ঢাকা ০৭:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জোর জবরদস্তি করে উন্নয়ন হয় না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০১৬
  • ৩৪৭ বার

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রবিরোধী দল ও স্থানীয় প্রশাসন। পুলিশের গুলিতে এখন পযন্ত পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুরো এলাকায় বিরাজ করছে ভয় ও আতঙ্ক।

বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নির্মান করে দীর্ঘদিন মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই পক্ষ শেষ পযন্ত সোমবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়। এ নিয়ে অনেক থেকেই সরকারকে সতর্ক করে আসছিলো সংশ্লিষ্ট মহলগুলো। বিশেষ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং পরিবশেবিদরা বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নিতে বলছিলো সরকারকে। কিন্তু তা না হওয়ায় শেষ পযন্ত রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো।

সোমবার পূর্বপশ্চিমের কাছে এমন অভিমত তুলে ধরেন দেশের তিন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। তারা বলেন, স্থানীয় মানুষ যেখানে বিরোধীতা করছে, সেখানে সরকারের উচিত ছিলো তাদের কথা শোনা ও সমাধান করা।

একই সঙ্গে তারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে পরিবেশ বিপযয় ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কাও করেছেন। তারা সে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রকাশ্যে তুলে ধরারও পরামর্শ দেন।

অধ্যাপক ড. সামসুল আলম, জ্বালানি উপদেষ্টা, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

‘৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এটি অবশ্যই দুঃখজনক। মূলত এটি ঘটেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের জমি নিয়ে স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে।’

‘এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানে অবশ্যই পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পরবে এটি সরকারও স্বীকার করেছে। তবে কতটুকু ক্ষতি আমরা সহ্য করতে পারবো সে ব্যাপারে সরকার কিছু জানায়নি। এটা জানানোর দায়িত্ব সরকারের।’

‘বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের আগে সেখানকার এবং চারপাশের পরিবেশের কি পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তার একটি নিরীক্ষা করে সরকারের উচিত নিরপেক্ষভাবে জনগনের সামনে তুলে ধরা। তা না করে এভাবে জনগণের উপর চাপ সৃষ্টিকরা দুর্ভাগ্যজনক।’

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ এবং তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব

‘চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জোরজবরদস্তিমূলকভাবে এস আলম গ্রুপের জমি দখল ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে অনেকদিন থেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন এলাকাবাসী। তারই এক পর্যায়ে আজ প্রতিবাদী এলাকাবাসীর মিছিলের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আশংকা, এই সংখ্যা আরও বাড়বে, গুলিবিদ্ধ অনেকে।’

‘প্রশ্ন হলো, ‘উন্নয়ন’ যদি সত্যিকারের উন্নয়নই হয় তাহলে তা নিয়ে মানুষের কথা শুনতে অসুবিধা কী? মানুষের প্রতিবাদে সরকারের ভয় কোথায়? খবর প্রকাশে এতো বাধা কেনো? খোলাখুলি কথা বলতে অসুবিধা কী? না, কেউ কথা বলতে পারবে না, কোনো সভা সমাবেশ করা চলবে না। সন্ত্রাসী আর পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনী লাগানো হবে জনগণের বিরুদ্ধে। কারণ কর্তারা ঠিকই জানে এগুলো উন্নয়নের মুখোশ পরানো ধ্বংস, দখল আর লুন্ঠনের প্রকল্প।’

‘একই চেহারা আমরা দেখেছি ফুলবাড়ীতে; দেখছি রামপাল, রূপপুর, মাতারবাড়ীতেও। ঘুষ দিয়ে বা ধমক দিয়ে মিডিয়া থেকে গায়েব করা হয় জনগণের প্রতিবাদ, যুক্তি, তথ্য। বাঁশখালীতে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ চললেও এতোদিন তাই কোনো খবরই আসেনি সংবাদপত্রে, টিভিতে।’

‘জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমরা এসব হিংস্র দমনপীড়নের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং নিরস্ত্র মানুষ হত্যার জন্য কোম্পানি ও সরকারি ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করি।’

‘সরকারের কাছে আমাদের আরও দাবি, জোরজবরদস্তি, প্রতারণা, ভয়ভীতি, দুর্নীতির ওপর ভর করে ‘উন্নয়ন’ নামের দখল, লুন্ঠন ও ধ্বংসের তৎপরতা বন্ধ করুন। যথাযথ স্বচ্ছতা, জনসম্মতি এবং জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত না হলে জনগণ কোনো প্রকল্পই গ্রহণ করবে না। ভয়ভীতি দেখিয়ে, ত্রাস সৃষ্টি করে কতোদিন আর মানুষকে চুপ রাখতে পারবেন? জোর জবরদস্তি করে উন্নয়ন হয় না।’

বিডি রহমতউল্লাহ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পাওয়ার সেল

‘প্রথমত এটি তাদের (স্থানীয় মানুষ) জমি রক্ষার দাবি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হলে যে জায়গায় স্থাপন করা হবে সেই জায়গার মানুষগুলো ভুমিহীন হয়ে পড়বে। তাদের হয়তো উদ্বাস্তুর মত ঢাকায় চলে আসতে হবে।’

‘গ্রামবাসীদের এই আন্দোলন শুধু তাদের জমি রক্ষার নয়। বরং এটি গোটা দেশকে রক্ষার আন্দোলন। আজ যে ৫ জন নিহত হয়েছেন তারা দেশকে রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে শুধু সেই এলাকার মাটি, বায়ু, পানিসহ সমস্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হবে তাই না সমগ্র বাংলাদেশ এর এর আশেপাশের অঞ্চলের পরিবেশ ভয়ানক হুমকির সম্মুখীন হবে।’

‘বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য এর বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের লোকজন দুর্নীতির মাধ্যমে দুই কোম্পানিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের অনুমতি দিয়েছে। অথচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বদলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুত তৈরি করা যেতে পারে।’

‘বিশ্বব্যাপী সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র বা সোলার সিস্টেম এখন একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বায়ু দিয়েও আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। বর্তমানে বাতাসের শক্তি ব্যবহার করে আগের চেয়ে ৫ গুন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। নদীর পানির স্রোত ব্যবহার করেও আমাদের দেশেই ৫ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সরকারকে ভারতের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য পানি আদায় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রের সরকার কতোটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে সেটা আমরা অতীতে দেখেছি এখনো দেখছি। মানুষের বর্জ্য দিয়েও বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব।’

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে হিসেব করে দেখেছি, আমাদের দেশে এখন যে পরিমাণ মানুষ বসবাস করছেন তাদের বর্জ্য দিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব।’

‘সরকারের উচিত ছিল বিরোধ নিষ্পত্তি করে কাজ শুরু করা। তা হলে আর এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো না।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নে এস. আলম গ্রুপ ও চায়না সেবকো এইচটিজি কোম্পানীর যৌথ উদ্যোগে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হচ্ছে। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ চলছে। বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান এস. আলম গ্রুপ ৭০ শতাংশ ও চায়না সেফকো এইচটিজি-৩ কোম্পানীর ৩০ শতাংশ যৌথ চুক্তিতে এই প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জোর জবরদস্তি করে উন্নয়ন হয় না

আপডেট টাইম : ১১:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০১৬

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রবিরোধী দল ও স্থানীয় প্রশাসন। পুলিশের গুলিতে এখন পযন্ত পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুরো এলাকায় বিরাজ করছে ভয় ও আতঙ্ক।

বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নির্মান করে দীর্ঘদিন মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই পক্ষ শেষ পযন্ত সোমবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়। এ নিয়ে অনেক থেকেই সরকারকে সতর্ক করে আসছিলো সংশ্লিষ্ট মহলগুলো। বিশেষ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং পরিবশেবিদরা বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নিতে বলছিলো সরকারকে। কিন্তু তা না হওয়ায় শেষ পযন্ত রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো।

সোমবার পূর্বপশ্চিমের কাছে এমন অভিমত তুলে ধরেন দেশের তিন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। তারা বলেন, স্থানীয় মানুষ যেখানে বিরোধীতা করছে, সেখানে সরকারের উচিত ছিলো তাদের কথা শোনা ও সমাধান করা।

একই সঙ্গে তারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে পরিবেশ বিপযয় ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কাও করেছেন। তারা সে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রকাশ্যে তুলে ধরারও পরামর্শ দেন।

অধ্যাপক ড. সামসুল আলম, জ্বালানি উপদেষ্টা, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

‘৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এটি অবশ্যই দুঃখজনক। মূলত এটি ঘটেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের জমি নিয়ে স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে।’

‘এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানে অবশ্যই পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পরবে এটি সরকারও স্বীকার করেছে। তবে কতটুকু ক্ষতি আমরা সহ্য করতে পারবো সে ব্যাপারে সরকার কিছু জানায়নি। এটা জানানোর দায়িত্ব সরকারের।’

‘বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের আগে সেখানকার এবং চারপাশের পরিবেশের কি পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তার একটি নিরীক্ষা করে সরকারের উচিত নিরপেক্ষভাবে জনগনের সামনে তুলে ধরা। তা না করে এভাবে জনগণের উপর চাপ সৃষ্টিকরা দুর্ভাগ্যজনক।’

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ এবং তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব

‘চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জোরজবরদস্তিমূলকভাবে এস আলম গ্রুপের জমি দখল ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে অনেকদিন থেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন এলাকাবাসী। তারই এক পর্যায়ে আজ প্রতিবাদী এলাকাবাসীর মিছিলের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আশংকা, এই সংখ্যা আরও বাড়বে, গুলিবিদ্ধ অনেকে।’

‘প্রশ্ন হলো, ‘উন্নয়ন’ যদি সত্যিকারের উন্নয়নই হয় তাহলে তা নিয়ে মানুষের কথা শুনতে অসুবিধা কী? মানুষের প্রতিবাদে সরকারের ভয় কোথায়? খবর প্রকাশে এতো বাধা কেনো? খোলাখুলি কথা বলতে অসুবিধা কী? না, কেউ কথা বলতে পারবে না, কোনো সভা সমাবেশ করা চলবে না। সন্ত্রাসী আর পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনী লাগানো হবে জনগণের বিরুদ্ধে। কারণ কর্তারা ঠিকই জানে এগুলো উন্নয়নের মুখোশ পরানো ধ্বংস, দখল আর লুন্ঠনের প্রকল্প।’

‘একই চেহারা আমরা দেখেছি ফুলবাড়ীতে; দেখছি রামপাল, রূপপুর, মাতারবাড়ীতেও। ঘুষ দিয়ে বা ধমক দিয়ে মিডিয়া থেকে গায়েব করা হয় জনগণের প্রতিবাদ, যুক্তি, তথ্য। বাঁশখালীতে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ চললেও এতোদিন তাই কোনো খবরই আসেনি সংবাদপত্রে, টিভিতে।’

‘জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমরা এসব হিংস্র দমনপীড়নের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং নিরস্ত্র মানুষ হত্যার জন্য কোম্পানি ও সরকারি ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করি।’

‘সরকারের কাছে আমাদের আরও দাবি, জোরজবরদস্তি, প্রতারণা, ভয়ভীতি, দুর্নীতির ওপর ভর করে ‘উন্নয়ন’ নামের দখল, লুন্ঠন ও ধ্বংসের তৎপরতা বন্ধ করুন। যথাযথ স্বচ্ছতা, জনসম্মতি এবং জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত না হলে জনগণ কোনো প্রকল্পই গ্রহণ করবে না। ভয়ভীতি দেখিয়ে, ত্রাস সৃষ্টি করে কতোদিন আর মানুষকে চুপ রাখতে পারবেন? জোর জবরদস্তি করে উন্নয়ন হয় না।’

বিডি রহমতউল্লাহ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পাওয়ার সেল

‘প্রথমত এটি তাদের (স্থানীয় মানুষ) জমি রক্ষার দাবি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হলে যে জায়গায় স্থাপন করা হবে সেই জায়গার মানুষগুলো ভুমিহীন হয়ে পড়বে। তাদের হয়তো উদ্বাস্তুর মত ঢাকায় চলে আসতে হবে।’

‘গ্রামবাসীদের এই আন্দোলন শুধু তাদের জমি রক্ষার নয়। বরং এটি গোটা দেশকে রক্ষার আন্দোলন। আজ যে ৫ জন নিহত হয়েছেন তারা দেশকে রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে শুধু সেই এলাকার মাটি, বায়ু, পানিসহ সমস্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হবে তাই না সমগ্র বাংলাদেশ এর এর আশেপাশের অঞ্চলের পরিবেশ ভয়ানক হুমকির সম্মুখীন হবে।’

‘বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য এর বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের লোকজন দুর্নীতির মাধ্যমে দুই কোম্পানিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের অনুমতি দিয়েছে। অথচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বদলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুত তৈরি করা যেতে পারে।’

‘বিশ্বব্যাপী সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র বা সোলার সিস্টেম এখন একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বায়ু দিয়েও আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। বর্তমানে বাতাসের শক্তি ব্যবহার করে আগের চেয়ে ৫ গুন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। নদীর পানির স্রোত ব্যবহার করেও আমাদের দেশেই ৫ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে সরকারকে ভারতের কাছ থেকে আমাদের ন্যায্য পানি আদায় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রের সরকার কতোটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে সেটা আমরা অতীতে দেখেছি এখনো দেখছি। মানুষের বর্জ্য দিয়েও বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব।’

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে হিসেব করে দেখেছি, আমাদের দেশে এখন যে পরিমাণ মানুষ বসবাস করছেন তাদের বর্জ্য দিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব।’

‘সরকারের উচিত ছিল বিরোধ নিষ্পত্তি করে কাজ শুরু করা। তা হলে আর এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো না।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নে এস. আলম গ্রুপ ও চায়না সেবকো এইচটিজি কোম্পানীর যৌথ উদ্যোগে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হচ্ছে। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ চলছে। বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান এস. আলম গ্রুপ ৭০ শতাংশ ও চায়না সেফকো এইচটিজি-৩ কোম্পানীর ৩০ শতাংশ যৌথ চুক্তিতে এই প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে।