ঢাকা ০২:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষি শ্রমিক সবজি চাষে দেশসেরা নির্বাচিত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৬
  • ৫৮৪ বার

আলতু মিয়া সবজি চাষে দেশসেরা নির্বাচিত হয়েছেন। কৃষিশ্রমিক থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া এই কৃষক নিরাপদ সবজি চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। তাই ২০১৫ সালে দেশের সেরা নিরাপদ সবজিচাষি নির্বাচন করা হয়েছে তাকে। গত ১৯ জানুয়ারি কৃষিসচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তার হাতে তুলে দেন সেরা এই পুরস্কার।

কৃষক আলতু মিয়ার আসল নাম আলতাফ হোসেন। আলতু মিয়া নামেই সবাই জানে তাকে। পুরস্কার পেয়ে খুশি আলতু মিয়া। তিনি জানান, অন্যের কৃষিজমিতে শ্রম বিক্রি করেছেন। একসময় নিজেই শুরু করেন সবজি চাষ। ক্রমান্বয়ে সবজি চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। এবার জাতীয় পর্যায়ে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। এই স্বীকৃতি তাকে আরো কর্মমুখর করে তুলেছে। বাকি জীবনটা এখন মাঠেই কাটিয়ে দিতে চান তিনি।

আলতু মিয়া (৫৫) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্নাবাজার সংলগ্ন গান্না গ্রামের মৃত রমজান আলীর পুত্র। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী আর তিন পুত্রসন্তান রয়েছে তার। নিজে কৃষিকাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন গোটা দিন। সকাল থেকে ঘুরে ফেরেন মাঠের পর মাঠ। আগে পায়ে হেঁটে চললেও বর্তমানে ঘুরছেন মোটরসাইকেলে। তার খেতে সারাক্ষণ ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

আর্থিক অনটনের কারণে আলতু মিয়াকে ছোটবেলাতেই তার বাবা অন্যের বাড়িতে রাখালের কাজে দেন। সেখান থেকে চলে যান ট্রাকের হেলপারের কাজে। হেলপারির এ সময়ে ঢাকার কারওয়ান বাজারে সবজি কেনাবেচা দেখে চাষে উদ্বুদ্ধ হন। একসময় বাড়ি ফিরে শুরু করেন সবজি চাষ।

১৯৮৪ সালের দিকে কিছু জমি বর্গা নেন। আস্তে আস্তে সবজি চাষ করে লাভবান হতে থাকেন। ক্রয়ের মাধ্যমে বাড়াতে থাকেন কৃষিজমি। আলতু মিয়া জানান, বর্তমানে তার ৫০ বিঘা জমি আছে। ক্রয় করেছেন ৯টি ট্রাক। যা তার সবজি পরিবহনে কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তিনি ব্যাংকে কিছু টাকা ঋণ আছেন। বড় ছেলে আব্দুর রকিব ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজে অনার্সে পড়ছে। মেজো ছেলে শামিম কবির এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আর ছোট ছেলে রিফাত কবির ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

গান্না এলাকার মাঠে আলাপকালে আলতু মিয়া জানান, শ্রমিকরা বেগুন, কপি, পেঁপে তুলছে। পাশেই ট্রাকে ভর্তি করা হচ্ছে। এগুলো সবই নিরাপদ সবজি। যাবে ঢাকায়।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে মাঠে তার ৩৯ বিঘা পেঁপে, ২১ বিঘা কলা, ৩০ বিঘা আলু, ৬ বিঘা বেগুন, ৬ বিঘা পটোল, ৬ বিঘা সরিষা, ফুল ও বাঁধা কপি আছে ২৭ বিঘা জমিতে। এ ছাড়াও আরো কিছু সবজি চাষ করেছেন তিনি। এসব চাষ তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী করে থাকেন। যেটাকে নিরাপদ সবজি বলা হয়।

এই সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার খুবই কম থাকে। সেটা এমন সময় এবং এত কম পরিমাণে ব্যবহার হয় যে মানুষের শরীরের কোনো ক্ষতির ঝুঁকি থাকে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষি শ্রমিক সবজি চাষে দেশসেরা নির্বাচিত

