বিএনপি নেতা তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ অনেকেই ‘হাওয়া ভবনে’ বসে গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন নাজিমউদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের ২০১তম এই সাক্ষী সেই দিনের নৃশংস ঘটনার বর্ণনা দেন।
তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন। এরপর আসামিপক্ষ কাজী জাফরউল্লাহকে জেরা করেন।
মঙ্গলবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী কাজী জাফরউল্লাহ তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য এ গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। বিএনপি নেতা তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, মুফতি আবদুল হান্নানসহ অনেকেই হাওয়া ভবনে বসে গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল। পাশাপাশি সে সময় চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারি বাসভবনেও ষড়যন্ত্র হয়; যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি।’
জবানবন্দি শেষে মর্মান্তিক এ ঘটনার ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন তিনি।
জবানবন্দিতে জাফরউল্লাহ আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার পর পরই শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাখে তার নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর তাকে জিপের সামনের সিটে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় পেছনের সিটে বসা ছিলেন, তার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী।’
তিনি বলেন, ‘বোমা হামলার পর ছোটাছুটি শুরু হয়। আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেত্রী আহত অবস্থায় রাস্তার ওপর পড়ে ছিলেন।’
নিজের আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে জাফরউল্লাহ বলেন, ‘কিছু লোকজন এসে আমাকে ভ্যানে করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে সাবের হোসেন চৌধুরী আমাকে শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তিন দিন থাকার পর পরবর্তীতে সুচিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যায় আমার পরিবার। ওখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমার শরীরে এখনও ১২/১৫টা স্প্রিন্টার রয়েছে।’
সাক্ষ্য শেষে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই সাক্ষী কাজী জাফরউল্লাহ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি একজন যুবককে গ্রেনেড ছুড়তে দেখেছেন। গ্রেনেডের আঘাতে তিনি মারাত্মক আহত হয়েছিলেন।’
জবানবন্দি শেষে এই সাক্ষীকে ৬ আসামি যথাক্রমে পলাতক তারেক রহমান, সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হারিছ চৌধুরী, মাওলানা তাজউদ্দিন, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ এবং কারাগারে থাকা মুফতি আবদুল হান্নান ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর পক্ষে আইনজীবীরা আলাদাভাবে জেরা করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল, আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার মামলার আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, জঙ্গি সংগঠন হুজির নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ অন্যান্যদের আদালতে হাজির করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন।
সংবাদ শিরোনাম
হাওয়া ভবনে বসে গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১২:১৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫
- ৩২৫ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