ঢাকা ১১:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

আলী আকবর রূপু’র রাজনীতি দর্শন ও “Hate Politics” প্রসঙ্গ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১
  • ২১৪ বার

শরীফ সাদীঃ আলী আকবর রাজনীতি মানে রাজার নীতি নয়। এই ভুল এবং বিকৃত সংজ্ঞাটিও ওদেরই আমদানি করা, যারা “hate politics”এ বিশ্বাসী। “রাজনীতি” শব্দটিকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে ভাঙলে হবে না। আর যদি ভাঙতেই হয় তাহলেও “রাজার নীতি” হবে না, বরং এটি হবে “নীতির রাজা”।

আমাদের আজকের এই আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা কিন্তু একটি সামন্তবাদী সমাজ থেকে উঠে এসেছে। সেটিও খুব বেশিদিন হয়নি। আমাদের অঞ্চলের কথা ধরলে, এইতো ৭০/৮০ বছর আগেও আমরা জমিদারের অধীনে ছিলাম। রাজা-জমিদারদের সময়ের কথা যদি ধরে নেই তাহলে “রাজনীতি” মানে রাজার নীতিই ঠিক। সেই আদিকালে আড়াই হাজার বছর আগে এরিস্টটলের অভিজাততন্ত্রে গেলেও ঐ সংজ্ঞাটি চলে। কিন্তু ঐটি এখন একেবারেই অচল।

বর্তমান সময়ে রাজনীতি মানে রাজ্য(রাষ্ট্র) সম্পর্কিত নীতি বা রাষ্ট্র নীতি। সকল নাগরিকরাই এই নীতির আওতায়। যারা রাজনীতিকে hate করেন, তারাও রাজনীতির বাইরে নয়। তারা রাষ্ট্রের বাইরে নয়, কিংবা রাষ্ট্রের অঙ্গ সরকার, প্রশাসন, বিচার বিভাগের বাইরে নয়। রাজনীতির প্রতি যারা ঘৃণা প্রকাশ করেন, তারা বাতাসের ভেতরে থেকে অক্সিজেনকে অস্বীকার করেন। রাজনীতির প্রতি যারা বিরূপতা দেখায়, যারা রাজনীতির বিরুদ্ধে চায়ের আড্ডায় তুমুল ঝড় তুলেন, তারাও এক ধরনের রাজনীতিই করছেন। বিরুদ্ধে বলাটাও রাজনীতিরই অংশ। রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াও আরেক রাজনীতি।

দেখা যাবে রাজনীতিবিমুখরাও রাষ্ট্রীয় কোনো না কোনো সংস্থা/সংঘ/প্রতিষ্ঠানের ভোটে অংশ নিচ্ছেন। কোথাও না কোথাও ভোট দিচ্ছেন। হয় ইউনিয়ন পরিষদে, নাহলে উপজেলা পরিষদে, অথবা পৌরসভায়, অথবা সংসদের নির্বাচনে তিনি ভোট দিচ্ছেন। এগুলো রাষ্ট্রীয় বা সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান। ভোট একজনের পক্ষে কিংবা একজনের বিপক্ষে দিতে পারেন। ভোট তো দিলেন? রাষ্ট্রের একটি ব্যবস্থায় তো তিনি অংশ নিলেন। এ অবস্থায় তিনি আর বলতে পারেন না, “রাজনীতিকে ঘৃণা করি।”

রাষ্ট্রের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো সরকার। একটি সরকার কিছু নীতির উপর ভর করে কাজ করে। কৃষিনীতি বলেন, শিক্ষানীতি বলেন, স্বাস্থ্য বলেন, শিল্প বলেন, ধর্ম বলেন, সরকারের এমন অনেক ঘোষিত নীতিমালা থাকে। আপনি এসব নীতিমালা সমর্থন নাও করতে পারেন। কিন্তু এর বাইরে কি যেতে পারবেন? হয় পক্ষে, না হয় বিপক্ষে। কোনো না কোনো দিকে আপনার অভিমত থাকবেই।

আপনি ভালো করে দেখুন একজন নাগরিক হিসেবে আপনি সবধরণের নাগরিক দায়িত্ব পালন করছেন। আপনি বিচার মানছেন, প্রশাসন মানছেন। সরকারের ঘোষিত শিক্ষানীতিতে শিক্ষা নিচ্ছেন, স্বাস্থ্য সুবিধা কিছু না কিছু নিচ্ছেন, এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। অথচ বলছেন “I hate politics”. আসলে এগুলো এক ধরনের ফালতু ফ্যাশন। এরা আসলে সরকার-বিরোধী মানসিকতা ধারন করে। কিন্তু কাপুরুষতা আছে বলে সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে কথা বলতে পারেনা। তখন রাজনীতির বিরোধিতা করে। বলে “I hate politics”..

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এবিসির বিশ্লেষণ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যেভাবে ফাটল

আলী আকবর রূপু’র রাজনীতি দর্শন ও “Hate Politics” প্রসঙ্গ

আপডেট টাইম : ০৩:২০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১

শরীফ সাদীঃ আলী আকবর রাজনীতি মানে রাজার নীতি নয়। এই ভুল এবং বিকৃত সংজ্ঞাটিও ওদেরই আমদানি করা, যারা “hate politics”এ বিশ্বাসী। “রাজনীতি” শব্দটিকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে ভাঙলে হবে না। আর যদি ভাঙতেই হয় তাহলেও “রাজার নীতি” হবে না, বরং এটি হবে “নীতির রাজা”।

আমাদের আজকের এই আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা কিন্তু একটি সামন্তবাদী সমাজ থেকে উঠে এসেছে। সেটিও খুব বেশিদিন হয়নি। আমাদের অঞ্চলের কথা ধরলে, এইতো ৭০/৮০ বছর আগেও আমরা জমিদারের অধীনে ছিলাম। রাজা-জমিদারদের সময়ের কথা যদি ধরে নেই তাহলে “রাজনীতি” মানে রাজার নীতিই ঠিক। সেই আদিকালে আড়াই হাজার বছর আগে এরিস্টটলের অভিজাততন্ত্রে গেলেও ঐ সংজ্ঞাটি চলে। কিন্তু ঐটি এখন একেবারেই অচল।

বর্তমান সময়ে রাজনীতি মানে রাজ্য(রাষ্ট্র) সম্পর্কিত নীতি বা রাষ্ট্র নীতি। সকল নাগরিকরাই এই নীতির আওতায়। যারা রাজনীতিকে hate করেন, তারাও রাজনীতির বাইরে নয়। তারা রাষ্ট্রের বাইরে নয়, কিংবা রাষ্ট্রের অঙ্গ সরকার, প্রশাসন, বিচার বিভাগের বাইরে নয়। রাজনীতির প্রতি যারা ঘৃণা প্রকাশ করেন, তারা বাতাসের ভেতরে থেকে অক্সিজেনকে অস্বীকার করেন। রাজনীতির প্রতি যারা বিরূপতা দেখায়, যারা রাজনীতির বিরুদ্ধে চায়ের আড্ডায় তুমুল ঝড় তুলেন, তারাও এক ধরনের রাজনীতিই করছেন। বিরুদ্ধে বলাটাও রাজনীতিরই অংশ। রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াও আরেক রাজনীতি।

দেখা যাবে রাজনীতিবিমুখরাও রাষ্ট্রীয় কোনো না কোনো সংস্থা/সংঘ/প্রতিষ্ঠানের ভোটে অংশ নিচ্ছেন। কোথাও না কোথাও ভোট দিচ্ছেন। হয় ইউনিয়ন পরিষদে, নাহলে উপজেলা পরিষদে, অথবা পৌরসভায়, অথবা সংসদের নির্বাচনে তিনি ভোট দিচ্ছেন। এগুলো রাষ্ট্রীয় বা সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান। ভোট একজনের পক্ষে কিংবা একজনের বিপক্ষে দিতে পারেন। ভোট তো দিলেন? রাষ্ট্রের একটি ব্যবস্থায় তো তিনি অংশ নিলেন। এ অবস্থায় তিনি আর বলতে পারেন না, “রাজনীতিকে ঘৃণা করি।”

রাষ্ট্রের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো সরকার। একটি সরকার কিছু নীতির উপর ভর করে কাজ করে। কৃষিনীতি বলেন, শিক্ষানীতি বলেন, স্বাস্থ্য বলেন, শিল্প বলেন, ধর্ম বলেন, সরকারের এমন অনেক ঘোষিত নীতিমালা থাকে। আপনি এসব নীতিমালা সমর্থন নাও করতে পারেন। কিন্তু এর বাইরে কি যেতে পারবেন? হয় পক্ষে, না হয় বিপক্ষে। কোনো না কোনো দিকে আপনার অভিমত থাকবেই।

আপনি ভালো করে দেখুন একজন নাগরিক হিসেবে আপনি সবধরণের নাগরিক দায়িত্ব পালন করছেন। আপনি বিচার মানছেন, প্রশাসন মানছেন। সরকারের ঘোষিত শিক্ষানীতিতে শিক্ষা নিচ্ছেন, স্বাস্থ্য সুবিধা কিছু না কিছু নিচ্ছেন, এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। অথচ বলছেন “I hate politics”. আসলে এগুলো এক ধরনের ফালতু ফ্যাশন। এরা আসলে সরকার-বিরোধী মানসিকতা ধারন করে। কিন্তু কাপুরুষতা আছে বলে সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে কথা বলতে পারেনা। তখন রাজনীতির বিরোধিতা করে। বলে “I hate politics”..