্য লোক। তিনি পদ পেতেই পারেন। তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

৩০ মার্চ দুদকের দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগ বহাল রাখায় তিনি জামিনে মুক্তি পান। মির্জা আব্বাসকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও মির্জা আব্বাসের শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর