ঢাকা ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওর তীরের মানুষের দুর্দশা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০১৭
  • ২৭৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দফায় দফায় দীর্ঘ বন্যা। এ বছর হাকালুকি হাওর তীরের মানুষ বন্যায় নাকাল। তৃতীয় দফার বন্যায় এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া বন্যা এখনো চলমান। এ বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়াতে হাওরপারের বাসিন্দাদের কষ্টের অন্ত নেই। এখনো হাওরের নিচু এলাকাগুলোতে বানের পানির রাজত্ব। তাই কর্ম না থাকা বাসস্থান হীন অসহায় মানুষগুলোর যেমন খাদ্যঘাটতি। তেমনি নতুন উপদ্রব দূষিত বানের পানিতে নানা রোগবালাই। হাওর পাড়ের নিচু এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসনালয় সবই এখনো জলমগ্ন। হাওর পাড়ের অধিকাংশ বাসিন্দার নিজের বসতভিটায় মাথাগুঁজার যেমন নেই ঠাঁই। তেমনি তাদের গৃহপালিত পশুরও। অসহায় বানভাসি মানুষগুলো কোনো রকম ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু সেখানেও নানা প্রতিকূলতা। পর্যাপ্ত খাবার যেমন নেই, তেমনি বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটেরও নেই সু-ব্যবস্থা। গেল ক’দিন থেকে বৃষ্টি কম হওয়াতে আর উজান হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোত কমে যাওয়ায় হাওরের তীরবর্তী উঁচু এলাকায় পানি কমেছে। কিন্তু হাওরপারের (নিচু এলাকার) বাসিন্দাদের দুর্ভোগ এখনো শেষ হয়নি। কারণ পানি কিছুটা কমলেও নিচু এলাকায় নৌকা ছাড়া চলাচল করা যাচ্ছে না। তাদের অধিকাংশ রাস্তাঘাট এখনো বানের পানিতে তলিয়ে আছে। হাওরের তীরবর্তী গ্রামগুলোতে পানি কমলেও সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা পড়ছেন নতুন নতুন নানা দুর্ভোগে। উজান এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি কমতে শুরু করলেও বানের পানিতে দীর্ঘদিন নিমজ্জিত থাকায় তা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসতবাড়িগুলো বসবাসের উপযোগী করতে  হলে সেখানে  অনেকটা নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরির প্রয়োজন। এ বছর এমনিতে একের পর এক বন্যায় তাদের সবই কেড়ে নিয়েছে। পাঁচ মাস থেকে বয়ে চলা তিন দফার বন্যায় নিঃস্ব করেছে তাদের। তাই  নিজেদের খাওয়া-বাঁচা নিয়ে যেখানে তারা দুশ্চিন্তায় সেখানে নতুন করে বসতঘর আর বাড়ির (ব্যক্তিগত) রাস্তাঘাট তৈরি করা প্রায় অসম্ভব এমনটি জানালেন হাওর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। গতকাল সরজমিনে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম এলাকায় গেলে বন্যার্ত অসহায় লোকজন তাদের নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। তারা জানালেন বন্যার পর থেকে তারা পুরোপুরি কর্মহীন। আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অসহায়। একের এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বানের পানি তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। এ বছর মার্চের প্রথম দিকে শুরু হওয়া বন্যায় তলিয়ে দেয় তাদের স্বপ্নের সোনালি ফসল বোরো ধান। বোরো ধান পচা বিষক্রিয়ায় মরে হাওরের মাছ। বিষাক্ত ওই মরা পচা মাছ খেয়ে মরে গৃহপালিত হাঁস। এরপর মরে জলজপ্রাণি ও উদ্ভিদও। তারপরও দফায় দফায় বন্যায় কেড়ে নেয় তাদের খাওয়া বাঁচার সব অবলম্বন। হাওরপারের বাসিন্দাদের ধারণা আর মুষল ধারে বৃষ্টি না হলে হয়তো আরো কিছুদিন গেলে পানি নামতে পারে। তখন দেখা দিবে নতুন নানা সমস্যা। ওই সময় বসতগৃহ নির্মাণ আর নানা রোগ বালাই মোকাবিলা