ঢাকা ০৩:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সংবাদ প্রকাশের পরও গুরুত্ব দেয়নি এলজিইডি, ব্রীজের এ্যাপ্রোচ এখন নদীতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে মিললো বিশাল সুখবর শরতে কাশফুলের রাজ্যে টানা ৪ দিনের ছুটিতে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ বাফুফে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন যারা শেখ হাসিনার ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এমন দেশ গড়তে চাই, সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকারের বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা- জ্বালানি সংকট দূর করতে বাপেক্স আরও ১৫০ কূপ খনন করবে: জ্বালানি উপদেষ্টা ইংল্যান্ড আমাদের সঙ্গে ৮০০ করে, বাংলাদেশও হারায়

অরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংক আইটি নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১৫:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ মার্চ ২০১৬
  • ২৬৩ বার

হ্যাকারদের আক্রমণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো সার্ভারব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেছে। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ব্যবস্থাপনা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কেরও অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, যা একেবারে বদলে ফেলতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তথ্যের জোগান পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাকআপ সার্ভারেও তারা প্রবেশ করেছিল। সেখানেও ক্ষতিকর ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে। রিজার্ভ চুরির জন্য সার্ভার হ্যাক করতে তারা যে ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ভাইরাস (ম্যালওয়্যার) ছড়িয়ে দিয়েছে তাকে পুরোপুরি ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করতে আরও সময়ের প্রয়োজন। পুরো সার্ভারব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হলে অ্যান্টি-ভাইরাস জাতীয় নতুন সফটওয়্যারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। একই ধরনের সফটওয়্যার বা সিস্টেম দীর্ঘদিন না চালিয়ে মাঝেমধ্যে তা পরিবর্তন করতে হবে। একই ধরনের সিস্টেমে বেশি দিন সার্ভার চালালে দুষ্কৃতকারীরা সার্ভার হ্যাক করতে সুবিধা পায় বলে মনে করেন আইটি বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানা। তার নেতৃত্বে তদন্তকারী যে দলটি কাজ করছে তারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। সেখানে এসব উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, ঝুঁকি ও সুপারিশের কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানান, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার থেকে স্পর্শকাতর কিছু কোম্পানি ও হিসাবের তথ্যও চুরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলো এ দেশের শিল্পপতিদের ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত তথ্য হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার কথা জানিয়েছেন রাকেশ আস্তানা। ভবিষ্যতে হ্যাকিং এড়াতে সার্ভার ও ডিলিং রুমের নিয়ন্ত্রণ বা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের মধ্যে প্রযুক্তিজ্ঞান বাড়াতে হবে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে না পারলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গড়ে তোলা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু নতুন প্রযুক্তির প্রচলনই নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদেরও দক্ষতা বাড়াতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর কেউ ঘটাতে না পারে সে জন্য ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সাইবার অপরাধীদের ব্যবহূত সম্ভাব্য সব পন্থা তাদের আয়ত্তে থাকতে হবে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে দেশের আর্থিক খাতের অভিভাবক তাই এর নিরাপত্তাবিধান করতে হবে সবার আগে। এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। হ্যাকিংয়ের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারের যে ক্ষতি হয়েছে তার বেশির ভাগই ইতিমধ্যে সারিয়ে তোলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত দেশের অন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের তথ্যও হ্যাকাররা কপি করে নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর কোম্পানি বা হিসাবগুলোর পৃথকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ওই হ্যাকার গ্রুপ পর্যায়ক্রমে এসব কোম্পানি বা হিসাবকেও হ্যাক করে অর্থ স্থানান্তর করতে পারে। সম্ভাব্য ওই ঝুঁকি এড়াতে রাকেশ আস্তানার তদন্তকারীদের দল ইতিমধ্যে এক ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নতুন সফটওয়্যার প্রবেশ করানোর সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হ্যাকার গ্রুপ আর্থিক খাতের সার্ভার হ্যাক করতে বিশেষভাবে পারদর্শী। তাদের নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী যে, নতুন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার হলে তা এর ব্যবহারকারীর হাতে পৌঁছানোর আগেই হ্যাকারদের কাছে চলে যায়। বিশেষ করে আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট নতুন ব্যবস্থা বা সিস্টেম চালু হলে তারা এটা সংগ্রহ করে ট্রায়াল করে থাকে। এমনভাবে কাজ করে যেন হ্যাকিংকালে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন না হতে হয়। কোনো কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার মুখে পড়লে তা কাটিয়ে উঠতেও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া থাকে এই হ্যাকারদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মালামাল জব্দ, তদন্তে এফবিআই : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর বাংলাদেশ কার্যালয়ের কর্মকর্তার সঙ্গে আজ শুক্রবার আলোচনায় বসবে এ মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ছাড়া ইন্টারপোলের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করবে তদন্ত সংস্থাটি। গতকাল সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সাইফুল ইসলাম এসব কথা জানান।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা দায়েরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তকাজ শুরু হয়েছে বুধবার। সেদিন সিআইডির একটি তদন্ত দল দিনভর বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে সেখানকার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছে। পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নেয়। এর পরই সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ ও সিকিউরিটি সার্ভিল্যান্স ইকুইপমেন্ট আমরা জব্দ করেছি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। এফবিআইর বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধানের সঙ্গে কালই বৈঠক হতে পারে। এ ছাড়া ইন্টারপোলের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। গতকাল সিআইডির এএসপি মানিক মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহায়তা চাওয়া হয়। তারাও ঘটনা তদন্তে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ কারণে তাদের একটি দল এখানে আসছে। আজ শুক্রবার সকালের দিকে তারা ঢাকায় পৌঁছাবেন।

ক্ষমা চেয়েছে ফিলিপাইন, লাভের টাকা ফেরত দিতে চায় : রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে ফিলিপাইনের বৈদেশিক মুদ্রা পরিবর্তনের (মানি এক্সচেঞ্জ) ডিলার ফিলরেম সার্ভিসেস ইনকরপোরেটেড। গতকাল ম্যানিলার সিনেটে অর্থ চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া অর্থ চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ‘ব্লু রিবন’-এর কাছে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা ৮১ মিলিয়ন ডলার পেসোতে পরিবর্তন বাবদ তারা যে লাভ করেছে, তা বাংলাদেশকে ফেরত দেবে। তবে ব্লু রিবন তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর তৃতীয় তিওফিস্তো গিনগোনা বলেছেন, শুধু ক্ষমাপ্রার্থনা করে পার পাবে না ফিলরেম। তাদের আইনি প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হবে। দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ইনকোয়ারার এসব তথ্য জানিয়েছে। সিনেট তদন্তে শুনানির সময় ফিলরেমের চেয়ারম্যান সালুদ বাউতিস্তা বলেন, ‘এই পুরো ঘটনায় বাংলাদেশের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি আমরা। পুরো কার্যক্রমে আমাদের লাভের অঙ্কের সমান একটি চেক এখনই বাংলাদেশ সরকারকে দিতে প্রস্তুত আমরা।’ এ ছাড়া বর্তমানে অর্থ চুরির কোনো প্রক্রিয়ার সঙ্গে ফিলরেম জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সংবাদ প্রকাশের পরও গুরুত্ব দেয়নি এলজিইডি, ব্রীজের এ্যাপ্রোচ এখন নদীতে

অরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংক আইটি নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা

আপডেট টাইম : ০২:১৫:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ মার্চ ২০১৬

