চলতি বছরের মার্চে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোট দুই ধাপে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথমবারের মত দলভিত্তিক এ নির্বাচনের জন্য বিধিমালা ও আচরণবিধি সংশোধনের কাজ গুছিয়ে আনা হচ্ছে বলেও ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনের পর এবার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভোট হবে। সদস্য পদ থাকছে নির্দলীয়। পৌর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিধিমালা সংশোধনেরও প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম শনিবার বলেন, মার্চেই প্রথম দফা ভোট করার পরিকল্পনা গোছানো হচ্ছে। মার্চের শেষ ভাগে উপকূলীয় ইউপিগুলোর নির্বাচন করতে হবে। পরের ধাপে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে করা যাবে বাকিগুলো। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের সুবিধা মতো ভোটের তারিখ নির্ধারণ করবেন।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন উপযোগী সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা হাতে পাওয়ার পর সম্প্রতি এই তোড়জোড় শুরু করেছে ইসি।
দেশে সব মিলিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে মোট আটবার (১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩ এবং ২০১১)। সর্বশেষ ২০১১ সালে প্রথম দফায় ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল প্রায় ছয়শ ইউপিতে ভোট হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই তিন হাজার ৮শ`র বেশি ইউপির নির্বাচন করা হয়।
এবারের প্রস্তুতি জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বলেন, ইসি সচিবালয়কে ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। মেয়াদ পূর্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কবে, কোথায় ভোট করা যাবে এ সংক্রান্ত তালিকা তাদের কাছে আসবে। সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি জানান, হালনাগাদ ভোটার তালিকায় প্রায় ৪৪ লাখ নতুন ভোটার যোগ হচ্ছে, যা চূড়ান্ত হবে ৩১ জানুয়ারি। ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। এ সময় কোনোভাবেই সাধারণ নির্বাচন করা যাবে না। এপ্রিল মাসে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা।
আগের মতো দুই ধাপে ভোট করা হবে, নাকি আরো বেশি ধাপে যেতে হবে তা পর্যালোচনা করা হবে। পরীক্ষার ফাঁকে উপযুক্ত সময় কখন পাওয়া যাবে তাও খতিয়ে দেখবেন। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়; প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা পাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব শরীফা আহমেদ ১ ডিসেম্বর ৪ হাজার ৫৪৪টি (তেজগাঁও সার্কেল ছাড়া) ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা ইসি সচিবের কাছে পাঠান। তাতে প্রতিটি ইউপির সর্বশেষ ভোটের তারিখ ও মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
ভোট আয়োজনের জন্য তালিকা পাঠিয়ে ইসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মামলা ও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে এমন ইউপি বাদ দিয়ে নির্বাচন উপযোগীগুলোই বিবেচনার জন্য কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে।
২০১১ সালে তফসিলে প্রথমধাপে মনোনয়ন দাখিল, বাছাই ও প্রত্যাহারের সময় উল্লেখ করে ভোটের জন্য সম্ভব্য ছয়টি দিন ঠিক করে দিয়েছিল কমিশন। এর মধ্যে একটি দিন ঠিক করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত সমন্বয় কমিটি তা ইসিকে অবহিত করেছিল। পরে ওই তারিখেই হয়েছিল ভোট। এবারও একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে ইসি।