ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফ্রিকান শামুকের প্রাদুর্ভাব, হুমকিতে দেশের কৃষি ব্যবস্থা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫
  • ১৬১৮ বার

শামুক আমাদের খুব পরিচিত একটি প্রাণি। শামুক প্রাণিজগতের মোলাস্কা (সড়ষষঁংপধ) পর্বের অন্তর্ভূক্ত একটি পাণি। মরুভূমি থেকে শুরু করে নদী, বদ্ধ জলাশয়, জলাশয়, সমুদ্র উপকূলসহ অনেক বৈরী আবহাওয়াতেও এরা বেঁচে থাকতে পারে। অধিকাংশ শামুকই পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি করে না। তবে এদের কিছু কিছু প্রজাতি মানুষ এবং কিছু উদ্ভিদের জন্য বেশ ক্ষতিকারক।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সাম্প্রতিক এক প্রজাতির শামুকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যেগুলো উদ্যানতত্ত্ব (বাগান জাতীয়) উদ্ভিদের জন্য হুমকি স্বরূপ। শামুকের বিচিত্র এই প্রজাতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামূলক কৃষি ব্যবস্থা কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। সেই সাথে উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর এ শামুকটি সারা দেশের কৃষি ও বাগান ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলবে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বাগানে এবছর এই শামুক বাগানবিলাস, জিনিয়া, গাদা, কেকটাস, সিলভিয়সহ বিভিন্ন গাছের কচি পাতা খেয়ে ফেলছে। ফলে গাছগুলোর সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো গাছ এই শামুকের কারণে মারাও যাচ্ছে।

বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড.এম.এ সালাম বলেন, শামুকের এই প্রজাতিটি হচ্ছে আফ্রিকান জায়ান্ট ল্যান্ড ¯েœইল। বিদেশীদের আগমের সাথে সাথে এটি আমাদের দেশে এসে থাকার কথা। ২০০২ সালে শ্রীমঙ্গলে ব্রিটিশদের একটি রেস্টুরেন্টে আমি এটা প্রথম দেখতে পাই। ফসল ও বাগানের ক্ষতি করে বলে সে সময় তারা এদের ধরে ধরে মেরে ফেলত। কিন্তু এরপর এদের তেমন আর দেখা যায়নি। এরা পানিতে বাস করেন না। ডাঙায় বাস করে বাগান নষ্ট করে ফেলে এবং বাগান জাতীয় ফসলের জন্য বেশ ক্ষতিকর। দিনের বেলা অত্যাধিক সূর্যালোক থেকে বাঁচতে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যা হলেই ঝাঁকেঝাঁকে বের হয়ে আসে। অতি বৃষ্টির সময় এরা দালানের দেয়ালে বেয়ে উপরে উঠে আশ্রয় নেয়। এর মাংস খুবই শক্ত বিধায় পশু-পাখিরাও খেতে চায় না। আমাদের দেশীয় যেসব শামুক আছে সেগুলো উপকারী এবং তারা স্থলভূমিতে উঠে আসে না, বরং পানিতেই থাকে। কিন্তু এটি গাছপালা, লতাপাতা, ফলমূল খেয়ে ধ্বংস করে। এমনকি দিনের বেলাতেও অনেকসময় এরা গাছের (যেমন-পেঁপে) মাথায় উঠে গাছের পাতা খেয়ে গাছ ধ্বংস করে। যা আমাদের দেশের কৃষির জন্য মারাতœক হুমকিস্বরূপ।

এই শামুক থেকে পরিত্রান সম্পর্কে ড. সালাম জানান, এটিকে অতিশীঘ্রই নির্মূলের ব্যবস্থা করতে হবে। এর উপকারীতা বলতে কিছু নাই। এক ধ্বংস করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। গবেষণার মাধমে যেভাবেই হোক এর প্রজনন ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়া নষ্ট করতে হবে। অতি দ্রুত একে ধ্বংস না করা হলে এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে হুমকির মুখে পড়বে দেশের কৃষির একটা বিরাট অংশ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আফ্রিকান শামুকের প্রাদুর্ভাব, হুমকিতে দেশের কৃষি ব্যবস্থা

আপডেট টাইম : ০৯:২০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

শামুক আমাদের খুব পরিচিত একটি প্রাণি। শামুক প্রাণিজগতের মোলাস্কা (সড়ষষঁংপধ) পর্বের অন্তর্ভূক্ত একটি পাণি। মরুভূমি থেকে শুরু করে নদী, বদ্ধ জলাশয়, জলাশয়, সমুদ্র উপকূলসহ অনেক বৈরী আবহাওয়াতেও এরা বেঁচে থাকতে পারে। অধিকাংশ শামুকই পরিবেশের তেমন কোনো ক্ষতি করে না। তবে এদের কিছু কিছু প্রজাতি মানুষ এবং কিছু উদ্ভিদের জন্য বেশ ক্ষতিকারক।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সাম্প্রতিক এক প্রজাতির শামুকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যেগুলো উদ্যানতত্ত্ব (বাগান জাতীয়) উদ্ভিদের জন্য হুমকি স্বরূপ। শামুকের বিচিত্র এই প্রজাতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামূলক কৃষি ব্যবস্থা কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। সেই সাথে উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর এ শামুকটি সারা দেশের কৃষি ও বাগান ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলবে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বাগানে এবছর এই শামুক বাগানবিলাস, জিনিয়া, গাদা, কেকটাস, সিলভিয়সহ বিভিন্ন গাছের কচি পাতা খেয়ে ফেলছে। ফলে গাছগুলোর সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো গাছ এই শামুকের কারণে মারাও যাচ্ছে।

বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড.এম.এ সালাম বলেন, শামুকের এই প্রজাতিটি হচ্ছে আফ্রিকান জায়ান্ট ল্যান্ড ¯েœইল। বিদেশীদের আগমের সাথে সাথে এটি আমাদের দেশে এসে থাকার কথা। ২০০২ সালে শ্রীমঙ্গলে ব্রিটিশদের একটি রেস্টুরেন্টে আমি এটা প্রথম দেখতে পাই। ফসল ও বাগানের ক্ষতি করে বলে সে সময় তারা এদের ধরে ধরে মেরে ফেলত। কিন্তু এরপর এদের তেমন আর দেখা যায়নি। এরা পানিতে বাস করেন না। ডাঙায় বাস করে বাগান নষ্ট করে ফেলে এবং বাগান জাতীয় ফসলের জন্য বেশ ক্ষতিকর। দিনের বেলা অত্যাধিক সূর্যালোক থেকে বাঁচতে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যা হলেই ঝাঁকেঝাঁকে বের হয়ে আসে। অতি বৃষ্টির সময় এরা দালানের দেয়ালে বেয়ে উপরে উঠে আশ্রয় নেয়। এর মাংস খুবই শক্ত বিধায় পশু-পাখিরাও খেতে চায় না। আমাদের দেশীয় যেসব শামুক আছে সেগুলো উপকারী এবং তারা স্থলভূমিতে উঠে আসে না, বরং পানিতেই থাকে। কিন্তু এটি গাছপালা, লতাপাতা, ফলমূল খেয়ে ধ্বংস করে। এমনকি দিনের বেলাতেও অনেকসময় এরা গাছের (যেমন-পেঁপে) মাথায় উঠে গাছের পাতা খেয়ে গাছ ধ্বংস করে। যা আমাদের দেশের কৃষির জন্য মারাতœক হুমকিস্বরূপ।

এই শামুক থেকে পরিত্রান সম্পর্কে ড. সালাম জানান, এটিকে অতিশীঘ্রই নির্মূলের ব্যবস্থা করতে হবে। এর উপকারীতা বলতে কিছু নাই। এক ধ্বংস করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। গবেষণার মাধমে যেভাবেই হোক এর প্রজনন ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়া নষ্ট করতে হবে। অতি দ্রুত একে ধ্বংস না করা হলে এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে হুমকির মুখে পড়বে দেশের কৃষির একটা বিরাট অংশ।