সেই ধনকুবে মুসা বিন শমসের এখন ‘মৃত্যু আতঙ্কে’ ভুগছেন!‘ডেথ ফোবিয়া’ বা মৃত্যু আশঙ্কা, সেই সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়েবেটিসে ভুগছেন- এমনসব রোগের কথা উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবে হাজির হচ্ছেন না আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের।
মঙ্গলবার দুপরে মেডিকেল রিপোর্টসহ লিখিতভাবে এসব রোগের কথা উল্লেখ করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কমপক্ষে ২ থেকে ৩ মাস পেছানোর আবেদন করেন তিনি।
বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তার জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও এর একদিন আগেই তিনি ডেথ ফোবিয়াসহ একাধিক রোগ দেখিয়ে সময়ের আবেদন করেন।
আবেদনের কপি দুদক চেয়ারম্যান, ২ কমিশনার, অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালক, একই বিভাগের পরিচালক এবং অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী বরাবর দিয়েছেন।
দুদকের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদকে মুসা বিন শমসেরের সময় পেছানোর আবেদনটি দিয়েছেন তার জনশক্তি প্রতিষ্ঠান ড্যাটকো প্রাইভেট লিমিটেড এর উপ-মহা ব্যবস্থাপক এটিএম মাহবুব মোর্শেদ।
আবেদন দেয়ার পর দুদক থেকে বের হওয়ার সময়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার (মুসা বিন শমসের) কমপক্ষে ২ থেকে ৩ মাস সময় পেছানোর আবেদন করেছেন।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার মৃত্যু আশঙ্কায় থাকেন। ডাক্তারি ভাষায় যেটা ডেথ ফোবিয়া। এছাড়া এটার সঙ্গে তার উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে।
মৃত্য আশঙ্কায় তিনি কখন থাকেন জানতে চাইলে বলেন, স্যার যখন ঘুমান তখন তার মনে হয় তিনি হয়তো মারা যেতে পারেন। সুইস ব্যাংকে তার টাকা জব্দ থাকায় এ টাকা কবে অবমুক্ত হয় এসব চিন্তায় হয়তো স্যারের এমন হচ্ছে।
সুইস ব্যাংকে অর্থ আছে কি না তা যাচাই করতে চলতি মাসের ৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরকে পুনরায় তলব করে দুদক। দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে তাকে ১৩ জানুয়ারি সকাল ১১টায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।
এ নোটিশের প্রেক্ষিতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি সময়ের আবেদন করেন।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুসাকে প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদ করে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। ওই জিজ্ঞাসাবাদে সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থ রয়েছে বলে দাবি করেন মুসা।
২০১৫ সালের ৭ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন মুসা বিন শমসের। সম্পদ বিবরণীতেও তিনি সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ৯৩,৬০০ কোটি টাকা) জব্দ অবস্থায় থাকার কথা উল্লেখ করেন।
সুইস ব্যাংকে ৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের (বাংলাদেশি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলঙ্কার জমার তথ্যও দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দুটি বাড়ি, সাভার ও গাজীপুরে ১,২০০ বিঘা জমির কথাও সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৯ মে তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক।
২০১৪ সালের শেষের দিকে ‘বিজনেস এশিয়া’ নামক একটি ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে মুসার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদক প্রথম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
ওই তলবে মুসা হীরার জুতা থেকে শুরু করে আপাদমস্তক মূল্যবান অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন। সঙ্গে ছিল নারী-পুরুষের অর্ধ শতাধিক দেহরক্ষীর বহর।