ঢাকা ১২:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাহিদা কমতে থাকায় সংকটে বগুড়ার মৃৎশিল্পীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১৩:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অগাস্ট ২০২০
  • ২৩০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। কিন্তু আধুনিক যুগে কমে এসেছে মৃৎশিল্পীদের কর্মব্যস্ততা।

তবুও এ শিল্পেই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন তারা।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে কর্মব্যস্ত মৃৎশিল্পীদের দেখা মিলেছে। আধুনিক যুগে মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা কমায় তাদের কাজের চাপ অনেকাংশে কমে গেছে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে আরও দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে মাটির তৈরি শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। তার মধ্যে করোনার ভাইরাস যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে মৃৎশিল্প এবং সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠেীর জন্য।
প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুমার পল্লিতে চলে নারী-পুরুষ মৃৎশিল্পীদের কর্মযজ্ঞ। বংশ পরম্পরায় এ পেশাকেই জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পীরা। তারা এ শিল্পেই টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

বগুড়ার সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, গাবতলী, কাহালু উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে কয়েক হাজার মৃৎশিল্পী বসবাস করেন। শাজাহানপুর উপজেলার ডেমাজানি পালপাড়া এলাকার রাম গোপাল পাল, মাধব কুমার পাল, কৃষ্ণ কুমার পাল, সচিন কুমার পাল, অঞ্জলী রানী পাল, মানিক কুমার পালসহ একাধিক মৃৎশিল্পী বাংলানিউজকে জানান, বংশ পরম্পরায় তারা এ পেশা বেছে নিয়েছেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা জীবিকার তাগিদে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফুলবাড়ীর মৃিশল্পীদের দুর্দিন চলছে ...
তারা জানান, মাটির যে কোনো পাত্র বা বস্তু তৈরিতে আগে দরকার কাদা প্রস্তুত করা। পণ্যের মাপ বুঝে কাদা চাকার মাঝখানে রাখা হয়। এরপর পণ্যের পুরো অবয়ব ফুটে ওঠা পর্যন্ত ঘুরতে থাকে চাকা। সঙ্গে চলতে থাকে তাদের হাতের কারিশমা। চাকা ঘুরতে ঘুরতে এক সময় নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটি হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় শিল্প।
এরপর শুরু হয় তা শুকানোর কাজ। শুকানো শেষ হলে পণ্যগুলো স্তুপ আকারে সাজিয়ে চুল্লিতে নির্ধারিত স্থানে রাখা হয়। সেখানে পণ্যগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়। রকম বুঝে পণ্যের গায়ে রঙ মাখাতে তুলির ছোঁয়া লাগে। এরপর সেগুলো প্যাকেট করা হয়।

পরে এসব পণ্য বাজারে ওঠানো হয়। এর মধ্যে অনেক পণ্য অর্ডার অনুযায়ী বাড়ি থেকে নিয়ে যান ক্রেতারা। আবার অনেক পণ্য ব্যবসায়ীর ঠিকানায় পৌঁছে দিতে হয়।

গাবতলী উপজেলার মহিষাবান পালপাড়া এলাকার হরিদাস পাল, বিধান পাল, রঞ্জিত পাল বাংলানিউজকে জানান, বাবা-ঠাকুরদার কাছ থেকে শেখা এ কাজ। অন্য কাজও জানেন না তারা, তাই মাটির সামগ্রী তৈরির কাজই করছেন।
তারা জানান, একসময় গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর ছিল। মানুষ ঘর সাজাতে মাটির শোপিস ব্যবহার করতো। নিত্য প্রয়োজনেও মাটির তৈজসপত্রের ব্যবহার ছিল। বাচ্চারাও খেলতো মাটির পুতুল, পাখি, হরিণ, ঘোড়া, ফুল, ফল ইত্যাদি দিয়ে।

কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব জিনিসের ব্যবহার ব্যাপক হারে কমেছে। গ্রামের মানুষ মাটির কিছু জিনিস ব্যবহার করলেও শহরাঞ্চলে এসবের ব্যবহার আর নেই না বললেই চলে।
প্রিয় | ইন্টারনেট লাইফ
তবে দইয়ের সরা ও হাঁড়ি-পাতিলের কদর কমেনি বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর তাতেই আশার আলো দেখছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা। কারণ বগুড়া দইয়ের জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন শত শত মণ দই তৈরি হয় এ জেলায়। দই সাধারণত মাটির তৈরি পাত্রে রাখা হয়।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বর্তমানে নববর্ষসহ বিভিন্ন মেলা বন্ধ থাকায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের বিক্রি আরও কমে গেছে। সাধারণত মেলায় মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনাসহ নানা ধরনের সামগ্রী বেশ ভালো বিক্রি হয়।

তবে এখনো আশা ছাড়েননি মৃৎশিল্পীরা। তাদের সামনে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ঋণ দিলে কিছুটা আশার আলো দেখবেন তারা। সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পাওয়া গেলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প এখনো ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চাহিদা কমতে থাকায় সংকটে বগুড়ার মৃৎশিল্পীরা