করবেন কিভাবে তা নিয়ে এখন থেকেই তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের একটি গ্রামের ১০-১২ জন বাসিন্দা সম্প্রতি মাছ ধরার জন্য তাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা একটি গাঙ্গের কিছু অংশ সেচ দেন। সেখানে তারা বোয়াল, বাইম, পুটি, টেংরাসহ নানা জাতের দেশীয় প্রজাতির মাছের দেখা পেলেও তা পুরোপুরি ধরতে পারেননি। কারণ বর্ষা মৌসুম থাকায় উজানে দেয়া বাঁধ মাছ ধরার আগেই স্রোতের তোড়ে ভেঙে মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তবে মাছ না পেলেও মাছের দেখা পাওয়ায় তারা খুশি। কারণ তাদের ধারণা ছিল এ বছর হাওরের এতবড় বিপর্যয়ের পর হাওরে দেশি প্রজাতির মাছ বেঁচে আছে কিনা। আর দেশি প্রজাতির মাছ পাবেন কিনা। তারা জানালেন যারা ওই গাঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন যাদের শরীরে এই পানি লেগেছে তাদের প্রত্যেকেরই শরীরে বড় বড় লাল দাগের মতো হয়ে তাতে চুলকাচ্ছে। দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। এই পানি শরীরে লাগার পর থেকে তাদের চুলকানি এবং মাথাব্যথা, জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়েছে। বন্যার এই পানি যে কি পরিমাণ বিষাক্ত তা হাড়ে হাড়ে এখন তারা টের পাচ্ছেন। তাদের মতো একই কথা জানালেন হাওরপারের বাসিন্দারা। জানালেন এই পানিতে যেমন প্রচুর জোঁক এসেছে। তেমনি এই পানি শরীরে লাগলেই নানা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। নতুন নতুন নানা ধরনের উপদ্রবে আক্রান্ত হয়ে এখন হাওরপারে বসবাস করবেন কি না এমনটি ভাবতে শুরু করেছেন। হাওরপারের ছোট বড় বাজারগুলোর দোকানিরা জানালেন গেল প্রায় ৫ মাস থেকে তাদের ব্যবসায় দুর্দিন যাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অভাবে থাকায় দোকানমুখী হচ্ছেন কম। একই অবস্থা গাড়ি চালকদের। স্থানীয় সড়কগুলো পানিমগ্ন থাকায় তাদের আয় রোজগার নেই বললেই চলে। হাওর পাড়ের বাসিন্দারা ক্ষোভে দুঃখে জানালেন শুনলাম হাওরের ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ হিসেবে কতকিছু পাবে। কই নানা জনের প্রতিশ্রুত সেই ত্রাণ গেল কই। আমরা কি পেলাম এত বড় বিপর্যয়ে। বলতে গেলে শুধু সান্ত্বনা ছাড়া আমাদের কপালে কিছুই জোটেনি। দু’একজন যা পেয়েছে তা দিয়ে পরিবার পরিজনের ঠিকমতো দু’বেলা দু’মুঠো ভাতেরও জোগান হয়নি। আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি তা আপনারই দেখছেন। কিন্তু আমাদের এই চরম দুর্দশার দিনে আমরা কি উল্লেখযোগ্য সাহায্য পেলাম। এজন্য আমরা বারবার বলেছি এখনো বলছি। আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা ভিখারি হতে চাই না। আমাদের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। কর্ম করে খেতে চাই। মাছ ধরে ও ধান ফলিয়ে নিজে খেতে চাই এবং অন্যকেও খাওয়াতে চাই। এদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও হাওর বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ হাওর ও হাওরবাসীদের এমন দুর্দশা লাঘবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি আর্কষণ করে জেলা ও উপজেলায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এসব কর্মসূচি থেকে তারা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন অবিলম্বে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর এবং মনু, ফানাই, ধলাই ও জুড়ী নদীসহ অন্যান্য নদী সংস্কার, হাওর উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় এনে হাওর অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, জলজপ্রাণি ও উদ্ভিদ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওর তীরের মানুষের দুর্দশা

