ঢাকা ১১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুড়িগঙ্গায় মিলছে মাছের দেখা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৩:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০১৭
  • ৩৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বুড়িগঙ্গায় যেন আবার প্রাণ ফিরছে। বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে ফিরতে শুরু করেছে তার নব যৌবনে। যে নদীতে কদিন আগেও মাছের দেখা মিলতো না, সেখানে এখন জেলেদের জালে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ ধরা পড়ছে। এতে জেলেরা খুশি।

তারা বলছেন, নদীদূষণ বন্ধ করতে পারলে বুড়িগঙ্গা ফিরতে পারে তার আগের অবস্থায়। এতে বাড়বে মাছের প্রজনন। সে সঙ্গে বুড়িগঙ্গা হতে পারে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র।

একসময় বুড়িগঙ্গায় ট্যাংরা, পুঁটি, বোয়াল, বাইন, কই, শোল ও শিংসহ  দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছই ধরা পড়তো জেলেদের জালে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এ নদী দূষণের কবল পড়ে। হারিয়ে যায় দেশীয় প্রজাতির মাছ।

বুড়িগঙ্গায় ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মাছ ধরতেন জেলে অজিত বর্মণ (৫৫)। সে সময় তার বাবার জালে সব ধরনের মাছ ধরা পড়তো। সেই মাছ তারা খাওয়ার পাশাপাশি বাজারে বিক্রিও করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন ছেলে অজিত।

অজিত বর্মণ বলেন, বাবা যে পরিমাণ মাছ ধরতেন তার সিকিও এখন মেলে না। কিন্তু ইদানিং তার জালে ফের মাছ ধরা পড়তে শুরু করেছে।

অজিত বলেন, এই বুড়িগঙ্গাই তো আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। কত স্মৃতি এই নদীর সঙ্গে। নদীতে গোসলের পাশাপাশি সেই পানি আমরা পানও করতাম। কিন্তু বর্তমানে নদীর এই অবস্থা দেখে বড় কষ্ট হয়। নদীটা কি ছিল আর কি হইল।

সারাদেশের বন্যার পানির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এই নদীতেও। সম্প্রতি নদীর পানি বেড়েছে। কালো পানির রাজত্ব কিছুটা হলেও কমেছে। আর তাতেই ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ।

৪৫ বছর ধরেই এই নদীতে মাছ ধরেন অজিত। অজিতের মতো অনেকেই এই নদীর উপর নির্ভর করেই সংসার চালান।

তিনি জানালেন, আগে তো আট থেকে দশটা খ্যাপেও কোন মাছ উঠতো না। কিন্তু এখন নদীর পানি বাড়ায় প্রথম খ্যাপেই মাছের দেখা মেলে। সারাদিন মাছ ধরলেই তার সংসারের প্রতিদিনের খরচ উঠে যায়।

বুড়িগঙ্গায় পানি বাড়ায় আগের চিত্র কিছুটা হলেও বদলেছে। এ কারণে নদীপাড়ের মানুষেরা মনে করছেন, নদীটি আবার তার যৌবণে ফিরতে শুরু করেছে।

অজিতের মত অন্য জেলেরা জানালেন, তারা এখন বুড়িগঙ্গায় মাছ পাচ্ছেন। তাদের জালে ধরা পড়ছে টেংরা, পুটি, শিং ও মাগুরসহ  দেশি প্রজাতির নানা মাছ। এ কারণে তারা মনে করছে, তাদের সুদিন হয়তো আবার ফিরে এসেছে।

বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, বুড়িগঙ্গা বাঁচলে জেলে থেকে শুরু করে সকলে বাঁচবে। বুড়িগঙ্গায় ময়লা আবর্জনা না ফেলানোর জন্য তারা সকলকে অনুরোধ করেন।

ব্যবসায়ী মুরাদ নতুন সময়কে বলেন, সারাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের স্মৃতি এই নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অযত্ন আর অবহেলায় নদীটি আজ মরতে বসেছে। তবে বর্তমানে বর্ষায় নদীর পনি বাড়ায় কিছু মাছ ধরা পড়ছে। এই চিত্র পুরো বছর থাকুক এটাই প্রত্যাশা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বুড়িগঙ্গাকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে মাছের আবাস ফিরে আনার পাশাপাশি নদী খনন করে পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে। নদীকে পরিস্কার রাখতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। গৃহস্থলীর বর্জ্য ফেলানো বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, আমরা যদি মৃত হাতিরঝিলকে বাঁচাতে পারি তবে কেন বুড়িগঙ্গাকে পারবো না। এ জন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা আর সমন্বিত সবার সহযোগিতা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বুড়িগঙ্গায় মিলছে মাছের দেখা