আপডেট টাইম : ১১:২৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৬

আলতু মিয়া সবজি চাষে দেশসেরা নির্বাচিত হয়েছেন। কৃষিশ্রমিক থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া এই কৃষক নিরাপদ সবজি চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। তাই ২০১৫ সালে দেশের সেরা নিরাপদ সবজিচাষি নির্বাচন করা হয়েছে তাকে। গত ১৯ জানুয়ারি কৃষিসচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তার হাতে তুলে দেন সেরা এই পুরস্কার।

কৃষক আলতু মিয়ার আসল নাম আলতাফ হোসেন। আলতু মিয়া নামেই সবাই জানে তাকে। পুরস্কার পেয়ে খুশি আলতু মিয়া। তিনি জানান, অন্যের কৃষিজমিতে শ্রম বিক্রি করেছেন। একসময় নিজেই শুরু করেন সবজি চাষ। ক্রমান্বয়ে সবজি চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। এবার জাতীয় পর্যায়ে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। এই স্বীকৃতি তাকে আরো কর্মমুখর করে তুলেছে। বাকি জীবনটা এখন মাঠেই কাটিয়ে দিতে চান তিনি।

আলতু মিয়া (৫৫) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্নাবাজার সংলগ্ন গান্না গ্রামের মৃত রমজান আলীর পুত্র। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী আর তিন পুত্রসন্তান রয়েছে তার। নিজে কৃষিকাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন গোটা দিন। সকাল থেকে ঘুরে ফেরেন মাঠের পর মাঠ। আগে পায়ে হেঁটে চললেও বর্তমানে ঘুরছেন মোটরসাইকেলে। তার খেতে সারাক্ষণ ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

আর্থিক অনটনের কারণে আলতু মিয়াকে ছোটবেলাতেই তার বাবা অন্যের বাড়িতে রাখালের কাজে দেন। সেখান থেকে চলে যান ট্রাকের হেলপারের কাজে। হেলপারির এ সময়ে ঢাকার কারওয়ান বাজারে সবজি কেনাবেচা দেখে চাষে উদ্বুদ্ধ হন। একসময় বাড়ি ফিরে শুরু করেন সবজি চাষ।

১৯৮৪ সালের দিকে কিছু জমি বর্গা নেন। আস্তে আস্তে সবজি চাষ করে লাভবান হতে থাকেন। ক্রয়ের মাধ্যমে বাড়াতে থাকেন কৃষিজমি। আলতু মিয়া জানান, বর্তমানে তার ৫০ বিঘা জমি আছে। ক্রয় করেছেন ৯টি ট্রাক। যা তার সবজি পরিবহনে কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তিনি ব্যাংকে কিছু টাকা ঋণ আছেন। বড় ছেলে আব্দুর রকিব ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজে অনার্সে পড়ছে। মেজো ছেলে শামিম কবির এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আর ছোট ছেলে রিফাত কবির ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

গান্না এলাকার মাঠে আলাপকালে আলতু মিয়া জানান, শ্রমিকরা বেগুন, কপি, পেঁপে তুলছে। পাশেই ট্রাকে ভর্তি করা হচ্ছে। এগুলো সবই নিরাপদ সবজি। যাবে ঢাকায়।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে মাঠে তার ৩৯ বিঘা পেঁপে, ২১ বিঘা কলা, ৩০ বিঘা আলু, ৬ বিঘা বেগুন, ৬ বিঘা পটোল, ৬ বিঘা সরিষা, ফুল ও বাঁধা কপি আছে ২৭ বিঘা জমিতে। এ ছাড়াও আরো কিছু সবজি চাষ করেছেন তিনি। এসব চাষ তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী করে থাকেন। যেটাকে নিরাপদ সবজি বলা হয়।

এই সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার খুবই কম থাকে। সেটা এমন সময় এবং এত কম পরিমাণে ব্যবহার হয় যে মানুষের শরীরের কোনো ক্ষতির ঝুঁকি থাকে না।