ঢাকা ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বনসাই গাছে ম্যাজিক নারিকেল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১১:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৪০৫ বার

মাটি ছুঁই ছুঁই করে ঝুলছে নারিকেল! গাছে ওঠা দূরে থাক, মাটিতে বসেই নারিকেল পাড়া যাবে! এমন কথা বললে মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি না ‘ম্যাজিক নারিকেলের’ কথা জানা থাকে। বামন আকৃতির এই নারিকেল গাছই সম্ভব করেছে ওই অসম্ভবকে। তাই নারিকেলের এ জাতটি বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয় এই ‘ম্যাজিক নারিকেল’র ২০ হাজার চারা সম্প্রতি ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করেছে। এই চারা লাগানোর দুই বছর পরই নারিকেল ধরা শুরু হয়। মাটিতে ছুঁই ছুঁই এ নারিকেল মাটিতে বসেই পাড়া যাবে। আর দেশি জাতের চেয়ে এর ফলন প্রায় চারগুণ বেশি। তাই দেশের নারিকেলের অভাব দূর করার জন্য আরো ৭৫ হাজার চারা আমদানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ চারা দক্ষিণাঞ্চলের ১৮টি জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হবে।

সূত্র জানায়, এ দেশে থাই পেয়ারার প্রবক্তা কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান ভিয়েতনামে গিয়ে নারিকেলের দু’টি জাত সনাক্ত করেন। একটির নাম হচ্ছে সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ও অন্যটির নাম হচ্ছে সিয়াম গ্লু কোকোনাট। এই জাতের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো নারিকেল থেকেই এর চারা হবে। দুই থেকে আড়াই বছরে গাছে মুচি আসবে। প্রতিটি ডাব থেকে ৩০০ এমএল পানি পাওয়া যাবে। সিয়াম গ্লু কোকোনাট জাতটির পানি খুবই মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত। এটি বেঁটে প্রজাতির জাত। নারিকেল পারা সহজ। বর্তমানে নারিকেলে মাকড়ের আক্রমণ শুরু হয়েছে। বড় গাছের মাকড় মারা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই গাছের মাকড় খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

Magic-Coconat
সূত্র আরও জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় সারা বছর ফল উৎপাদনের জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘বছরব্যাপি ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’। এই প্রকল্পের অধীন প্রথম ধাপে ভিয়েতনাম থেকে ২০ হাজার ওই নারিকেল চারা আনা হয়েছে। আর চারা আনা হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, নারিকেলের উন্নয়নে কাজ করছে ‘এশিয়ান প্যাসেভিক কোকোনাট কমিউনিটি’। যার প্রধান কার্যালয় ইন্দোনেশিয়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশের নারিকেল নিয়ে সংস্থাটি কাজ করছে। এই সংস্থাটি এক জরিপ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশে ৪০ কোটি নারকেল গাছ লাগানো সম্ভব। কিন্তু উন্নত জাতের নারকেল চারার সন্ধান মেলেনি। কয়েক বছর আগে ভারত থেকে একটি জাত আনা হলেও তার চারা করা সম্ভব হয়নি। কেননা সেটি ছিল হাইব্রিড জাত। এরপরই ভিয়েতনামেই এই নারিকেলে জাতটির সন্ধান মিললো।

ওই প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ জানান, দেশে ডাবের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু নারিকেল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এজন্য বিশেষ এই জাতটি আমদানি করা হয়েছে। বছরে দেশি একটি গাছে ৫০ থেকে ৬০টি নারিকেল ধরলেও আমদানি করা এই গাছে গড়ে ২০০টি নারিকেল ধরবে। ঝড়ে এই গাছ ভাঙার কোন ভয় নেই। আর শুধু নারিকেল উৎপাদনই নয়, এই জাতটি নারিকেলজাত শিল্পেরও সম্প্রসারণ ঘটাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বনসাই গাছে ম্যাজিক নারিকেল

আপডেট টাইম : ০৯:১১:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

মাটি ছুঁই ছুঁই করে ঝুলছে নারিকেল! গাছে ওঠা দূরে থাক, মাটিতে বসেই নারিকেল পাড়া যাবে! এমন কথা বললে মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি না ‘ম্যাজিক নারিকেলের’ কথা জানা থাকে। বামন আকৃতির এই নারিকেল গাছই সম্ভব করেছে ওই অসম্ভবকে। তাই নারিকেলের এ জাতটি বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয় এই ‘ম্যাজিক নারিকেল’র ২০ হাজার চারা সম্প্রতি ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করেছে। এই চারা লাগানোর দুই বছর পরই নারিকেল ধরা শুরু হয়। মাটিতে ছুঁই ছুঁই এ নারিকেল মাটিতে বসেই পাড়া যাবে। আর দেশি জাতের চেয়ে এর ফলন প্রায় চারগুণ বেশি। তাই দেশের নারিকেলের অভাব দূর করার জন্য আরো ৭৫ হাজার চারা আমদানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ চারা দক্ষিণাঞ্চলের ১৮টি জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হবে।

সূত্র জানায়, এ দেশে থাই পেয়ারার প্রবক্তা কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান ভিয়েতনামে গিয়ে নারিকেলের দু’টি জাত সনাক্ত করেন। একটির নাম হচ্ছে সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ও অন্যটির নাম হচ্ছে সিয়াম গ্লু কোকোনাট। এই জাতের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো নারিকেল থেকেই এর চারা হবে। দুই থেকে আড়াই বছরে গাছে মুচি আসবে। প্রতিটি ডাব থেকে ৩০০ এমএল পানি পাওয়া যাবে। সিয়াম গ্লু কোকোনাট জাতটির পানি খুবই মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত। এটি বেঁটে প্রজাতির জাত। নারিকেল পারা সহজ। বর্তমানে নারিকেলে মাকড়ের আক্রমণ শুরু হয়েছে। বড় গাছের মাকড় মারা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই গাছের মাকড় খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

Magic-Coconat
সূত্র আরও জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় সারা বছর ফল উৎপাদনের জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘বছরব্যাপি ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’। এই প্রকল্পের অধীন প্রথম ধাপে ভিয়েতনাম থেকে ২০ হাজার ওই নারিকেল চারা আনা হয়েছে। আর চারা আনা হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, নারিকেলের উন্নয়নে কাজ করছে ‘এশিয়ান প্যাসেভিক কোকোনাট কমিউনিটি’। যার প্রধান কার্যালয় ইন্দোনেশিয়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশের নারিকেল নিয়ে সংস্থাটি কাজ করছে। এই সংস্থাটি এক জরিপ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশে ৪০ কোটি নারকেল গাছ লাগানো সম্ভব। কিন্তু উন্নত জাতের নারকেল চারার সন্ধান মেলেনি। কয়েক বছর আগে ভারত থেকে একটি জাত আনা হলেও তার চারা করা সম্ভব হয়নি। কেননা সেটি ছিল হাইব্রিড জাত। এরপরই ভিয়েতনামেই এই নারিকেলে জাতটির সন্ধান মিললো।

ওই প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ জানান, দেশে ডাবের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু নারিকেল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এজন্য বিশেষ এই জাতটি আমদানি করা হয়েছে। বছরে দেশি একটি গাছে ৫০ থেকে ৬০টি নারিকেল ধরলেও আমদানি করা এই গাছে গড়ে ২০০টি নারিকেল ধরবে। ঝড়ে এই গাছ ভাঙার কোন ভয় নেই। আর শুধু নারিকেল উৎপাদনই নয়, এই জাতটি নারিকেলজাত শিল্পেরও সম্প্রসারণ ঘটাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।