ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৪:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুলাই ২০১৮
  • ২৯৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে, অনেক বিশ্বনেতা তাকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাতিসংঘ তাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সেই নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কিংবা পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে তারা অত্যন্ত মানবেতরভাবে বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের কিছুু সাহায্য-সহযোগিতা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দেশটির সরকার ক্রমাগতভাবে টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করছে।

নিষ্ঠুরতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারেও কার্যত কিছুই করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিজ চোখে দেখতে বাংলাদেশে এসেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ফিরে গিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় অত্যন্ত আবেগময় ভাষায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ও তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বসম্প্রদায়ের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, বৈশ্বিক শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোও যেখানে তাদের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, সেখানে একটি দুর্বল অর্থনীতির দেশ হয়েও বাংলাদেশ যেভাবে সীমান্ত খুলে দিয়েছে, তা তুলনাহীন। এখন এই ১১ লাখ রোহিঙ্গা যাতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য জাতিসংঘ সাময়িকভাবে ১০০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে তার মাত্র ২৬ শতাংশ অর্থ। এই অর্থে তাদের খাদ্য, স্যানিটেশন, চিকিৎসার মতো জরুরি প্রয়োজন মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বসম্প্রদায় দ্রুত মানবিক সহযোগিতার হাত আরো সম্প্রসারিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও সম্মানযোগ্য প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে সম্মত করানোর জন্যও তিনি বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তা না হলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলাদেশ যে বিপজ্জনক অবস্থায় পড়বে, তা বিশ্বব্যাপী একটি বাজে উদাহরণ তৈরি করবে এবং ভবিষ্যতে অন্য কোনো দেশ নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা আর কোনো জনগোষ্ঠীকে এভাবে সীমান্ত খুলে আশ্রয় দিতে চাইবে না। রোহিঙ্গা সংকটের নানা দিক বিবেচনা করেই জাতিসংঘের মহাসচিব বিশ্ববাসীর প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, বিশ্বসম্প্রদায় তাঁর এই আহ্বানের গুরুত্ব অনুধাবন করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত মোকাবেলা করা না হলে তা আরো অনেক দিকেই ডালপালা বিস্তার করবে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। অনেকের মতে, তা আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে দেবে এবং তা থেকে মিয়ানমারও রেহাই পাবে না। আমরা আশা করি, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব এই সংকট সমাধান করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান

আপডেট টাইম : ১০:২৪:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে, অনেক বিশ্বনেতা তাকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাতিসংঘ তাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সেই নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কিংবা পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে তারা অত্যন্ত মানবেতরভাবে বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের কিছুু সাহায্য-সহযোগিতা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দেশটির সরকার ক্রমাগতভাবে টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করছে।

নিষ্ঠুরতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারেও কার্যত কিছুই করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিজ চোখে দেখতে বাংলাদেশে এসেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ফিরে গিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় অত্যন্ত আবেগময় ভাষায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ও তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বসম্প্রদায়ের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, বৈশ্বিক শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোও যেখানে তাদের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, সেখানে একটি দুর্বল অর্থনীতির দেশ হয়েও বাংলাদেশ যেভাবে সীমান্ত খুলে দিয়েছে, তা তুলনাহীন। এখন এই ১১ লাখ রোহিঙ্গা যাতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য জাতিসংঘ সাময়িকভাবে ১০০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে তার মাত্র ২৬ শতাংশ অর্থ। এই অর্থে তাদের খাদ্য, স্যানিটেশন, চিকিৎসার মতো জরুরি প্রয়োজন মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বসম্প্রদায় দ্রুত মানবিক সহযোগিতার হাত আরো সম্প্রসারিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও সম্মানযোগ্য প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে সম্মত করানোর জন্যও তিনি বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তা না হলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলাদেশ যে বিপজ্জনক অবস্থায় পড়বে, তা বিশ্বব্যাপী একটি বাজে উদাহরণ তৈরি করবে এবং ভবিষ্যতে অন্য কোনো দেশ নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা আর কোনো জনগোষ্ঠীকে এভাবে সীমান্ত খুলে আশ্রয় দিতে চাইবে না। রোহিঙ্গা সংকটের নানা দিক বিবেচনা করেই জাতিসংঘের মহাসচিব বিশ্ববাসীর প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, বিশ্বসম্প্রদায় তাঁর এই আহ্বানের গুরুত্ব অনুধাবন করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত মোকাবেলা করা না হলে তা আরো অনেক দিকেই ডালপালা বিস্তার করবে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। অনেকের মতে, তা আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে দেবে এবং তা থেকে মিয়ানমারও রেহাই পাবে না। আমরা আশা করি, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব এই সংকট সমাধান করা হবে।