আপডেট টাইম : ০২:১৩:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অগাস্ট ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। কিন্তু আধুনিক যুগে কমে এসেছে মৃৎশিল্পীদের কর্মব্যস্ততা।

তবুও এ শিল্পেই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন তারা।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে কর্মব্যস্ত মৃৎশিল্পীদের দেখা মিলেছে। আধুনিক যুগে মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা কমায় তাদের কাজের চাপ অনেকাংশে কমে গেছে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে আরও দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে মাটির তৈরি শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। তার মধ্যে করোনার ভাইরাস যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে মৃৎশিল্প এবং সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠেীর জন্য।
প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুমার পল্লিতে চলে নারী-পুরুষ মৃৎশিল্পীদের কর্মযজ্ঞ। বংশ পরম্পরায় এ পেশাকেই জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পীরা। তারা এ শিল্পেই টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

বগুড়ার সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, গাবতলী, কাহালু উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে কয়েক হাজার মৃৎশিল্পী বসবাস করেন। শাজাহানপুর উপজেলার ডেমাজানি পালপাড়া এলাকার রাম গোপাল পাল, মাধব কুমার পাল, কৃষ্ণ কুমার পাল, সচিন কুমার পাল, অঞ্জলী রানী পাল, মানিক কুমার পালসহ একাধিক মৃৎশিল্পী বাংলানিউজকে জানান, বংশ পরম্পরায় তারা এ পেশা বেছে নিয়েছেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা জীবিকার তাগিদে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফুলবাড়ীর মৃিশল্পীদের দুর্দিন চলছে ...
তারা জানান, মাটির যে কোনো পাত্র বা বস্তু তৈরিতে আগে দরকার কাদা প্রস্তুত করা। পণ্যের মাপ বুঝে কাদা চাকার মাঝখানে রাখা হয়। এরপর পণ্যের পুরো অবয়ব ফুটে ওঠা পর্যন্ত ঘুরতে থাকে চাকা। সঙ্গে চলতে থাকে তাদের হাতের কারিশমা। চাকা ঘুরতে ঘুরতে এক সময় নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটি হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় শিল্প।
এরপর শুরু হয় তা শুকানোর কাজ। শুকানো শেষ হলে পণ্যগুলো স্তুপ আকারে সাজিয়ে চুল্লিতে নির্ধারিত স্থানে রাখা হয়। সেখানে পণ্যগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়। রকম বুঝে পণ্যের গায়ে রঙ মাখাতে তুলির ছোঁয়া লাগে। এরপর সেগুলো প্যাকেট করা হয়।

পরে এসব পণ্য বাজারে ওঠানো হয়। এর মধ্যে অনেক পণ্য অর্ডার অনুযায়ী বাড়ি থেকে নিয়ে যান ক্রেতারা। আবার অনেক পণ্য ব্যবসায়ীর ঠিকানায় পৌঁছে দিতে হয়।

গাবতলী উপজেলার মহিষাবান পালপাড়া এলাকার হরিদাস পাল, বিধান পাল, রঞ্জিত পাল বাংলানিউজকে জানান, বাবা-ঠাকুরদার কাছ থেকে শেখা এ কাজ। অন্য কাজও জানেন না তারা, তাই মাটির সামগ্রী তৈরির কাজই করছেন।
তারা জানান, একসময় গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর ছিল। মানুষ ঘর সাজাতে মাটির শোপিস ব্যবহার করতো। নিত্য প্রয়োজনেও মাটির তৈজসপত্রের ব্যবহার ছিল। বাচ্চারাও খেলতো মাটির পুতুল, পাখি, হরিণ, ঘোড়া, ফুল, ফল ইত্যাদি দিয়ে।

কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব জিনিসের ব্যবহার ব্যাপক হারে কমেছে। গ্রামের মানুষ মাটির কিছু জিনিস ব্যবহার করলেও শহরাঞ্চলে এসবের ব্যবহার আর নেই না বললেই চলে।
প্রিয় | ইন্টারনেট লাইফ
তবে দইয়ের সরা ও হাঁড়ি-পাতিলের কদর কমেনি বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর তাতেই আশার আলো দেখছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা। কারণ বগুড়া দইয়ের জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন শত শত মণ দই তৈরি হয় এ জেলায়। দই সাধারণত মাটির তৈরি পাত্রে রাখা হয়।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বর্তমানে নববর্ষসহ বিভিন্ন মেলা বন্ধ থাকায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের বিক্রি আরও কমে গেছে। সাধারণত মেলায় মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনাসহ নানা ধরনের সামগ্রী বেশ ভালো বিক্রি হয়।

তবে এখনো আশা ছাড়েননি মৃৎশিল্পীরা। তাদের সামনে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ঋণ দিলে কিছুটা আশার আলো দেখবেন তারা। সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পাওয়া গেলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প এখনো ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।