আপডেট টাইম : ০১:০৩:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বুড়িগঙ্গায় যেন আবার প্রাণ ফিরছে। বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে ফিরতে শুরু করেছে তার নব যৌবনে। যে নদীতে কদিন আগেও মাছের দেখা মিলতো না, সেখানে এখন জেলেদের জালে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ ধরা পড়ছে। এতে জেলেরা খুশি।

তারা বলছেন, নদীদূষণ বন্ধ করতে পারলে বুড়িগঙ্গা ফিরতে পারে তার আগের অবস্থায়। এতে বাড়বে মাছের প্রজনন। সে সঙ্গে বুড়িগঙ্গা হতে পারে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র।

একসময় বুড়িগঙ্গায় ট্যাংরা, পুঁটি, বোয়াল, বাইন, কই, শোল ও শিংসহ  দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছই ধরা পড়তো জেলেদের জালে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এ নদী দূষণের কবল পড়ে। হারিয়ে যায় দেশীয় প্রজাতির মাছ।

বুড়িগঙ্গায় ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মাছ ধরতেন জেলে অজিত বর্মণ (৫৫)। সে সময় তার বাবার জালে সব ধরনের মাছ ধরা পড়তো। সেই মাছ তারা খাওয়ার পাশাপাশি বাজারে বিক্রিও করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন ছেলে অজিত।

অজিত বর্মণ বলেন, বাবা যে পরিমাণ মাছ ধরতেন তার সিকিও এখন মেলে না। কিন্তু ইদানিং তার জালে ফের মাছ ধরা পড়তে শুরু করেছে।

অজিত বলেন, এই বুড়িগঙ্গাই তো আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। কত স্মৃতি এই নদীর সঙ্গে। নদীতে গোসলের পাশাপাশি সেই পানি আমরা পানও করতাম। কিন্তু বর্তমানে নদীর এই অবস্থা দেখে বড় কষ্ট হয়। নদীটা কি ছিল আর কি হইল।

সারাদেশের বন্যার পানির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এই নদীতেও। সম্প্রতি নদীর পানি বেড়েছে। কালো পানির রাজত্ব কিছুটা হলেও কমেছে। আর তাতেই ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ।

৪৫ বছর ধরেই এই নদীতে মাছ ধরেন অজিত। অজিতের মতো অনেকেই এই নদীর উপর নির্ভর করেই সংসার চালান।

তিনি জানালেন, আগে তো আট থেকে দশটা খ্যাপেও কোন মাছ উঠতো না। কিন্তু এখন নদীর পানি বাড়ায় প্রথম খ্যাপেই মাছের দেখা মেলে। সারাদিন মাছ ধরলেই তার সংসারের প্রতিদিনের খরচ উঠে যায়।

বুড়িগঙ্গায় পানি বাড়ায় আগের চিত্র কিছুটা হলেও বদলেছে। এ কারণে নদীপাড়ের মানুষেরা মনে করছেন, নদীটি আবার তার যৌবণে ফিরতে শুরু করেছে।

অজিতের মত অন্য জেলেরা জানালেন, তারা এখন বুড়িগঙ্গায় মাছ পাচ্ছেন। তাদের জালে ধরা পড়ছে টেংরা, পুটি, শিং ও মাগুরসহ  দেশি প্রজাতির নানা মাছ। এ কারণে তারা মনে করছে, তাদের সুদিন হয়তো আবার ফিরে এসেছে।

বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, বুড়িগঙ্গা বাঁচলে জেলে থেকে শুরু করে সকলে বাঁচবে। বুড়িগঙ্গায় ময়লা আবর্জনা না ফেলানোর জন্য তারা সকলকে অনুরোধ করেন।

ব্যবসায়ী মুরাদ নতুন সময়কে বলেন, সারাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের স্মৃতি এই নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অযত্ন আর অবহেলায় নদীটি আজ মরতে বসেছে। তবে বর্তমানে বর্ষায় নদীর পনি বাড়ায় কিছু মাছ ধরা পড়ছে। এই চিত্র পুরো বছর থাকুক এটাই প্রত্যাশা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বুড়িগঙ্গাকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে মাছের আবাস ফিরে আনার পাশাপাশি নদী খনন করে পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে। নদীকে পরিস্কার রাখতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। গৃহস্থলীর বর্জ্য ফেলানো বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, আমরা যদি মৃত হাতিরঝিলকে বাঁচাতে পারি তবে কেন বুড়িগঙ্গাকে পারবো না। এ জন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা আর সমন্বিত সবার সহযোগিতা।