ঢাকা ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্ষায় হাওরবিলাস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০১৭
  • ৪৬২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চারদিকে থইথই পানি, সাগরের মতো ঢেউ আর দূরে দূরে ছোট ছোট হাওর দ্বীপ যে কারোর মনকে মুগ্ধ করবে, বাজি ধরে বলা যায় এ কথা। হাওর হলো এমন একটি বিস্তীর্ণ এলাকা, যেখানে বৃষ্টি মৌসুমে থইথই জলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, সমুদ্রের মতো ঢেউ থাকে। বর্ষায় হাওরগুলো অপরূপ রূপ ধারণ করে। একদিকে বাইরে ভীষণ বৃষ্টি, অন্যদিকে আপনার মনে বাজছে ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে…’ এক অন্য রকম পরিবেশ।

হয়তো মাঝি তাঁর সুমধুর গলায় শাহ আবদুল করিমের গান ধরবেন, তখন আপনি মাঝিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন হাকালুকি নাম কীভাবে হলো? তিনি বলতে পারেন হাকালুকি হাওরের কথা।

হাওর  জেলার পাঁচটি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। ২৩৮টি বিল ও নদী মিলে তৈরি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার একরের এ হাওর। হাওরের ৪০ শতাংশ অংশ , ৩০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ ও ৫ শতাংশ  উপজেলার অন্তর্গত। হাওরের আয়তন ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর। ২৪০টি বিল নিয়ে গঠিত  হাওরের বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে এই হাওর ধারণ করে এক অনবদ্য রূপ।

বর্ষাকালে হাওর না বলে সমুদ্র বলা যায় অনায়াসে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ হাওরে নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। বর্ষায় থইথই পানিতে নিমগ্ন হাওরের জেগে থাকা উঁচু স্থানগুলোতে অনেক পাখি আশ্রয় নেয়। আর শীতের সময়ে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিমেলা বসে হাওরের বুকে।  হাওরের বিলের পাড়ে বিদ্যমান জলাভূমি বন পানির নিচে ডুবে গিয়ে সৃষ্টি করেছে ডুবন্ত বন, যা ব্যবহৃত হয় মাছের আশ্রয়স্থল হিসেবে।

এরপর আপনি হয়তো এগিয়ে চলছেন বৃষ্টিস্নাত মহাসড়ক বেয়ে দূরের পাহাড়ের দিকে, পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ভেসে চলা কার্পাস তুলোর মতো মেঘ, বৃষ্টির জলে এলিয়ে দেওয়া নাগরিক জঞ্জালে ক্লান্ত শরীরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে যাবে আপনার শরীর।

খাবার-দাবার

আপনি বাজারে নেমে রেস্টুরেন্টে বসে গরম গরম পরোটা আর ডিম ভাজি দিয়ে নাশতা করতে পারেন। আর দূরের বন্ধুদের জন্য রয়েছে খুব কম খরচে পেট পূজার ব্যবস্থা। ৫০ টাকার ভেতরে ডাল, সবজি, মাছ (হাওরের টাটকা মাছ) অথবা মাংস দিয়ে সেরে নিতে পারেন আপনার আহার ক্রিয়া।

পেট পূজা পর্ব শেষ করে আপনি চলে যেতে পারেন নৌকাঘাটে। তার পরে বড় ছইওয়ালা ট্রলার নিন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে 

যাঁরা ঢাকা থেকে আসতে চান, তাঁদের জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ট্রেনে করে সরাসরি ঢাকা থেকে  চলে আশা। জনপ্রতি ৩৪০ টাকা দিয়ে চলে আসতে পারবেন। আর সেখান থেকে , এর পরেই পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের ঠিকানা।

যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া উপবন এক্সপ্রেস উঠে যাওয়া। নামতে হবে  স্টেশনে। এটি সিলেটের ঠিক আগের স্টেশন। ভাড়া নেবে ৩৪০ টাকা। মাইজগাঁও থেকে দুটি উপায়ে যাওয়া যায় হাকালুকি।

 

বাজারে নেমেই  রেস্টুরেন্টে বসে যাবেন। সেখানে ফ্রেশ হয়ে, হাত-মুখ ধুয়ে নাশতা করে সামনের নৌকাঘাটে চলে আসুন। এখান থেকে নৌকা দরদাম করে উঠে পড়ুন সারা দিনের জন্য। বড় গ্রুপ হলে (১০/১৫ জন) বড় ছইওয়ালা ট্রলার দিন। দিনপ্রতি ভাড়া নিতে পারে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা । কিছু খাবার এবং পানি কিনে নিন, কারণ হাওর ও কোনো দোকানপাট পাবেন না। তবে দয়া করে কোনো ধরনের প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট, খাদ্যদ্রব্য হাওরে ফেলে হাওরের পরিবেশকে দূষিত করবেন না। এবার নৌকায় উঠে কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে হাওরে ঘুরে বেড়ান। কুশিয়ারা পাড়ি দিতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগবে।

 

কুশিয়ারা নদীর ৪০ মিনিট সময় বাঁচাতে চাইলে থেকে সরাসরি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে চলে আসতে পারেন গিলাছড়া বাজারে। এখান থেকেই হাওর শুরু। তবে সমস্যা হলো, এখানে বড় নৌকা পাওয়া যায় না। নৌকা আনতে হবে সেই থেকেই। এখানকার লোকজন খুব অতিথিপরায়ণ।

বিলের পানির মধ্যে ও চারধারে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া কিঞ্চিৎ উঁচুভূমি বিলের পানির প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করেছে অপরূপ দৃশ্যের। পড়ন্ত বিকেলে রক্তিম সূর্যের আলো আরেক দিকে ত্রিপুরা রাজ্যের ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে লালচে আকাশ। রাখালিয়ারা গরু নিয়ে বাড়ি ফেরা। কোথাও জেলেরা তীরে নৌকা ভিড়াচ্ছে। একদল জেলে নৌকার বৈঠা কাঁধে একপ্রান্তে জাল, অন্যপ্রান্তে মাছের ঝুড়ি বেঁধে গাঁয়ের বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। পাখির দল এপ্রান্ত হতে ওপ্রান্তে ছুটে চলছে। আর কিছুক্ষণ পরেই ডুবে যাবে লাল সূর্য। ঘনিয়ে আসবে সন্ধ্যা। আর আমাদের ঘরে ফেরার সময় হয়ে এলো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্ষায় হাওরবিলাস

আপডেট টাইম : ১০:৪৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চারদিকে থইথই পানি, সাগরের মতো ঢেউ আর দূরে দূরে ছোট ছোট হাওর দ্বীপ যে কারোর মনকে মুগ্ধ করবে, বাজি ধরে বলা যায় এ কথা। হাওর হলো এমন একটি বিস্তীর্ণ এলাকা, যেখানে বৃষ্টি মৌসুমে থইথই জলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, সমুদ্রের মতো ঢেউ থাকে। বর্ষায় হাওরগুলো অপরূপ রূপ ধারণ করে। একদিকে বাইরে ভীষণ বৃষ্টি, অন্যদিকে আপনার মনে বাজছে ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে…’ এক অন্য রকম পরিবেশ।

হয়তো মাঝি তাঁর সুমধুর গলায় শাহ আবদুল করিমের গান ধরবেন, তখন আপনি মাঝিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন হাকালুকি নাম কীভাবে হলো? তিনি বলতে পারেন হাকালুকি হাওরের কথা।

হাওর  জেলার পাঁচটি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। ২৩৮টি বিল ও নদী মিলে তৈরি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার একরের এ হাওর। হাওরের ৪০ শতাংশ অংশ , ৩০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ ও ৫ শতাংশ  উপজেলার অন্তর্গত। হাওরের আয়তন ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর। ২৪০টি বিল নিয়ে গঠিত  হাওরের বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে এই হাওর ধারণ করে এক অনবদ্য রূপ।

বর্ষাকালে হাওর না বলে সমুদ্র বলা যায় অনায়াসে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ হাওরে নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। বর্ষায় থইথই পানিতে নিমগ্ন হাওরের জেগে থাকা উঁচু স্থানগুলোতে অনেক পাখি আশ্রয় নেয়। আর শীতের সময়ে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিমেলা বসে হাওরের বুকে।  হাওরের বিলের পাড়ে বিদ্যমান জলাভূমি বন পানির নিচে ডুবে গিয়ে সৃষ্টি করেছে ডুবন্ত বন, যা ব্যবহৃত হয় মাছের আশ্রয়স্থল হিসেবে।

এরপর আপনি হয়তো এগিয়ে চলছেন বৃষ্টিস্নাত মহাসড়ক বেয়ে দূরের পাহাড়ের দিকে, পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ভেসে চলা কার্পাস তুলোর মতো মেঘ, বৃষ্টির জলে এলিয়ে দেওয়া নাগরিক জঞ্জালে ক্লান্ত শরীরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে যাবে আপনার শরীর।

খাবার-দাবার

আপনি বাজারে নেমে রেস্টুরেন্টে বসে গরম গরম পরোটা আর ডিম ভাজি দিয়ে নাশতা করতে পারেন। আর দূরের বন্ধুদের জন্য রয়েছে খুব কম খরচে পেট পূজার ব্যবস্থা। ৫০ টাকার ভেতরে ডাল, সবজি, মাছ (হাওরের টাটকা মাছ) অথবা মাংস দিয়ে সেরে নিতে পারেন আপনার আহার ক্রিয়া।

পেট পূজা পর্ব শেষ করে আপনি চলে যেতে পারেন নৌকাঘাটে। তার পরে বড় ছইওয়ালা ট্রলার নিন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে 

যাঁরা ঢাকা থেকে আসতে চান, তাঁদের জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ট্রেনে করে সরাসরি ঢাকা থেকে  চলে আশা। জনপ্রতি ৩৪০ টাকা দিয়ে চলে আসতে পারবেন। আর সেখান থেকে , এর পরেই পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের ঠিকানা।

যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া উপবন এক্সপ্রেস উঠে যাওয়া। নামতে হবে  স্টেশনে। এটি সিলেটের ঠিক আগের স্টেশন। ভাড়া নেবে ৩৪০ টাকা। মাইজগাঁও থেকে দুটি উপায়ে যাওয়া যায় হাকালুকি।

 

বাজারে নেমেই  রেস্টুরেন্টে বসে যাবেন। সেখানে ফ্রেশ হয়ে, হাত-মুখ ধুয়ে নাশতা করে সামনের নৌকাঘাটে চলে আসুন। এখান থেকে নৌকা দরদাম করে উঠে পড়ুন সারা দিনের জন্য। বড় গ্রুপ হলে (১০/১৫ জন) বড় ছইওয়ালা ট্রলার দিন। দিনপ্রতি ভাড়া নিতে পারে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা । কিছু খাবার এবং পানি কিনে নিন, কারণ হাওর ও কোনো দোকানপাট পাবেন না। তবে দয়া করে কোনো ধরনের প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট, খাদ্যদ্রব্য হাওরে ফেলে হাওরের পরিবেশকে দূষিত করবেন না। এবার নৌকায় উঠে কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে হাওরে ঘুরে বেড়ান। কুশিয়ারা পাড়ি দিতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগবে।

 

কুশিয়ারা নদীর ৪০ মিনিট সময় বাঁচাতে চাইলে থেকে সরাসরি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে চলে আসতে পারেন গিলাছড়া বাজারে। এখান থেকেই হাওর শুরু। তবে সমস্যা হলো, এখানে বড় নৌকা পাওয়া যায় না। নৌকা আনতে হবে সেই থেকেই। এখানকার লোকজন খুব অতিথিপরায়ণ।

বিলের পানির মধ্যে ও চারধারে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া কিঞ্চিৎ উঁচুভূমি বিলের পানির প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করেছে অপরূপ দৃশ্যের। পড়ন্ত বিকেলে রক্তিম সূর্যের আলো আরেক দিকে ত্রিপুরা রাজ্যের ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে লালচে আকাশ। রাখালিয়ারা গরু নিয়ে বাড়ি ফেরা। কোথাও জেলেরা তীরে নৌকা ভিড়াচ্ছে। একদল জেলে নৌকার বৈঠা কাঁধে একপ্রান্তে জাল, অন্যপ্রান্তে মাছের ঝুড়ি বেঁধে গাঁয়ের বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। পাখির দল এপ্রান্ত হতে ওপ্রান্তে ছুটে চলছে। আর কিছুক্ষণ পরেই ডুবে যাবে লাল সূর্য। ঘনিয়ে আসবে সন্ধ্যা। আর আমাদের ঘরে ফেরার সময় হয়ে এলো।