হ্যাকারদের আক্রমণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো সার্ভারব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেছে। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ব্যবস্থাপনা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কেরও অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, যা একেবারে বদলে ফেলতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তথ্যের জোগান পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাকআপ সার্ভারেও তারা প্রবেশ করেছিল। সেখানেও ক্ষতিকর ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে। রিজার্ভ চুরির জন্য সার্ভার হ্যাক করতে তারা যে ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ভাইরাস (ম্যালওয়্যার) ছড়িয়ে দিয়েছে তাকে পুরোপুরি ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করতে আরও সময়ের প্রয়োজন। পুরো সার্ভারব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হলে অ্যান্টি-ভাইরাস জাতীয় নতুন সফটওয়্যারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। একই ধরনের সফটওয়্যার বা সিস্টেম দীর্ঘদিন না চালিয়ে মাঝেমধ্যে তা পরিবর্তন করতে হবে। একই ধরনের সিস্টেমে বেশি দিন সার্ভার চালালে দুষ্কৃতকারীরা সার্ভার হ্যাক করতে সুবিধা পায় বলে মনে করেন আইটি বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানা। তার নেতৃত্বে তদন্তকারী যে দলটি কাজ করছে তারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। সেখানে এসব উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা, ঝুঁকি ও সুপারিশের কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানান, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার থেকে স্পর্শকাতর কিছু কোম্পানি ও হিসাবের তথ্যও চুরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলো এ দেশের শিল্পপতিদের ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত তথ্য হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার কথা জানিয়েছেন রাকেশ আস্তানা। ভবিষ্যতে হ্যাকিং এড়াতে সার্ভার ও ডিলিং রুমের নিয়ন্ত্রণ বা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের মধ্যে প্রযুক্তিজ্ঞান বাড়াতে হবে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে না পারলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গড়ে তোলা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু নতুন প্রযুক্তির প্রচলনই নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদেরও দক্ষতা বাড়াতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর কেউ ঘটাতে না পারে সে জন্য ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সাইবার অপরাধীদের ব্যবহূত সম্ভাব্য সব পন্থা তাদের আয়ত্তে থাকতে হবে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে দেশের আর্থিক খাতের অভিভাবক তাই এর নিরাপত্তাবিধান করতে হবে সবার আগে। এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। হ্যাকিংয়ের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারের যে ক্ষতি হয়েছে তার বেশির ভাগই ইতিমধ্যে সারিয়ে তোলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত দেশের অন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের তথ্যও হ্যাকাররা কপি করে নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর কোম্পানি বা হিসাবগুলোর পৃথকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ওই হ্যাকার গ্রুপ পর্যায়ক্রমে এসব কোম্পানি বা হিসাবকেও হ্যাক করে অর্থ স্থানান্তর করতে পারে। সম্ভাব্য ওই ঝুঁকি এড়াতে রাকেশ আস্তানার তদন্তকারীদের দল ইতিমধ্যে এক ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নতুন সফটওয়্যার প্রবেশ করানোর সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হ্যাকার গ্রুপ আর্থিক খাতের সার্ভার হ্যাক করতে বিশেষভাবে পারদর্শী। তাদের নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী যে, নতুন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার হলে তা এর ব্যবহারকারীর হাতে পৌঁছানোর আগেই হ্যাকারদের কাছে চলে যায়। বিশেষ করে আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট নতুন ব্যবস্থা বা সিস্টেম চালু হলে তারা এটা সংগ্রহ করে ট্রায়াল করে থাকে। এমনভাবে কাজ করে যেন হ্যাকিংকালে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন না হতে হয়। কোনো কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার মুখে পড়লে তা কাটিয়ে উঠতেও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া থাকে এই হ্যাকারদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মালামাল জব্দ, তদন্তে এফবিআই : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর বাংলাদেশ কার্যালয়ের কর্মকর্তার সঙ্গে আজ শুক্রবার আলোচনায় বসবে এ মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ছাড়া ইন্টারপোলের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করবে তদন্ত সংস্থাটি। গতকাল সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সাইফুল ইসলাম এসব কথা জানান।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা দায়েরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তকাজ শুরু হয়েছে বুধবার। সেদিন সিআইডির একটি তদন্ত দল দিনভর বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে সেখানকার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছে। পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নেয়। এর পরই সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ ও সিকিউরিটি সার্ভিল্যান্স ইকুইপমেন্ট আমরা জব্দ করেছি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। এফবিআইর বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধানের সঙ্গে কালই বৈঠক হতে পারে। এ ছাড়া ইন্টারপোলের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। গতকাল সিআইডির এএসপি মানিক মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহায়তা চাওয়া হয়। তারাও ঘটনা তদন্তে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ কারণে তাদের একটি দল এখানে আসছে। আজ শুক্রবার সকালের দিকে তারা ঢাকায় পৌঁছাবেন।

ক্ষমা চেয়েছে ফিলিপাইন, লাভের টাকা ফেরত দিতে চায় : রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে ফিলিপাইনের বৈদেশিক মুদ্রা পরিবর্তনের (মানি এক্সচেঞ্জ) ডিলার ফিলরেম সার্ভিসেস ইনকরপোরেটেড। গতকাল ম্যানিলার সিনেটে অর্থ চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া অর্থ চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ‘ব্লু রিবন’-এর কাছে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা ৮১ মিলিয়ন ডলার পেসোতে পরিবর্তন বাবদ তারা যে লাভ করেছে, তা বাংলাদেশকে ফেরত দেবে। তবে ব্লু রিবন তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর তৃতীয় তিওফিস্তো গিনগোনা বলেছেন, শুধু ক্ষমাপ্রার্থনা করে পার পাবে না ফিলরেম। তাদের আইনি প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হবে। দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ইনকোয়ারার এসব তথ্য জানিয়েছে। সিনেট তদন্তে শুনানির সময় ফিলরেমের চেয়ারম্যান সালুদ বাউতিস্তা বলেন, ‘এই পুরো ঘটনায় বাংলাদেশের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি আমরা। পুরো কার্যক্রমে আমাদের লাভের অঙ্কের সমান একটি চেক এখনই বাংলাদেশ সরকারকে দিতে প্রস্তুত আমরা।’ এ ছাড়া বর্তমানে অর্থ চুরির কোনো প্রক্রিয়ার সঙ্গে ফিলরেম জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি।