ঢাকা ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশসেরা সাঁতারুদের গ্রামেই নেই সুইমিংপুল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৩৫৮ বার

দেশসেরা তিন নারী সাঁতারু সবুরা খাতুন, মমতাজ শিরিন ও লাভলী খাতুন। তাদের সবার বাড়িই কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রামে। এছাড়া রুবেল রানা ও লাবণী আক্তার জুঁইসহ অনেক খ্যাতিমান সাঁতারুর জন্ম এখানেই।

দেশের জন্য বিভিন্ন সময় তারা এনে দিয়েছেন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার। তবে সেই গ্রামে এখনও তৈরি হয়নি কোনও সুইমিংপুল। এর অভাবে সাতারুদের প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে স্থানীয় পুকুরগুলোতে। শীতের সময় পানি শুকিয়ে গেলে বিপাকে পড়েন তারা।

বর্তমানে আমলা গ্রামের অর্ধশত তরুণ-তরুণী রয়েছেন দেশের সেরা সাঁতারুদের তালিকায়। দেশে বিভিন্ন বাহিনী বা ক্লাবের সুইমিংপুলের পানিতে ঝড় তুলছেন তারা। ২০০১ সালে ইরানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইসলামিক মহিলা সাঁতারে সবুরা স্বর্ণপদক এবং মমতাজ শিরিন রৌপ্য পদক জিতে নেন।

সাফ গেমসে আমলার সাঁতারু রুবেল রানা পেয়েছেন স্বর্ণপদক। সুইমিংপুল না থাকলেও সাতারুদের আশার প্রদ্বীপ হয়ে আছে একাধিক সুইমিং ক্লাব। এর মধ্যে আমলা সুইমিং ক্লাব, সাগরখালী সুইমিং ক্লাব, গড়াই সুইমিং ক্লাব, পপুলার সুইমিং ক্লাব ও সেন্টমার্টিন সুইমিং ক্লাব উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় সাঁতার ক্লাবগুলোতে শতাধিক শিশু-কিশোর সাঁতার অনুশীলন করে সারা বছর।

স্থানীয় সাঁতার কোচ মর্জিনা খাতুন জানান, দেশের সাঁতার প্রতিযোগিতাগুলোতে যাদের এত অবদান তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হয় ছোট্ট পুকুরে। দীর্ঘদিন থেকে এখানে একটি সুইমিংপুল স্থাপনের দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। একটি স্থায়ী সুইমিংপুল স্থাপন সম্ভব হলে এখানকার সাঁতারুরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাঁতারে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে।

আমলা সুইমিংপুলের কর্ণধার মাসুম-আল মাজি বলেন, সাঁতার শিখতে আসা শিক্ষার্থীরা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ৮০ ভাগ পদক এই গ্রামের সাতারুদের দখলে। সাঁতারুরা জানান, সুইমিংপুল না থাকায় আমলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের কয়েকটি পুকুরই তাদের শেষ ভরসা। বর্ষার সময় প্রশিক্ষণ চললেও শীতকালে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমস্যা হয়।

১৯৯০ সালের পর থেকে আমলার সাঁতারুরা বাংলাদেশ আনসার, ভিডিপি এবং বিজেএমসির পক্ষে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। কয়েক বছর আগেও আমলার সাঁতারুদের ওপর নির্ভর করে বিজেএমসি ও বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি সাঁতারু দল পদক তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।

স্থানীয় সংগঠকরা জানান, আমলার বেশি ভাগ সাঁতারু আনসারের হয়ে লড়ে থাকেন। তাই আমলায় একটি সুইমিংপুল গড়ে তোলার আগ্রহ দেখান আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক। সুইমিংপুল নির্মাণের জন্য কয়েক বছর আগে আমলা হাইস্কুলের কাছ থেকে দুই বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে কেনা হয়। কিন্তু সুইমিংপুল বাস্তবায়নের কোনও অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে ১৯৮১ সালের দিকে কুষ্টিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক সাঁতারের গোড়াপত্তন হয়। কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়ন গড়ে ওঠে প্রথম সুইমিং ক্লাব। সাঁতার ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ক্লাবটি গড়ে তোলেন।

আমিরুল ইসলাম বলেন, এখানে সাঁতারে সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটোই রয়েছে। তবে সমস্যার সমাধান না হলে অচিরেই সাঁতারে আগ্রহ হারাবে ছেলে-মেয়েরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশসেরা সাঁতারুদের গ্রামেই নেই সুইমিংপুল