আপডেট টাইম : ১২:১৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দফায় দফায় দীর্ঘ বন্যা। এ বছর হাকালুকি হাওর তীরের মানুষ বন্যায় নাকাল। তৃতীয় দফার বন্যায় এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া বন্যা এখনো চলমান। এ বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়াতে হাওরপারের বাসিন্দাদের কষ্টের অন্ত নেই। এখনো হাওরের নিচু এলাকাগুলোতে বানের পানির রাজত্ব। তাই কর্ম না থাকা বাসস্থান হীন অসহায় মানুষগুলোর যেমন খাদ্যঘাটতি। তেমনি নতুন উপদ্রব দূষিত বানের পানিতে নানা রোগবালাই। হাওর পাড়ের নিচু এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসনালয় সবই এখনো জলমগ্ন। হাওর পাড়ের অধিকাংশ বাসিন্দার নিজের বসতভিটায় মাথাগুঁজার যেমন নেই ঠাঁই। তেমনি তাদের গৃহপালিত পশুরও। অসহায় বানভাসি মানুষগুলো কোনো রকম ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু সেখানেও নানা প্রতিকূলতা। পর্যাপ্ত খাবার যেমন নেই, তেমনি বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটেরও নেই সু-ব্যবস্থা। গেল ক’দিন থেকে বৃষ্টি কম হওয়াতে আর উজান হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোত কমে যাওয়ায় হাওরের তীরবর্তী উঁচু এলাকায় পানি কমেছে। কিন্তু হাওরপারের (নিচু এলাকার) বাসিন্দাদের দুর্ভোগ এখনো শেষ হয়নি। কারণ পানি কিছুটা কমলেও নিচু এলাকায় নৌকা ছাড়া চলাচল করা যাচ্ছে না। তাদের অধিকাংশ রাস্তাঘাট এখনো বানের পানিতে তলিয়ে আছে। হাওরের তীরবর্তী গ্রামগুলোতে পানি কমলেও সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা পড়ছেন নতুন নতুন নানা দুর্ভোগে। উজান এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি কমতে শুরু করলেও বানের পানিতে দীর্ঘদিন নিমজ্জিত থাকায় তা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসতবাড়িগুলো বসবাসের উপযোগী করতে  হলে সেখানে  অনেকটা নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরির প্রয়োজন। এ বছর এমনিতে একের পর এক বন্যায় তাদের সবই কেড়ে নিয়েছে। পাঁচ মাস থেকে বয়ে চলা তিন দফার বন্যায় নিঃস্ব করেছে তাদের। তাই  নিজেদের খাওয়া-বাঁচা নিয়ে যেখানে তারা দুশ্চিন্তায় সেখানে নতুন করে বসতঘর আর বাড়ির (ব্যক্তিগত) রাস্তাঘাট তৈরি করা প্রায় অসম্ভব এমনটি জানালেন হাওর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। গতকাল সরজমিনে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম এলাকায় গেলে বন্যার্ত অসহায় লোকজন তাদের নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। তারা জানালেন বন্যার পর থেকে তারা পুরোপুরি কর্মহীন। আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অসহায়। একের এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বানের পানি তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। এ বছর মার্চের প্রথম দিকে শুরু হওয়া বন্যায় তলিয়ে দেয় তাদের স্বপ্নের সোনালি ফসল বোরো ধান। বোরো ধান পচা বিষক্রিয়ায় মরে হাওরের মাছ। বিষাক্ত ওই মরা পচা মাছ খেয়ে মরে গৃহপালিত হাঁস। এরপর মরে জলজপ্রাণি ও উদ্ভিদও। তারপরও দফায় দফায় বন্যায় কেড়ে নেয় তাদের খাওয়া বাঁচার সব অবলম্বন। হাওরপারের বাসিন্দাদের ধারণা আর মুষল ধারে বৃষ্টি না হলে হয়তো আরো কিছুদিন গেলে পানি নামতে পারে। তখন দেখা দিবে নতুন নানা সমস্যা। ওই সময় বসতগৃহ নির্মাণ আর নানা রোগ বালাই মোকাবিলা করবেন কিভাবে তা নিয়ে এখন থেকেই তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের একটি গ্রামের ১০-১২ জন বাসিন্দা সম্প্রতি মাছ ধরার জন্য তাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা একটি গাঙ্গের কিছু অংশ সেচ দেন। সেখানে তারা বোয়াল, বাইম, পুটি, টেংরাসহ নানা জাতের দেশীয় প্রজাতির মাছের দেখা পেলেও তা পুরোপুরি ধরতে পারেননি। কারণ বর্ষা মৌসুম থাকায় উজানে দেয়া বাঁধ মাছ ধরার আগেই স্রোতের তোড়ে ভেঙে মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তবে মাছ না পেলেও মাছের দেখা পাওয়ায় তারা খুশি। কারণ তাদের ধারণা ছিল এ বছর হাওরের এতবড় বিপর্যয়ের পর হাওরে দেশি প্রজাতির মাছ বেঁচে আছে কিনা। আর দেশি প্রজাতির মাছ পাবেন কিনা। তারা জানালেন যারা ওই গাঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন যাদের শরীরে এই পানি লেগেছে তাদের প্রত্যেকেরই শরীরে বড় বড় লাল দাগের মতো হয়ে তাতে চুলকাচ্ছে। দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। এই পানি শরীরে লাগার পর থেকে তাদের চুলকানি এবং মাথাব্যথা, জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়েছে। বন্যার এই পানি যে কি পরিমাণ বিষাক্ত তা হাড়ে হাড়ে এখন তারা টের পাচ্ছেন। তাদের মতো একই কথা জানালেন হাওরপারের বাসিন্দারা। জানালেন এই পানিতে যেমন প্রচুর জোঁক এসেছে। তেমনি এই পানি শরীরে লাগলেই নানা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। নতুন নতুন নানা ধরনের উপদ্রবে আক্রান্ত হয়ে এখন হাওরপারে বসবাস করবেন কি না এমনটি ভাবতে শুরু করেছেন। হাওরপারের ছোট বড় বাজারগুলোর দোকানিরা জানালেন গেল প্রায় ৫ মাস থেকে তাদের ব্যবসায় দুর্দিন যাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অভাবে থাকায় দোকানমুখী হচ্ছেন কম। একই অবস্থা গাড়ি চালকদের। স্থানীয় সড়কগুলো পানিমগ্ন থাকায় তাদের আয় রোজগার নেই বললেই চলে। হাওর পাড়ের বাসিন্দারা ক্ষোভে দুঃখে জানালেন শুনলাম হাওরের ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ হিসেবে কতকিছু পাবে। কই নানা জনের প্রতিশ্রুত সেই ত্রাণ গেল কই। আমরা কি পেলাম এত বড় বিপর্যয়ে। বলতে গেলে শুধু সান্ত্বনা ছাড়া আমাদের কপালে কিছুই জোটেনি। দু’একজন যা পেয়েছে তা দিয়ে পরিবার পরিজনের ঠিকমতো দু’বেলা দু’মুঠো ভাতেরও জোগান হয়নি। আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি তা আপনারই দেখছেন। কিন্তু আমাদের এই চরম দুর্দশার দিনে আমরা কি উল্লেখযোগ্য সাহায্য পেলাম। এজন্য আমরা বারবার বলেছি এখনো বলছি। আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা ভিখারি হতে চাই না। আমাদের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। কর্ম করে খেতে চাই। মাছ ধরে ও ধান ফলিয়ে নিজে খেতে চাই এবং অন্যকেও খাওয়াতে চাই। এদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও হাওর বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ হাওর ও হাওরবাসীদের এমন দুর্দশা লাঘবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি আর্কষণ করে জেলা ও উপজেলায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এসব কর্মসূচি থেকে তারা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন অবিলম্বে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর এবং মনু, ফানাই, ধলাই ও জুড়ী নদীসহ অন্যান্য নদী সংস্কার, হাওর উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় এনে হাওর অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, জলজপ্রাণি ও উদ্ভিদ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার।