ঢাকা ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইটভাটায় জ্বলছে বনের গাছ, বিপন্ন পরিবেশ-জনস্বাস্থ্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৪:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৬৩০ বার

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন(নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ইটভাটায় গুলোতে জ্বলছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ, এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা লংঘন করে প্রাকৃতিক পাহাড়ের মাটি, চাষের জমির উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে ইট তৈরিতে।

সরেজমিন মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মহালছড়ি এবং জেলা সদরে স্থাপিত ইটভাটা গুলোতে গিয়ে দেখা সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং অশ্রেনীভুক্ত বনাঞ্চলের শতশত মন জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। উজাড়ের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না ব্যাক্তি মালিকানাধীন বাগানগুলোও। পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনির পরিবর্তে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যাবহারকরা হচ্ছে আবাসিক এলাকার পাশে,কৃষি জমি দখল করে ইটভাটা স্থাপন করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে ইটভাটার মালিকেরা।

ইটভাটা মালিক এসোসিয়েশন সুত্রে জানা যায়, একটি ইটভাটায় এক দফা ইট পোড়াতে ১২-১৫ দিন সময় লাগে। এ হিসেবে ইটের মৌসুমে (ডিসেম্বর-এপ্রিল) প্রায় ১০ দফা ইট পোড়ানো যায়। এক দফায় একটি ইট ভাটায় ইট পোড়াতে ৮-১০ হাজার মন জ্বালানী কাঠ প্রয়োজন হয়, আর ১০ দফায় একটি ইটভাটায় গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১লক্ষ মন পর্যন্ত গাছ পোড়ানে হয়।

IMG_4650খাগড়াছড়ির পরিবেশ কর্মী মোঃ রবিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন নীতিমালা লঙ্ঘন করে খাগড়াছড়ি জেলায় ইটভাটা চলছে। কিছু কিছু ইটভাটা আলুটিলা, বাইল্যাছড়ি এবং যুগলছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশে-পাশে হওয়ায় নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন বন বিভাগের কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে ও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

আরেক পরিবেশ কর্মী শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন মাটিরাংগা এবং মহালছড়ি উপজেলার পাঁচ ইটভাটায় পাহাড় কেটে মাটি ব্যাবহার করা হচ্ছে। আবার অনেক ইটভাটায় ব্যাবহার হচ্ছে চাষের জমির উর্বর অংশ। ফলে একদিকে পাহাড় অন্যদিকে ফসলী জমি ধবংস হ্েচ্ছ। প্রতি বছর এতে করে উৎপাদন কম হচ্ছে অথচ জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন এ বিষয়ে কোন ব্যাবস্থা নিচ্ছেনা।

খাগড়াছড়ি বার এসোসিয়েশনের সদস্য এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন, ২০১৩ এর ৪ ধারায় বলা আছে, লাইসেন্স ব্যাতিত কোন ব্যক্তি ইটের ভাটা স্থাপন করিতে পারিবেনা এবং ৬ ধারায় বলা আছে ইট পোড়াতে জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করা যাবেনা। অথচ খাগড়াছড়ি জেলায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ৩৩টি ইটভাটা আর সকল আইনের পাশ কাটিয়ে সবগুলোতেই জ্বালানো হচ্চে কাঠ।

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোমিনুর রশীদ জানান, ইটভাটা চালানোর অনুমতি দেওয়া আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়েনা। তিনি বনবিভাগের লোকজনের বন উজাড়ের সাথে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বলেন জনবলের অভাবে বন সংরক্ষন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি আরো জানান প্রতিটি রেঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে এই ব্যপারে সচেতন থাকতে অফিস আদেশ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ইটভাটা গুলোর অবস্থানগত দিক বিবেচনা করে ২০১৩সালের ৬ জানুয়ারী জেলার সব ক’টি ইটভাটাকে অবৈধ ঘোষণা করে এগুলোর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দিই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত তার কোন প্রতিফলন ঘটছেনা। তবে জেলা প্রশাসন সাধ্যমত চেষ্টা করছে কাঠ পোড়ানো বন্ধে।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা কামরুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, আমরা খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন হতে কোন চিঠি পাইনি তবে আপনি যদি কোন ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে তার তথ্য আমাদের দিতে পারেন তাহলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কাছে প্রেরণ করবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইটভাটায় জ্বলছে বনের গাছ, বিপন্ন পরিবেশ-জনস্বাস্থ্য

আপডেট টাইম : ১২:৩৪:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন(নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ইটভাটায় গুলোতে জ্বলছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ, এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা লংঘন করে প্রাকৃতিক পাহাড়ের মাটি, চাষের জমির উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে ইট তৈরিতে।

সরেজমিন মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মহালছড়ি এবং জেলা সদরে স্থাপিত ইটভাটা গুলোতে গিয়ে দেখা সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং অশ্রেনীভুক্ত বনাঞ্চলের শতশত মন জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। উজাড়ের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না ব্যাক্তি মালিকানাধীন বাগানগুলোও। পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনির পরিবর্তে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যাবহারকরা হচ্ছে আবাসিক এলাকার পাশে,কৃষি জমি দখল করে ইটভাটা স্থাপন করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে ইটভাটার মালিকেরা।

ইটভাটা মালিক এসোসিয়েশন সুত্রে জানা যায়, একটি ইটভাটায় এক দফা ইট পোড়াতে ১২-১৫ দিন সময় লাগে। এ হিসেবে ইটের মৌসুমে (ডিসেম্বর-এপ্রিল) প্রায় ১০ দফা ইট পোড়ানো যায়। এক দফায় একটি ইট ভাটায় ইট পোড়াতে ৮-১০ হাজার মন জ্বালানী কাঠ প্রয়োজন হয়, আর ১০ দফায় একটি ইটভাটায় গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১লক্ষ মন পর্যন্ত গাছ পোড়ানে হয়।

IMG_4650খাগড়াছড়ির পরিবেশ কর্মী মোঃ রবিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন নীতিমালা লঙ্ঘন করে খাগড়াছড়ি জেলায় ইটভাটা চলছে। কিছু কিছু ইটভাটা আলুটিলা, বাইল্যাছড়ি এবং যুগলছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশে-পাশে হওয়ায় নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন বন বিভাগের কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে ও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

আরেক পরিবেশ কর্মী শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন মাটিরাংগা এবং মহালছড়ি উপজেলার পাঁচ ইটভাটায় পাহাড় কেটে মাটি ব্যাবহার করা হচ্ছে। আবার অনেক ইটভাটায় ব্যাবহার হচ্ছে চাষের জমির উর্বর অংশ। ফলে একদিকে পাহাড় অন্যদিকে ফসলী জমি ধবংস হ্েচ্ছ। প্রতি বছর এতে করে উৎপাদন কম হচ্ছে অথচ জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন এ বিষয়ে কোন ব্যাবস্থা নিচ্ছেনা।

খাগড়াছড়ি বার এসোসিয়েশনের সদস্য এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন, ২০১৩ এর ৪ ধারায় বলা আছে, লাইসেন্স ব্যাতিত কোন ব্যক্তি ইটের ভাটা স্থাপন করিতে পারিবেনা এবং ৬ ধারায় বলা আছে ইট পোড়াতে জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করা যাবেনা। অথচ খাগড়াছড়ি জেলায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ৩৩টি ইটভাটা আর সকল আইনের পাশ কাটিয়ে সবগুলোতেই জ্বালানো হচ্চে কাঠ।

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোমিনুর রশীদ জানান, ইটভাটা চালানোর অনুমতি দেওয়া আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়েনা। তিনি বনবিভাগের লোকজনের বন উজাড়ের সাথে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বলেন জনবলের অভাবে বন সংরক্ষন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি আরো জানান প্রতিটি রেঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে এই ব্যপারে সচেতন থাকতে অফিস আদেশ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ইটভাটা গুলোর অবস্থানগত দিক বিবেচনা করে ২০১৩সালের ৬ জানুয়ারী জেলার সব ক’টি ইটভাটাকে অবৈধ ঘোষণা করে এগুলোর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দিই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত তার কোন প্রতিফলন ঘটছেনা। তবে জেলা প্রশাসন সাধ্যমত চেষ্টা করছে কাঠ পোড়ানো বন্ধে।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা কামরুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, আমরা খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন হতে কোন চিঠি পাইনি তবে আপনি যদি কোন ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে তার তথ্য আমাদের দিতে পারেন তাহলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কাছে প্রেরণ করবো।