আপডেট টাইম : ১০:৫১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

দেশসেরা তিন নারী সাঁতারু সবুরা খাতুন, মমতাজ শিরিন ও লাভলী খাতুন। তাদের সবার বাড়িই কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রামে। এছাড়া রুবেল রানা ও লাবণী আক্তার জুঁইসহ অনেক খ্যাতিমান সাঁতারুর জন্ম এখানেই।

দেশের জন্য বিভিন্ন সময় তারা এনে দিয়েছেন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার। তবে সেই গ্রামে এখনও তৈরি হয়নি কোনও সুইমিংপুল। এর অভাবে সাতারুদের প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে স্থানীয় পুকুরগুলোতে। শীতের সময় পানি শুকিয়ে গেলে বিপাকে পড়েন তারা।

বর্তমানে আমলা গ্রামের অর্ধশত তরুণ-তরুণী রয়েছেন দেশের সেরা সাঁতারুদের তালিকায়। দেশে বিভিন্ন বাহিনী বা ক্লাবের সুইমিংপুলের পানিতে ঝড় তুলছেন তারা। ২০০১ সালে ইরানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইসলামিক মহিলা সাঁতারে সবুরা স্বর্ণপদক এবং মমতাজ শিরিন রৌপ্য পদক জিতে নেন।

সাফ গেমসে আমলার সাঁতারু রুবেল রানা পেয়েছেন স্বর্ণপদক। সুইমিংপুল না থাকলেও সাতারুদের আশার প্রদ্বীপ হয়ে আছে একাধিক সুইমিং ক্লাব। এর মধ্যে আমলা সুইমিং ক্লাব, সাগরখালী সুইমিং ক্লাব, গড়াই সুইমিং ক্লাব, পপুলার সুইমিং ক্লাব ও সেন্টমার্টিন সুইমিং ক্লাব উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় সাঁতার ক্লাবগুলোতে শতাধিক শিশু-কিশোর সাঁতার অনুশীলন করে সারা বছর।

স্থানীয় সাঁতার কোচ মর্জিনা খাতুন জানান, দেশের সাঁতার প্রতিযোগিতাগুলোতে যাদের এত অবদান তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হয় ছোট্ট পুকুরে। দীর্ঘদিন থেকে এখানে একটি সুইমিংপুল স্থাপনের দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। একটি স্থায়ী সুইমিংপুল স্থাপন সম্ভব হলে এখানকার সাঁতারুরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাঁতারে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে।

আমলা সুইমিংপুলের কর্ণধার মাসুম-আল মাজি বলেন, সাঁতার শিখতে আসা শিক্ষার্থীরা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ৮০ ভাগ পদক এই গ্রামের সাতারুদের দখলে। সাঁতারুরা জানান, সুইমিংপুল না থাকায় আমলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের কয়েকটি পুকুরই তাদের শেষ ভরসা। বর্ষার সময় প্রশিক্ষণ চললেও শীতকালে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমস্যা হয়।

১৯৯০ সালের পর থেকে আমলার সাঁতারুরা বাংলাদেশ আনসার, ভিডিপি এবং বিজেএমসির পক্ষে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। কয়েক বছর আগেও আমলার সাঁতারুদের ওপর নির্ভর করে বিজেএমসি ও বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি সাঁতারু দল পদক তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।

স্থানীয় সংগঠকরা জানান, আমলার বেশি ভাগ সাঁতারু আনসারের হয়ে লড়ে থাকেন। তাই আমলায় একটি সুইমিংপুল গড়ে তোলার আগ্রহ দেখান আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক। সুইমিংপুল নির্মাণের জন্য কয়েক বছর আগে আমলা হাইস্কুলের কাছ থেকে দুই বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে কেনা হয়। কিন্তু সুইমিংপুল বাস্তবায়নের কোনও অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে ১৯৮১ সালের দিকে কুষ্টিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক সাঁতারের গোড়াপত্তন হয়। কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়ন গড়ে ওঠে প্রথম সুইমিং ক্লাব। সাঁতার ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ক্লাবটি গড়ে তোলেন।

আমিরুল ইসলাম বলেন, এখানে সাঁতারে সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটোই রয়েছে। তবে সমস্যার সমাধান না হলে অচিরেই সাঁতারে আগ্রহ হারাবে ছেলে-মেয়েরা।