১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মান করা হয় বাঁধ। সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ। আয়তন ৭২৫ বর্গকিলোমিটার। প্রতি বছর লাখো পর্যটককে নিজের সৌন্দর্য্য দিয়ে টেনে আনছে এই হ্রদ। কিন্তু, সংরক্ষণের অভাবে দখল হয়ে গেছে হ্রদের পাড়। গড়ে উঠেছে হাজারো অবৈধ স্থাপনা। হ্রদ ঘেঁষে পাহাড়ের পাদদেশে এবং ভাসমান টিলার আশপাশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার পরিবারের বসতি, যা ঝুঁকিতে ফেলেছে কাপ্তাই হ্রদের পরিবেশকে। নষ্ট হচ্ছে হ্রদ ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনা।
এদিকে দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করায় কাপ্তাই লেকের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। হ্রদটি সৃষ্টির পর একবারও ড্রেজিং বা সংস্কার করা হয়নি। ফলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশও। তাই নৌ-পরিবহন, বিদ্যুৎ ও মৎস্য উৎপাদনসহ এই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল খাতগুলো সংকটে পড়েছে। সরকার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কথা বললেও নেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাঙামাটির বরকল, বিলাইছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি উপজেলাসহ শহর এলাকার চেঙ্গীমুখ, রিজার্ভমুখ, পুরানবস্তি, ঝুলুক্যা পাহাড়, শুটকীপট্টি, নাপ্পিপট্টি, ডিসিবাংলো সংলগ্ন, পুলিশ লাইন, তবলছড়ি, পর্যটন এলাকা, আসামবস্তি, শান্তি নগর, গর্জনতলী, আলম ডর্ক, পাবলিক হেল্থ, নতুন হাসপাতাল, পুরাতন হাসপাতালসহ কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী এলাকা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধস্থাপনা। আর কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা বসতবাড়ির শৌচাগারগুলোর ৭০ শতাংশই অনিরাপদ। ফলে এখান থেকে মল-মূত্র সরাসরি মিশছে হ্রদের পানিতে। এছাড়া প্রতিদিন হ্রদে চলাচলরত লঞ্চ, ষ্টীমারসহ অসংখ্য নৌ-যাত্রী, জেলে, মৎস্যজীবি ও নৌ-পরিবহন শ্রমিক হ্রদে মল-মূত্র ও ময়লা আবর্জনা ত্যাগ করে। পাশাপাশি হ্রদ এলাকায় গড়ে ওঠা স’মিল, মিলিং মিল, ফিলিং স্টেশন, জেটিঘাট, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল এবং হোটেল-রেস্তোঁরাসহ আবাসিক এলাকার বর্জ্য-আবর্জনা পড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় দিনে দিনে এসব অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধূরী বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ জুড়ে অবৈধ স্থাপনাগুলোর বর্জ্য নিক্ষেপ, মল-মূত্র ত্যাগসহ নানা কারণে হ্রদের পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, কাপ্তাই লেক সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে আহবায়ক করে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি হয়েছে। কমিটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে হ্রদের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। প্রকল্পটি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বছরের পর বছর পাহাড়ি ঢলে নামা পলি জমে হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে গভীরতা কমছে। এছাড়া হ্রদের উভয় তীরে অব্যাহতভাবে ভাঙন হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন বর্জ্য নিক্ষেপ করা হচ্ছে হ্রদে। এসব কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে হ্রদের পানি।
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৬তম বৈঠকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীও। সে সময় তিনি বলেন, হ্রদকে দূর্ষণমুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে।