১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় লালমনিরহাট থানার ওসি ছিলেন মীর মোশাররফ হোসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি আহত হন। হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তাঁকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সেই থেকে অন্য এক জীবনযুদ্ধ শুরু করেন তাঁর স্ত্রী বেগম রওশন আখতার। সেই যুদ্ধের কথাই উঠে এসেছে তাঁর ডায়েরিতে।
সোমবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর ডায়েরি বইটির প্রকাশনা উৎসবে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আর বর্তমান বাস্তবতা। অনুষ্ঠানে সব বক্তাই বলেন, নারীর মুক্তিযুদ্ধ আর জীবনযুদ্ধের স্বীকৃতি এখনো দেওয়া হয়নি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বই নিয়ে এর আগেও অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। কিন্তু শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর এমন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আসিনি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু রওশন আরা প্রতিদিন তাঁর যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। তাঁর জীবনের সেই উপলব্ধি থেকেই বইটি লেখা। আর নারী মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের জীবনযুদ্ধের নানা কথা উঠে এসেছে এই বইতে। আসুন আমরা মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের জীবনের অংশ বানিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করি।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, ‘আমরা খুব আত্মভোলা জাতি। আমাদের চৈতন্যবোধ জাগা জরুরি। নয় মাস যুদ্ধ করেছি। রক্ত দিয়েছি। কিন্তু আজকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম বহাল। এই কি ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? নিজেদের আর কতটা কপট আমরা বানাব? আসুন, আমরা আমাদের মানবতাবোধ জাগ্রত করি।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘এই বইটি পড়তে গিয়ে আমি আমার ২১ বছরের জীবনে ফিরে গেছি। তখন আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমরা যে সংগ্রাম করেছি, সেটাই যেন এই বইতে উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতির কথা যেমন আছে এই বইতে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পরের সংগ্রামের কথাও আছে। এই বইতে নারীর যুদ্ধ ফুটে উঠেছে।’ বইয়ের লেখক রওশন আরা আখতার বলেন, ‘জীবনে যে এমন দিন আসবে, সেটা কখনো ভাবিনি। আমার ছেলেমেয়েরা এটা সম্ভব করেছে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার, অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত, মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, নাট্যকার মাসুম রেজা, সাংবাদিক মুন্নী সাহা, লেখকের মেয়ে রুচিরা সুলতানা প্রমুখ।